ইনজেকশনের মাধ্যমে যে ওষুধ শরীরের মাংসপেশির মাধ্যমে প্রবেশ করানো হয় তা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে রক্তনালির কৌষিকার মাধ্যমে শোষিত হয়ে যায়।
আবার যে ওষুধ সরাসরি শিরার মাধ্যমে প্রবেশ করানো হয় তা সরাসরি রক্তে মিশে যায়, যে কারণে এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শোষণের প্রয়োজন হয় না।
সব সময় মনে রাখা দরকার, ওষুধের গুণাগুণের ওপর নির্ভর করে ওষুধ কতখানি বা কত সময়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে অবস্থান করবে। শরীরের মাংসপেশি, যকৃৎ, বৃক্ক প্রভৃতি কোষকলায় ভিন্ন ওষুধ ভিন্ন মাত্রায় প্রবেশ করে ভিন্ন সময়কালে অবস্থান করে থাকে। ওষুধ শরীরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করানোর সঙ্গে তিনটি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
প্রথমত ওষুধের বিতরণ, দ্বিতীয়ত ওষুধের বিপাক, তৃতীয়ত ওষুধের রেচন।
ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করা ওষুধ যেহেতু অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে থাকে, তাই এসব ক্ষেত্রে ওষুধের দেহাভ্যন্তরের বিতরণব্যবস্থার কোনো জটিলতা থাকে না।
ইনজেকশনের ওষুধ-বিপাকক্রিয়া অত দ্রুতগতিতে হয় না বলে ওষুধের ক্রিয়া অনেকক্ষণ থাকে। আর এ ক্ষেত্রে বারবার ওষুধ প্রয়োগের ঝামেলা কম। চিকিৎসক কিংবা সেবিকা ইনজেকশন পুশ করে থাকেন। যদিও ইনজেকশনের মাধ্যমে ওষুধ রোগী নিজে প্রবেশ করায় না, তাই সবারই কিছু বিষয় জানা থাকা ভালো।
ইনজেকশনের মাধ্যমে ওষুধ প্রয়োগের কয়েকটি পদ্ধতি আছে। এই পদ্ধতিগুলো সংক্ষেপে জেনে রাখা ভালো।
- ত্বকের ইনজেকশনঃ এ পদ্ধতিতে ওষুধ ত্বকের ভেতর প্রবেশ করানো হয়। সাধারণত ভ্যাকসিনজাতীয় ওষুধ এই পদ্ধতিতে দেওয়া হয়ে থাকে। এই পদ্ধতিতে সাধারণত ০.১ থেকে ০.২ মিলি ওষুধ প্রয়োগ করা যায়।
- অধস্ত্বকের ইনজেকশনঃ এ পদ্ধতিতে ওষুধ চামড়া ও মাংসপেশির মাঝখানে প্রবেশ করানো হয়ে থাকে। সর্ব্বোচ ১ মিলি ওষুধ এই পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা যায়। ইনসুলিনজাতীয় ওষুধ এই পদ্ধতিতে দেওয়া হয়।
- মাংসপেশির ইনজেকশনঃ এ পদ্ধতিতে ওষুধ সরাসরি মাংসপেশিতে প্রবেশ করানো হয়। সর্ব্বোচ ৬ মিলি ওষুধ এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেওয়া হয়।
- শিরায় ইনজেকশনঃ সরাসরি শিরার মাধ্যমে এই পদ্ধতিতে ওষুধ দেওয়া হয়। সাধারণত মুমূর্ষু রোগীদের এই পদ্ধতিতে ওষুধ শরীরে প্রবেশ করানো হয়ে থাকে। যেকোনো পরিমাণ ওষুধ এই পদ্ধতিতে শরীরে প্রবেশ করানো হয়। জীবন রক্ষাকারী সব ওষুধই এই পদ্ধতিতে শরীরে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। যেকোনো ধরনের স্যালাইন এই প্রক্রিয়ায় দেহাভ্যন্তরে প্রবেশ করানো হয়।
- ধমনিতে ইনজেকশনঃ এ পদ্ধতিতে ওষুধ সরাসরি ধমনিতে প্রবেশ করানো হয়। যেহেতু ধমনিতে রক্তের চাপ বেশি থাকে, তাই খুব সতর্কতার সঙ্গে এই পদ্ধতিতে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।
- স্মায়ু-আবরকে ইনজেকশনঃ এই পদ্ধতির ইনজেকশন সাধারণত মেরুদণ্ডের একটি বিশেষ অঞ্চলে প্রয়োগের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করানো হয়ে থাকে।
——————————-
প্রথম আলো, ২ এপ্রিল ২০০৮
সুভাষ সিংহ রায়
ফার্মাসিস্ট
Leave a Reply