বছর শেষ হয়ে এল। নতুন বছর আগত ওই। পেছন ফিরে তাকানোর সময়, আবার সামনের দিকেও তাকানো চাই। স্বাস্থ্যের কথাই বলি। কী কী পরিবর্তন নিজের জীবনে চাই, এসব পরিবর্তন ঘটাতে গেলে স্বাস্থ্যের যেসব প্রতিশ্রুতি করতে হবে, তা নিয়ে আলোচনা করা যায়।
১. পরিবারের সবাইকে নিয়ে ও বন্ধুদের দিয়ে আরও সময় কাটানো: আরও সময় দেওয়া তাদের। গত বছর কম সময় দেওয়া হয়েছে তাদের। বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ আরও করা চাই। পরিবারের লোকদের নিয়ে বেড়ানো, রেস্তোরাঁয় মাঝেমধ্যে খাওয়া—বন্ধন হবে জোরদার। নতুন বছর হবে আনন্দময়। এ হোক প্রতিশ্রুতি।
২. ফিটনেস আরও চাই: এ বছর ফিটনেসের দিকে খেয়াল বেশি দিতে হবে। নিয়মিত ব্যায়ামে যে স্বাস্থ্যহিত হয়, এর চেয়ে বেশি হিতকরী ফল আর কিছু দিতে পারে বলে জানা নেই। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যায়াম করলে যে স্বাস্থ্য কেবল ভালো থাকে, তা-ই নয়, এতে ঝুঁকি কমে ক্যানসারের, দীর্ঘায়ু হয় মানুষ, ওজন হ্রাস করার প্রয়াস বজায় থাকে, মনমেজাজ থাকে চনমনে, কমে রক্তের চাপ, এমনকি আর্থ্রাইটিসও আরাম হয়। ব্যায়ামে সুস্থ যেমন থাকা যায়, তেমনি শরীর মনও ভালো লাগে, চেহারাসুরত হয় যে ভালো। সবচেয়ে সহজ ব্যায়াম হাঁটা, দ্রুত হাঁটা। প্রতিদিন আধঘণ্টা দ্রুত হাঁটবেন, এ হোক নতুন বছরের প্রতিশ্রুতি।
৩. তলপেটে মেদ জমে থাকলে সামলানো চাই: কেবল শিল্পোন্নত দেশগুলো কেন? উন্নয়নশীল দেশেও তরুণদের মধ্যে যে রকম বাড়ছে শুয়ে-বসে থাকা ও ফাস্টফুড খাওয়া, কোমল পানীয় সেবন, তেমনি জমেছে তলপেটে মেদ, ঘনীভূত হচ্ছে চর্বি। বাড়ছে ওজন, স্থূললোকের সংখ্যা বাড়ছে। নিজে এর একজন হয়ে থাকলে মেদ ঝরানো হোক নতুন বছরে অঙ্গীকার। পোষ মানবেই তলপেটের মেদ। তাই নতুন বছরে অঙ্গীকার হোক—শরীরে বাড়তি মেদ থাকলে ঝেড়ে ফেলা। লক্ষ্য স্থির করতে হবে, কতটুকু ওজন এ বছর কমাব আর এতে লেগে থাকতে হবে।
৪. ধূমপান করে থাকলে ছাড়তে হবে: যাঁরা ধূমপান করছেন, প্রতিজ্ঞা করুন নতুন বছরে, আর এর পর থেকে জীবনে ধূমপান করবেন না। ধূমপানমুক্ত জীবনকে উপভোগ করুন। নিজে বাঁচবেন, অন্যরাও সে ব্যক্তির ধূমপানের ধোঁয়া পরোক্ষভাবে সেবন না করে বাঁচবেন। এ থেকে বড় প্রতিশ্রুতি আর কী হতে পারে? ধূমপান ছাড়ুন, নতুন বছরে। জীবনের মতো।
৫. জীবনকে আরও উপভোগ করুন: অসংখ্য মানুষের জীবন শশব্যস্ত, মানসিক চাপে পর্যুদস্ত জীবন। একটু জীবনকে আরও উপভোগ করা চাই। আরও বেশি। দৈনন্দিন টানাপোড়েন থেকে একটু নিজেকে আলগা করা। মুক্তি আলোয় আলোয়। খোলা আকাশের নিচে, সোনালি রোদে স্নান করে—দূরে কোথাও। সুখী ও সুস্থ হতে এইটিই চাই। নতুন কোনো শখ। নতুন কোনো বন্ধু। নতুন কোনো অভিযান। হোক অঙ্গীকার আগামী বছরে।
৬. কেউ মদপান করে থাকলে ছেড়ে দিতে হবে: ধূমপানের মতো মদপানও বিষপান। জীবনযাপনে এই অঙ্গীকার হোক সামনের বছর।
৭. ঋণমুক্ত হওয়া: গত বছরে জীবনে খুব চাপ ছিল অর্থের জন্য? এ বছর একে মোকাবিলা করতে হবে জোরেশোরে। ঋণ থাকলে শোধ করতে হবে আগামী বছর—এ হোক অঙ্গীকার।
৮. নতুন কিছু শেখা চাই: এ হোক অঙ্গীকার। হয়তো বা কর্মজীবনে কোনো পরিবর্তন আসছে। নতুন কোনো ভাষা শেখা। শিখতে হবে কম্পিউটার চালানো। কোনো কোর্সে ভর্তি হওয়া, নয়তো বই পড়ে শেখা, জানা—শিক্ষা হতে পারে সহজতম—নতুন বছরের শ্রেষ্ঠ অঙ্গীকার জীবনভর শেখা। বিনোদনমূলক শিক্ষাও আছে। আছে দূরশিক্ষণ, বয়স্কশিক্ষা। এমনকি ছবি আঁকা শেখা, অভিনয় শেখা, গান শেখা। নতুন বছর একটি কিছু শেখার অঙ্গীকার। নতুন কিছু।
৯. অপরকে সাহায্য করুন: একটি জনপ্রিয়, নিঃস্বার্থ নতুন বছরের প্রতিশ্রুতি হলো স্বেচ্ছাসেবী কাজ করা। নানাভাবে। গ্রামে কোনো লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করতে, শিশুদের শিক্ষা দিতে, গরিবের ঘর মেরামত করে, প্রবীণ হিতৈষী কোনো কাজ করে, দুস্থ শিল্পীদের পাশে দাঁড়িয়ে—স্বেচ্ছাশ্রম অনেকভাবেই দেওয়া যায়। শীতের সময় শীতবস্ত্র দান, দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানো—কত স্বেচ্ছাসেবী কাজই আছে।
১০. নিজেকে গুছিয়ে নিন: নিজেকে গোছানো নয় কেবল, ঘরকে সাজানো-গোছানো, অফিসকে গোছানো—নতুন বছরের অঙ্গীকার হতে পারে। জীবনে জঞ্জাল হোক দূর, হোক পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন।
নতুন বছর হোক আনন্দের, সুস্বাস্থ্যের
সবাই ভালো থাকুন।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস বারডেম হাসপাতাল,
সাম্মানিক অধ্যাপক, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ২৮, ২০১১
উজ্জল
স্যার মাঝে মাঝে আমার কাশি সবুজ রং এর হয় এর কারন কি দয়া করে জানাবেন
Bangla Health
খেয়াল করেন এটা অসুস্থতার শেষ পর্যায়ে এসে সবুজ রঙের হয়। তার আগে হলুদাভ থাকে। ঠিক কিনা?
সবুজ হয়ে আসার মানেই হলো এরপর আপনি সুস্থ্য হয়ে যাবেন। এটা স্বাভাবিক। দুশ্চিন্তার কিছু নাই। এই পর্যায়ে এসে এর জন্য ঔষধ খাওয়ার দরকার নাই। আর এই কফটা কখনোই আবার গিলে ফেলবেন না।