শ্বাসনালীর হঠাৎ প্রদাহ অসুখ প্রায় সর্বক্ষেত্রেই ব্যাকটেরিয়া অথবা ভাইরাস জীবাণু আক্রমণের ফলে হয়ে যায়। শিশু ও বয়স্করা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। শ্বাসনালী ও তার শাখা-প্রশাখার ক্ষুদ্র ঝিল্লি আক্রান্ত হওয়াই এ রোগের কারণ। হঠাৎ শ্বাসনালীর প্রদাহ রোগ সাধারণ সর্দি লাগার ফলেই হয়ে থাকে। সর্দি কণ্ঠনালী হতে নিচের দিকে প্রসারিত হয়ে বায়ুনালীগুলোকে আক্রমণ করলেই তার নাম হয় হঠাৎ শ্বাসনালীর প্রদাহ। যে ঋতুতে আবহাওয়া ঘন ঘন পরিবর্তিত হয় অর্থাৎ শরৎকাল ও বসন্তকালের প্রারম্ভেই রোগটি সাধারণত প্রকাশ পায় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দুর্বল দেহ, উপযুক্ত ও পুষ্টিকর খাদ্য হতে বঞ্চিত এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করতে বাধ্য হয় এ ধরনের ব্যক্তিকে এ রোগ আক্রমণ করে। সাধারণত যে কারণগুলো থেকে রোগটি জন্মে তার মধ্যে শরীরে অত্যধিক পানি লাগানো, অত্যন্ত ঠাণ্ডা পানিতে গোসল অথবা শরীর তপ্ত হওয়ার পরক্ষণেই অনাবৃত দেহে ঠাণ্ডা বায়ু লাগানো, গান গাওয়া, বক্তৃতা করা প্রভৃতির পর ঠাণ্ডা বা আর্দ বায়ু সেবন, অপর্যাপ্ত পোশাকাদি পরে মোটরগাড়ি প্রভৃতিতে ভ্রমণ।
উল্লেখযোগ্য আরো যেসব কারণে ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ হয় তার মধ্যে ঠাণ্ডা, আর্দ্রতা, কুয়াশা এবং ধূলিময় আবহাওয়া, ধূমপান ইত্যাদি। যারা দিনরাত ঘরের মধ্যে বসে কাজ করেন এবং অত্যধিক গরম পোশাক ব্যবহার করেন, সবসময় গরম পানি দিয়ে গোসল করেন বা আদৌ গোসল করেন না তাদেরও এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার একটি প্রবণতা থাকে এবং সামান্য ঠাণ্ডা লাগলেই তারা রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েন। এ জন্য শিশুদের গরম ঘরের মধ্যে রাখা অনুচিত। জীবনের উভয়প্রান্তে অর্থাৎ শৈশব ও বার্ধক্যে মানুষের প্রতিরোধ শক্তি কম থাকে, এ জন্য তাদের পক্ষেই রোগ আক্রমণ সহজ হয়। এ রোগের প্রথম অবস্থায় বিরক্তিকর ও বেদনাদায়ক শুষ্ক খুসখুসে কাশি, সর্দি শিরঃপীড়া, গলাব্যথা, বক্ষব্যথা, সময় সময় স্বরভঙ্গ প্রভৃতি লক্ষণ প্রকাশ পায়। এর সাথে দেহের উত্তাপ অল্প পরিমাণে বাড়ে (১০১ ডিগ্রি-১০২ ডিগ্রি ফা.)। রোগের প্রকৃতির ওপরই উত্তাপের বৃদ্ধি নির্ভর করে। রোগীর শুষ্ক কাশি ও শ্বাস-প্রশ্বাসে সামান্য কষ্ট থাকে, অধিকসংখ্যক বায়ুনালী আক্রান্ত হলে রোগীর বুকের মধ্যে টাটানি ও টানটানভাব অনুভব করে। প্রবল শুষ্ক কাশিতে বুকে ব্যথা লাগে, শ্বাস-প্রশ্বাসের দ্রুততা বৃদ্ধি পায়। দেহের উত্তাপ বাড়ে। ক্রমে শ্লেষ্মা সরল হতে থাকে এবং অল্প কাশিতেই থোকা থোকা কফ উঠে বুক পরিষ্কার হয়ে যায়। সাধারণত সুস্থ যুবকদের পক্ষে হঠাৎ শ্বাসনালীর প্রদাহ কখনোই মারাত্মক হয় না। কিন্তু শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে অবস্থাভেদে এ রোগ অথবা এ রোগ বিস্তৃত হয়ে অন্য উপসর্গের সৃষ্টি করলে বিপদের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। উপযুক্ত সময়ে রোগ প্রশমিত না হলে তা পুরাতন আকার ধারণ করে, তখন তাকে পুরাতন বা দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসনালীর প্রদাহ বলে।
চিকিৎসা
জ্বর থাকলে রোগীকে পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে। অনেক ক্ষেত্রেই হঠাৎ আক্রান্ত প্রদাহ কয়েক দিনের মধ্যেই আরোগ্য হলেও, কোনো কোনো রোগীর ক্ষেত্রে কিছুতেই আরোগ্য হতে চায় না এবং ক্রমেই নতুন নতুন উপসর্গ সৃষ্টি করতে থাকে। বুকে অত্যধিক ব্যথা থাকলে সাধারণ ব্যথানাশক ওষুধ নিতে হবে। সাধারণ ক্ষেত্রে পেনিসিলিন জাতীয় জীবাণু ধ্বংসকারী ওষুধ দেয়া হয়। রোগ প্রবল হলে এমপিসিলিন, টেট্রাসাইক্লিন, কোট্রাইমঅক্সাজল জাতীয় ওষুধ দেয়া হয়। এ ওষুধগুলো সাধারণত ৭-১০ দিন পর্যন্ত দিতে হয়। কাশি ও কফের জন্য বেঞ্জিন বা মেথানল মিশ্রিত জলীয়বাষ্প শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে দিনে তিনবার করে ১০ মিনিট ধরে নিলে খুব উপকার পাওয়া যায়। শ্বাসনালীর সংকীর্ণতার ফলে শ্বাসকষ্ট হলে সালবিউটামল, ইফিড্রিন জাতীয় উপশমকারী ওষুধ দেয়া হয়। রাতে কাশি বন্ধ করার জন্য ফোলকোডিনযুক্ত ওষুধ ব্যবহার করা যায়।
——————-
অধ্যাপক ডা. মোঃ আতিকুর রহমান
মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা।
দৈনিক নয়া দিগন্ত, ৩০ মার্চ ২০০৮
Leave a Reply