সমস্যাঃ আমার বয়স ১৭ বছর। এক বছর আগে শ্বাসকষ্ট, কাশি, হাঁচির জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে টিকামেট ইনহেলার ও ফেনার্ট ট্যাবলেট ব্যবহার শুরু করি। গত এক বছর আর চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।
নিয়মিত দুইবার ইনহেলার নিলে এবং একটি করে ফেনার্ট ট্যাবলেট খেলে মোটামুটি সুস্থ থাকি। ঠান্ডা থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকি। একাধারে তিন-চার দিন ওষুধ না নিলে আমার শ্বাসকষ্ট, হাঁচি ও কাশি দেখা দেয়। উল্লেখ্য, আমি বেশির ভাগ সময় সর্দিতে ভুগি, একটু ধুলাবালি লাগলেই নাক চুলকায়, হাঁচি হয় এবং নাক দিয়ে পানি পড়ে। আমার প্রশ্ন-আমার কী রোগ হয়েছে? আমার কি আজীবন ওষুধ ব্যবহার করতে হবে? চিকিৎসকের সঙ্গে আবার যোগাযোগ করতে হবে? একাধারে ইনহেলার ব্যবহার করলে আমার শরীরের বড় কোনো ধরনের ক্ষতি হবে কি?
রাফিয়া, নোয়াখালী।
পরামর্শঃ আপনি সম্ভবত অ্যাজমা বা হাঁপানি ও এলারজিক রাইনাইটিস রোগে ভুগছেন। অ্যাজমা ও এলারজিক রাইনাইটিস হলো যথাক্রমে শ্বাসনালি ও নাকের দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত রোগ। ফলে শ্বাসনালি ও নাকের মিউকাস মেমব্রেন অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। এতে শ্বাসনালির অতি সামান্য উত্তেজনায় শ্বাসকষ্ট, কাঁশি, নাক দিয়ে পানি পড়া বা নাক চুলকানির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
অ্যাজমার জন্য আপনি নিয়মিত স্টেরয়েড ইনহেলার, যেমন বেকলোমিথাসন, বুডিসোনাইড, ফ্লুটিকাসন ইনহেলার ও মনটিলুকস্ট, লং একটিং থিউফাইলিন ট্যাবলেট এবং প্রয়োজনমতো সালবিউটামল ইনহেলার ব্যবহার করতে পারেন। আপনার নাকের সমস্যার জন্য নিয়মিত বেকলোমিথাসন, ফ্লটিকাসন, মোমেসন বা ট্রাইসিনালন নাকের স্প্রে, কিটোটিফেন ও লরাটাডিন ট্যাবলেট ব্যবহার করতে পারেন। তবে ওষুধের ধরন ও সঠিক মাত্রা অবশ্যই একজন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী করবেন।
এ জন্য অবশ্যই আপনাকে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে। কারণ আপনার চিকিৎসকই রোগের প্রকৃত অবস্থা বা রোগটি নিয়ন্ত্রণে আছে কি না তা যাচাই করে নির্দিষ্ট সময় পরপর ওষুধের ধরন ও মাত্রা ঠিক করে দেবেন।
উল্লেখ্য, অ্যাজমার ওষুধ হঠাৎ বন্ধ করা উচিত নয় এবং নিয়মিত ওষুধ ব্যবহার না করলে অনেক সময় রোগটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। কিন্তু নিয়মিত ওষুধ ব্যবহার করলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগটি পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
আপনার অ্যাজমা বা হাঁপানি যদি পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকে সে ক্ষেত্রে প্রতি তিন মাস পর ওষুধের মাত্রা, বিশেষ করে স্টেরয়েড ইনহেলার শতকরা ২৫ ভাগ করে কমিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
এভাবে নিয়মিত সঠিক মাত্রায় ওষুধ ব্যবহার করলে অনেক ক্ষেত্রে দু-তিন বছর পর কোনো ওষুধ ছাড়াই সুস্থ থাকা সম্ভব এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সারা জীবন আর কোনো ওষুধের প্রয়োজন হয় না। দীর্ঘদিন স্বল্পমাত্রায় স্টেরয়েড ইনহেলার শরীরে বড় কোনো ধরনের সমস্যা করে না। তবে যদি ১০-১৫ বছর অতিমাত্রায় স্টেরয়েড ইনহেলার ব্যবহার করা যায়, তাহলে কারও কারও শরীরে এডরেনাল গ্ল্যান্ডের কার্যক্ষমতা সাময়িকভাবে কমতে পারে।
————————
পরামর্শ দিয়েছেন
ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন
বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
বারডেম হাসপাতাল ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, শাহবাগ, ঢাকা
প্রথম আলো, ২ এপ্রিল ২০০৮
Leave a Reply