মা হওয়ার স্বপ্ন বুকে ধারণ করেন সব নারী। আর সেই স্বপ্নের কাছাকাছি যেতে কষ্ট, ঝক্কি, ঝুঁকিও কম পোহাতে হয় না। নারীর গর্ভধারণ এবং নয় মাসের গর্ভাবস্থা, এমনকি বাচ্চার জন্মের পরও পাঁচ-ছয় মাস সময় হবু বা নব্য মায়ের হূৎস্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হওয়া কম জরুরি নয়। গর্ভধারণের পর জরায়ুতে ক্রমবর্ধমান ভ্রূণের সব ধরনের পুষ্টি দেয় মায়ের রক্ত। এই রক্তের জোগান দেয় আমাদের হূৎপিণ্ড। এবার বুঝুন, সুস্থ মা এবং সুস্থ সন্তানের জন্য হূৎপিণ্ডের সুস্বাস্থ্য কতটা জরুরি।
গর্ভকালীন হূৎপিণ্ডের স্বাভাবিক পরিবর্তন
গর্ভাবস্থায় হূৎপিণ্ডের কিছু স্বাভাবিক পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তনগুলো হার্টের জন্য একটা অতিরিক্ত চাপ। আপনার গর্ভস্থ শিশুর অক্সিজেন ও পুষ্টি জোগাতেই হার্টের এই পরিবর্তনগুলো হয়। ফলে অতিরিক্ত দুর্বলতা, একটু শ্বাসকষ্ট, একটু মাথা ঘোরানো গর্ভকালীন কিছু স্বাভাবিক লক্ষণ। একটু জেনে নেওয়া যাক, হার্টের এসব পরিবর্তন কেমন।
মোট রক্তের আয়তন বাড়ে ৪০-৫০ শতাংশ,
প্রতি মিনিটে হার্টের পাম্প করা রক্তের পরিমাণ বাড়ে ৩০-৪০ শতাংশ।
হূৎস্পন্দন বাড়ে প্রতি মিনিটে ১৫ বারের মতো
রক্তচাপ কমে যায় প্রায় ১০ মিমি মার্কারির মতো।
হার্টের ওপর অতিরিক্ত এসব চাপ সামলাতে একটা সুস্থ-সবল হার্ট গর্ভাবস্থায় অবশ্যই প্রয়োজন।
হূদেরাগ ও গর্ভধারণ
হূদেরাগ হূৎপিণ্ডের একমাত্র রোগ কিন্তু নয়। নানা রোগব্যাধির রকমফেরও আলাদা। কিন্তু হূদেরাগ জন্ম থেকেই থাকে। সেগুলোকে আমরা বলি জন্মগত হূদেরাগ। হূৎপিণ্ডের ভালেব নানা রোগ হয়, আবার হার্টের নিজস্ব রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে হয় ইসকেমিক হার্ট ডিজিস। উচ্চ রক্তচাপ থেকে হতে পারে হূদেরাগ। হার্টের ইনফেকশন এবং পরবর্তী জটিলতাও কম হয় না। বাতজ্বর তো খুবই কমন। এর সবকিছুই হূদেরাগ।
আপনার যদি ইতিমধ্যে কোনো হার্টের অসুখ চিহ্নিত হয়ে থাকে এবং আপনি যদি গর্ভধারণ করতে চান, তাহলে অবশ্যই একজন হূদেরাগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ধরুন, আপনার জন্মগত কোনো হূদেরাগ চিহ্নিত আছে অথবা আপনার বাতজ্বরে ভোগার ইতিহাস রয়েছে বা আপনার হার্টের ভালেব কোনো অসুখ ধরা পড়েছে বা অতীতে হার্টের কোনো অপারেশন হয়েছে, এমনকি আপনি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, তাহলে আপনার প্রেগন্যান্সি প্ল্যানের আগে একবার হূদেরাগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অবশ্যই নিয়ে নিন। আপনার হার্টের সার্বিক ফিটনেস তিনি দেখে দেবেন। জন্মগত হূদেরাগের আছে নানা রকমফের। কোনো কোনো জন্মগত হূদেরাগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে গর্ভধারণ এবং গর্ভাবস্থা পার করলে হূদেরাগেও নিরাপদ মাতৃত্ব সম্ভব। আবার কোনো কোনো জন্মগত হূদেরাগে অবস্থা বিবেচনায় চিকিৎসক হয়তো গর্ভধারণ নিষেধই করবেন। বাতজ্বরের প্রকোপ আমাদের দেশে অনেক বেশি। বাতজ্বর কিন্তু হার্টেরই অসুখ। বাতজ্বর যদি সময়মতো শনাক্ত না হয় বা চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে পরবর্তী সময়ে হার্ট ভালেবর অসুখ হতে পারে। অনেক সময় ভালেবর এসব অসুখ গর্ভাবস্থায় প্রথম ধরা পড়ে। হার্ট ভালেবরও নানা রকম অসুখ হয়। যাঁরা এমন হূদরোগে ভুগছেন, তাঁরা গর্ভধারণের আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেন। চিকিৎসক আপনার হার্টের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলে দেবেন, আপনার করণীয় কী।
অনেকে উচ্চ রক্তচাপে ভুগে থাকেন। তাঁদের অবশ্যই গর্ভকালীন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। যাঁদের হার্ট অ্যাটাক বা অন্য কোনো ইসকেমিক হার্ট ডিজিসের ইতিহাস আছে, তাঁদেরও হার্টের যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গর্ভধারণের আগে বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। অনেকে হূদেরাগের জন্য নিয়মিত হয়তো ওষুধ ব্যবহার করেছেন। অনেক ওষুধ গর্ভস্থ শিশুর জন্য খুব ক্ষতিকর। তাই ওষুধপত্র নির্ধারণও গর্ভপূর্ব বিশেষ পরিকল্পনায় অনেক জরুরি।
মোটকথা, আপনি যে মুহূর্তে প্রেগন্যান্সির প্ল্যান করছেন, সে মুহূর্তে খেয়াল রাখুন, প্রেগন্যান্সির জন্য আপনার হার্ট কতটা প্রস্তুত। যেহেতু প্রেগন্যান্সি আপনার হার্টের কর্মকাণ্ডের ওপর একটি অতিরিক্ত চাপ, সেহেতু এটা অবশ্যই জরুরি।
গর্ভকালীন নতুন হূদেরাগ
অনেক সময় সুস্থ-সবল হার্টকেও গর্ভাবস্থার অতিরিক্ত চাপ সামলাতে গিয়ে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়তে দেখা যায়। তার মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ খুব কমন। প্রায় ৮ শতাংশ নারী উচ্চ রক্তচাপের শিকার হন গর্ভাবস্থায়। এ সময় ঠিকমতো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না রাখলে শরীরে পানি জমে প্রি-একলাম্পশিয়া বা গর্ভকালীন খিঁচুনি তথা একলাম্পশিয়ার মতো মারাত্মক গর্ভকালীন জটিলতা দেখা দিতে পারে।
কার্ডিওমায়োপ্যাথি নামের হূদেরাগের জন্ম হতে পারে গর্ভাবস্থায়। গর্ভের শেষ মাস থেকে শুরু করে ডেলিভারির পর প্রায় পাঁচ মাস পর্যন্ত এ ধরনের হূদেরাগের ঝুঁকি থাকে। এসব হূদেরাগ হলে হার্টের আকার বড় হয়ে যায় এবং শ্বাসকষ্টসহ শরীর ফুলে গিয়ে বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পায়। এ ছাড়া শরীরে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার ঝুঁকিসহ নানা ধরনের হার্টের অ্যারিদমিয়াও গর্ভাবস্থায় দেখা যেতে পারে।
পরামর্শ
সুস্থ মা ও সুস্থ শিশু একটি সুস্থ জাতি গঠনে অপরিহার্য। আর একজন সুস্থ মা ও সুস্থ শিশুর জন্য চাই একটা সুস্থ হার্ট। আপনি তাই জটিলতাবিহীন সুস্থ গর্ভাবস্থা পার করতে অবশ্যই জানুন—আপনার হার্ট সুস্থ তো!
শরদিন্দু শেখর রায়
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ০১, ২০১২
Arpa
amar 3 mas gorvo kalin ekhon . kinto amar pete mone hocchey onek loom gogacchey eta contineou teke zabe na baccha asar por choley zabey… please poramorso diben…
Bangla Health
বাংলায় লিখতে বুঝতে সুবিধা হত।
পেটে লোমের কথা বলছেন? গর্ভকালীন সময়ে শরীরে নানাবিধ পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। হরমোনের অনেক তারতম্য ঘটে। এমন কিছু হয়ে থাকলে চিন্তার কিছু নাই। বাচ্চা হবার পর হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে। তবে গর্ভকালীন সময় প্রতি মাসে অন্তত একবার ডাক্তার দেখিয়ে সব চেকআপ করে নেবেন।
শান্ত
চাকরি করার জোনন আমাকে দুরে থাকতে হয়, সন্তান জন্ম দানের জন্য কখন স্ত্রী সহবাস উপযুক্ত সময় এবং কতদিন সহবাস করতে হবে?
Bangla Health
যে কোন সময় প্রোটেকশন ছাড়া মিলিত হলেই বাচ্চা আসতে পারে যদি না শারীরিক কোন সমস্যা থাকে। তবে এ সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে মাসিক শুরু হওয়ার ১৩ থেকে ১৭ তম দিন পর্যন্ত।
শ
স্যার সুস্থ হার্ট করতে কি কি করতে হবে?
Bangla Health
নিয়মিত কিছুটা শারীরিক পরিশ্রম অবশ্যই করা উচিত।
Naina
গর্ভে বাচ্চা ধারণ হবার কতদিন পর প্রাথমিক লক্ষণগুলি প্রকাশ পায় এবং প্রাথমিক লক্ষণগুলি কি কি ???
Bangla Health
মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া, মাথা ঘুরানো, বমি বমি ভাব, তলপেটে এবং স্তনে ব্যথা, ইত্যাদি।
বাচ্চা আসার এক সপ্তাহের মধ্যে এমন হতে পারে। অনেকের বেলায় কয়েক সপ্তাহ লাগতে পারে।