জানা গেল প্রি-ডায়াবেটিসের কথা। ডায়াবেটিস হয়নি, তবে হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। রক্তে সুগারের মান স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি, তবে যত বেশি হলে ডায়াবেটিস বলা যাবে, ততটা উঁচুতে নয়। অর্থাৎ রক্তে সুগারের মান বেশি, তবে ডায়াবেটিস শনাক্ত হওয়ার মতো বেশি নয়। দেশে দেশে অনেক লোকের প্রি-ডায়াবেটিস, সব পরিসংখ্যান হাতে নেই, আমেরিকায় আট কোটি লোকের প্রি-ডায়াবেটিস। একে খেয়াল করতে তো হবে। কারণ, জানা গেছে ইদানীং এ অবস্থাকে মোকাবিলা না করলে হূদ্যন্ত্র ও রক্তনালির বেশ দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হয়ে যায়।
কী করে বলা যাবে প্রি-ডায়াবেটিস হয়েছে?
জানা গেছে, ডায়াবেটিস ও প্রি-ডায়াবেটিস হতে পারে সব বয়সের, সব গোত্রের মানুষের মধ্যে। তবে কারও কারও এ রোগের আশঙ্কা বেশি। যেমন—আফ্রিকান, আমেরিকান, ল্যাটিনোস, ন্যাটিভ আমেরিকান, এশিয়াবাসী, প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জের লোকদের, এমনকি বয়স্কদেরও। প্রি-ডায়াবেটিস মানে প্রাক-ডায়াবেটিস বা ডায়াবেটিসের পূর্বাবস্থা।
তিনটি ভিন্ন টেস্ট দিয়ে নির্ণয় করা যায় প্রি-ডায়াবেটিস—
এয়ানসি টেস্ট
খালি পেটে রক্তে গ্লুকোজের মান
ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট।
রক্তের সুগারমানের এই তিনটি পরীক্ষা করলে বোঝা যাবে শরীরে বিপাক স্বাভাবিক চলছে নাকি প্রি-ডায়াবেটিস বা ডায়াবেটিস হয়েছে।
সারা রাত উপবাস থাকার পর খালি পেটে রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে সুগারমান অস্বাভাবিক পেলে একে বলে Impaired Fasting Glucose (IFG) ১০০-১২৬-এর নিচে। এ অবস্থা হলো প্রি-ডায়াবেটিস।
এরপর গ্লুকোজদ্রবণ রোগীকে পান করিয়ে দুই ঘণ্টা পর আবার নমুনা পরীক্ষা করে অস্বাভাবিক গ্লুকোজমান পেলে একে বলে Impaired Glucose Tolerance (IGT) ১৪০-২০০-এর নিচে। এ অবস্থাও প্রি-ডায়াবেটিস।
এইচবিএওয়ানসি (HBA1C) টেস্টে ৫ দশমিক ৭ থেকে ৬ দশমিক ৪ শতাংশের নিচে পেলেও প্রি-ডায়াবেটিস বলা হচ্ছে। প্রি-ডায়াবেটিস অবস্থায় ব্যবস্থা নিলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা যায় বা বিলম্বিত করা যায়। আমেরিকায় আট কোটি প্রি-ডায়াবেটিক রোগী এবং এভাবে চলতে থাকলে ১১ শতাংশ লোকের তিন বছরের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হবে। অন্যান্য দেশেও একই অবস্থা এবং পরিণতি হবে।
যে যে কারণে প্রি-ডায়াবেটিসের সূচনা, তা ডায়াবেটিসের সূচনার ক্ষেত্রে একই। এর মধ্যে আছে জীবনযাপনধারা (খাদ্য ও শরীরচর্চা) এবং পরিবার থেকে আসা যেকোনো ঝুঁকি।
প্রি-ডায়াবেটিস শনাক্ত হলে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই—এ খবরকে ঘুম-জাগানিয়া আহ্বান হিসেবে ধরলে ভালো। Wakeup call.
নিউইয়র্ক আলবানির সেন্ট পিটারস হাসপাতালের এনডোক্সিনোলজি বিভাগের প্রধান গ্রেগ গেরিটি বলেন, ‘একে জীবনধারার পরিবর্তন বা চিকিৎসা-সূচিত করার সুযোগ এবং ডায়াবেটিসের পথে অগ্রসর হতে ব্যাহত করা, এমনকি একে প্রতিরোধ করার সুযোগ হিসেবে ধরা উচিত। কেবল অনুমান নয়, ক্লিনিক্যাল রিসার্চের মাধ্যমে আমরা এ তথ্য জেনেছি।’
জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রি-ডায়াবেটিস মোকাবিলা করা হলো সবচেয়ে ভালো সূচনা। বিশেষজ্ঞদের রয়েছে পরামর্শ—
১. আরও সক্রিয়, কর্মচঞ্চল হওয়া চাই: ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা বা ঝুঁকি হ্রাসের জন্য নিয়মিত শরীরচর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। What do I eat now লিখে খ্যাতি পাওয়া প্যাট্টি জিল বলেন, ‘অনেক দিন আগে ব্যায়াম করেছেন, পরে ছেড়েছেন, তাহলে দৈনন্দিন কাজে কিছু শরীরচর্চা যোগ করুন—প্রথমে লিফটে না চড়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠুন, টিভি কমার্শিয়াল হওয়ার সময় হাত-পা ছোড়াছুড়ি করুন।’ প্রি-ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনার আবশ্যকীয় অংশ হলো শরীরচর্চা। কারণ, তা করলে কমে রক্তের গ্লুকোজমান এবং হ্রাস পায় দেহের মেদ। আদর্শ বিধি হলো, সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন, দিনে আধা ঘণ্টা ব্যায়াম। নিয়মিত চর্চার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে। আরও চর্চা চাই। পরে নিন পেডোমিটার ও গুনে নিন কয় পা হাঁটলেন। দিনে ১০ হাজার কদম হাঁটা মানে পাঁচ মাইল হাঁটা হলো।
২. শরীর থেকে ঝরিয়ে নিন ভার, ওজন হ্রাস করুন: প্রথমেই দেহমাফিক আদর্শ ওজনে পৌঁছাতেই হবে, এমন তো নয়। সামান্য ওজন শরীর থেকে ঝরালেও অনেক তারতম্য ঘটবে।
ডায়াবেটিস প্রিভেনশন ট্রায়াল দেখেছেন, যাঁদের রয়েছে প্রি-ডায়াবেটিস, তবে যাঁরা দিনে ৩০ মিনিট মাঝারি ব্যায়াম করেন এবং দেহের ওজন ঝরিয়েছেন ৫ থেকে ৭ শতাংশ, তাঁরা ডায়াবেটিস হওয়ার দুর্ভোগ কাটাতে পেরেছেন ৫৮ শতাংশ। যাঁদের ২০০ পাউন্ড ওজন, তাঁদের হারানো উচিত ১০ থেকে ১৪ পাউন্ড ভার।
৩. চিকিৎসক দেখাবেন প্রায়ই: যাঁদের প্রি-ডায়াবেটিস, তাঁদের কেবল বার্ষিক চেকআপই নয়, এর চেয়েও বেশি চিকিৎসক-দর্শন প্রয়োজন। প্রতি তিন থেকে ছয় মাস অন্তর চিকিৎসক দেখানো উচিত। ডা. গেরেটি বলেন, ‘নিয়মিত চেকআপ রোগীকে ওই পথে যেতে অনুপ্রাণিত করে এবং সাফল্যের নির্দেশনা দান করে।’
৪. খাবেন স্বাস্থ্যকর খাবার: ছোট ছোট ধাপে গুছিয়ে নিন:
ফল ও সবজি খাবেন প্রচুর, বিশেষ করে কম শ্বেতসার খাবার। যেমন—শাকপাতা ও শসা।
খাদ্যে থাক প্রচুর আঁশ, লাল চাল, আটা, ফল, সবজি, ওটমিল, ছাতু।
গোটাশস্য খাদ্য—মিলে ছাঁটা চালের বদলে ঢেঁকিছাঁটা লাল চাল।
৫. অবলম্বন নিন, জেনে নিন রোগ সম্পর্কে: ওজন হ্রাস করা, স্বাস্থ্যকর আহার, নিয়মিত ব্যায়াম সহজ কথা নয়। তবে সঙ্গী থাকলে, সাহায্য করার লোক থাকলে, প্রেরণা দেওয়ার লোক থাকলে বেশ সোজা। ডায়াবেটিস এডুকেটার এ ব্যাপারে অনেক সাহায্য করতে পারেন।
৬. ঘুম হোক একটি অগ্রাধিকার: নিয়মিত ভালো ঘুম না হলে ক্লান্তি নামে শরীর ছাপিয়ে, কেমন বদমেজাজি ও রুষ্ট মনে হয় নিজেকে। শরীরে বেড়ে যায় ট্রেস হরমোনের মান, শরীরে তাই জমে মেদ, ওজন হারানো কঠিন হয়ে পড়ে। ইনসুলিনের কার্যকর ব্যবহারের ক্ষমতা কমে আসে শরীরের এবং প্রি-ডায়াবেটিস ও ডায়াবেটিসের বড় ঝুঁকি হয় অনিদ্রায়।
৭. দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো চাই: নিজেকে দোষ দেওয়া নয়, দায়বদ্ধতা চাই—বদলাব। বদলে দিন নিজেকে। ছোট ছোট বদলানো, করব প্রতিদিন। এভাবে বদলাব নিজেকে। সুস্বাস্থ্যের জন্য।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস বারডেম হাসপাতাল,
সাম্মানিক অধ্যাপক, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ০৪, ২০১১
আনামিকা
আমার ওজন ৬৪ কেজি উচ্চতা৪.৭ বয়স ৪৪ সুগার পিপি ১২৩ প্রসার ১২০/৮০
কি করা উচিত আমাকে একটু বলে দিন
Bangla Health
হাঁটা দিয়ে শুরু করুন। ধীরে ধীরে দৌড়ানোর চেষ্টা করবেন। খুব অল্প অল্প করে ২/৩ ঘন্টা পর পর খাবেন।
Groho
প্রি-ডায়াবেটিস এর রোগীদের কি ব্যাডমিন্টন খেলা ঠিক হবে। দয়া করে জানাবেন।
Bangla Health
শুধু ঠিক নয়, এটা খুবই ভালো একটা ব্যায়াম। এমনকি প্রতিদিন ১৫ মিনিট করলে খেললেও ভালো ফল পাবেন।
Groho
আমার বয়ষ ৪৮ বছর উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি ওজন ৬০ কেজী । আমি প্রায় ২ বছর যাবত হার্ট, উচ্চ রক্তচাপ ,প্রি-ডায়াবেটিস রোগে ভুগিতেছি। ও হালকা শ্বাষ কষ্ট অনুভব করিতেছি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে গিয়েছি কিন্তু কোন উপকার পাচ্ছি না । আমার হার্টের ২০% ব্লক আছে । সম্প্রতি ঢাকায় দি ল্যাব এইড হাসপাতালে ডাঃ আঃ কাদের আকন্দ মহোদয়কে দেখাই। তিনি একাটা ইটিটি করেন। এবং কোন সমস্যা নাই বলে জানান। তিনি আমাকে আরো জানান যে আপনার যে জায়গায় ২০% ব্লক হয়েছে (CAG=20% LAD) তাহাতে আপনার কোন সমস্যা হবার কথা নয় । অতপর তিনি আমাকে চিকিতসা দিতে থাকেন। গত ৩১ ডিসেম্ভর /২০১১ তারিখ হতে আমি তাহার ঔষধ সেবন করছি।কিছু দিন আমার অবস্থা ভালো ছিল কিন্তু বর্তমানে আবার অসুস্থতা অনুভব করছি। যেমন শারীরিক দুর্বলতা , হালকা শ্বাষ কষ্ট,কাজে মনোযোগের অভাব। শব্দে বা উচ্চ বাক্যে বিরক্ত অনুভব করছি। কন্ঠস্বর বসে গেছে ইহা হইতে পরিত্রানের উপায় কি দয়া করে জানালে উপকৃত হবো । আপনার সদয় অবগতির জন্য বর্তমান সেবন কৃত ঔষধের নাম ও সেবন বিধি প্রদান করিলাম।
১। OdreL 75 mg. 0+1+0
২। Cardizem 30 mg. 1+1+1
৩। Vass 10 mg. 0+0+1
৪। Ranitid 150 mg. 1+0+1
৫। Lexotanil 3mg. 0+0+1
৬। Provair 10 mg 0+0+1
৭। Seretide evohaler 25/250
দুইচাপ দইবার।
৮। Ventolin evohaler 100 mg .
প্রয়োজন হলে গ্রহন করতে হবে।
৯। Nido card Spray.প্রয়োজন হলে গ্রহন করতে হবে।
দয়াকরে আমি কিকি ঔষধ সেবন করলে উপকার পাব দয়াকরে জানাবেন।
Bangla Health
সঠিক জীবনযাপন না করার ফলে সমস্যা হয়। সমস্যা হলে আমরা ঔষধ খাই। ঔষধ খেলে পরে ভালো লাগে। ভালো লাগলে আবার উল্টাপালটা লাইফস্টাইলে ফিরে যাই।– আপনার এরকম কিছু হয়েছে কিনা?
আপনি ঔষধের উপর খুব বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। ঔষধ সাময়িক ভাবে নতুন ভাবে রোগ হওয়াটাকে প্রতিরোধ করে রাখে। এই সময়টাতে নিজের দেহের মধ্যের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হয়। কিন্তু লাইফস্টাইল ঠিক না করলে একটা সময় পরে দেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারে কমে যাবে, তখন ঔষধে আর কাজ হবে।
দেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হলে চাই পর্যাপ্ত ঘুম, সময়মতো পুষ্টিকর খাবার এবং নিয়মিত ব্যায়াম।
আপনি এই পর্যায়ে অনেক ঔষধ হয়তো আর ত্যাগ করতে পারবেন না, যেমন রক্তচাপের ঔষধ। এটা সারাজীবন খেয়ে যেতে হবে। তবে যদি নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাহলে অন্য সব কিছু নিয়ন্ত্রণে থাকলে। ভোরবেলা একটু সময় দৌড়াতে পারলে ভাল হবে আপনার জন্য।
আর আমরা যেহেতু সব কিছু পরীক্ষা করতে পারি না, তাই এভাবে ঔষধ দেই না। আপনার ডাক্তার যেভাবে বলেন, সেভাবে খাবেন। ডাক্তার আর ঔষধের পিছনে টাকা বেশি খরচ না করে সেই টাকাটা ভালো খাবারের পিছে খরচ করলে ভালো করবেন।
রফিকুল
আমার খাবার এর আগে 6.4
খাবার এর পর 9.8
এটাকি ডায়বেটিস না কি প্রি ডায়বেটিস
প্রিডায়বেটিস হলে কি ভালো হওয়ার চান্স আছে কি না আর মাথা গুঁড়ায় গুম পায় আমি কি করতে পারি
আমার ওজন 79
Hight 5’8
Bangla Health
A1C লেভেল ৫.৭-এর নিচে নরমাল। ৫.৮ – ৬.৪ প্রি। দুইটা ভিন্ন ভিন্ন টেস্টে ৬.৫ পার্সেন্টের উপরে হলে টাইপ২ ডায়াবেটিস। অবশ্যই ডাক্তার দেখাবেন, ওষুধ খেতে হবে এখন।
শুভশ্রী সামন্ত
আমার গ্লুকোজ ফাস্টিং 103 mg/DL . আমার বয়স 29. আমি গৃহবধু। প্রাথমিক শিক্ষিকা । আমার শ্বাসকষ্ট হয়। হাত পার যন্ত্রণা হয়। রাত্রিতে ছয় সাত বার ইউরিন করি । আমার করণিয়।