শরীর সুস্থ রাখতে শরীরচর্চার কোনো বিকল্প নেই। এক সময়ে শুধু শেষ বয়সী মানুষরা ডায়াবেটিস কমাতে হাঁটাহাঁটির অভ্যাস করলেও এখন হাঁটাহাঁটি আর ব্যায়ামের অভ্যাসটা তারুণ্যের ক্রেজ কালচারে এসে ঠেকেছে। শহরের মধ্যে থেকে শুরু করে শহরতলীতেও তরুণ তরুণীরা এখন ব্যায়ামে অভ্যস্ত। হালে হিন্দী সিনেমার নায়কদের মাঝে যে বডি বিল্ডিং প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে তার ছাপ এসে পড়েছে আমাদের দেশের তরুণ সমাজের উপর। পাড়ার মোড়ের সেই হ্যাংলা ছেলেটাই হয়তো এখন ব্যায়ামের তাগাদে বেশ তাগড়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই ব্যায়ামের আছে বেশ কিছু নিয়ম। এসব নিয়মের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে ব্যায়ামের আগে ও পরে খাবার রুটিন।
ব্যায়ামের আগে
ব্যায়াম শুরু করার আগে এমন কোনো ভারী খাবার গ্রহণ করা উচিৎ নয় যার কারণে শরীর দূর্বল হয়ে পড়বে। কিন্তু আবার খালি পেটেও ব্যায়াম শুরু করা ঠিক না। তাই এমন খাবার গ্রহণ করা উচিৎ যা আসলে শরীরকে শিথিল করার পরিবর্তে চাঙ্গা রাখবে ও শক্তি যোগাবে।
ব্যায়ামের আগে কখন খাবেন
ভরা পেটে কখনোই ব্যায়াম করা উচিৎ নয়, তাই এমন কিছু খাবার ব্যায়ামের আগে গ্রহণ করতে হবে যা দ্রুত হজম হয়ে যায়। খাবার হজম হতে সাধারণত ১ থেকে ৪ ঘন্টা সময় লাগে। এটা একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম হয়ে থাকে। তাই আপনার উচিৎ হবে একটা ক্যালেন্ডার তৈরি করে নিজের হজমশক্তির একটা তালিকা তৈরি করা। যারা খুব সকালে উঠে হাঁটতে বা দৌড়াতে যাবার অভ্যাসটি রপ্ত করে ফেলেছেন তারা সকালে উঠে একটু সময় নিয়ে ব্যায়ামের আগে কিছু হালকা খাবার খেয়ে নিন যেন খাওয়ার ২-৩ ঘন্টা পরে ব্যায়াম শুরু করতে পারেন। যদি দেখেন এই রুটিনে খুব বেগ পেতে হচ্ছে তাহলে ব্যায়াম শুরুর করার একঘন্টা আগে যেকোনো তরল খাবার গ্রহণ করতে পারেন। তরল খাবার হজম হতে সময় অনেক কম লাগে।
কি খাবেন
যেহেতু ব্যায়ম করতে গেলে সবচেয়ে বেশী শক্তি অপচয় হয় তাই চেষ্টা করুন খাদ্য তালিকায় এমন কিছু রাখতে যেটা আপনাকে পর্যাপ্ত শক্তির যোগান দেবে। ব্যায়ামের আগের খাবারগুলোতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকতে হবে আর দ্রুত হজম হতে হবে। এমন খাবারগুলোর মধ্যে হতে পারে পাচ্চা, ফল, রুটি, এনার্জি বার এবং বিভিন্ন ধরনের পানীয়। যদি সারাদিন ধরে কোনো শরীরচর্চা কার্যক্রমে অংশ নিতে হয় তাহলে কিন্তু খাবার তালিকাটা আরো একটু শক্ত হতে হবে। ব্যায়াম শুরুর ৪ ঘন্টা আগে খাবার গ্রহণ করা উচিৎ এবং ২ থেকে ৩ ঘন্টা আগে কোনো এনার্জি ড্রিঙ্ক আর ১ ঘন্টা আগে যেকোনো একটা ফ্লুইড রিপেসমেন্ট (স্পোর্টস ড্রিঙ্ক)।
খাদ্য তালিকা
১ঘন্টা বা তারও কম সময় আগে
ফল বা সব্জি জুস যেমন: কমলা, টমেটো অথবা তাজা ফলের রস যেমন: আপেল, তরমুজ, পিচ, আঙ্গুর অথবা কোনো স্পোর্টস ড্রিঙ্ক ১/২ থেকে ১ গাস পরিমাণে।
২ থেকে ২ ঘন্টা আগে
তাজা ফল, ফল বা সব্জি জুস, রুটি, কম চর্বিযুক্ত ইয়োগার্ট, স্পোর্টস ড্রিঙ্ক
৩ থেকে ৪ ঘন্টা আগে
তাজা ফল, ফলের জুস, রুটি, পাচ্চা সাথে টমোটো সস, আলু সিদ্ধ, এনার্জি বার, কম চর্বিযুক্ত দুধের সাথে কর্নফ্লেক্স, কম চর্বিযুক্ত ইয়োগার্ট, রুটি কিংবা টোস্টের সাথে পিনাট বাটার, লো ফ্যাট চিজ।
ব্যায়ামের আগে কখনোই মাংস, কোনো ধরনের ভাজা পোড়া, চিপস, চকলেট এধরনের উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ করা উচিত নয়। এধরনের খাবার অনেকক্ষণ পাকস্থলিতে স্থায়ী হয় বলে আপনার ব্যায়ামকে বিঘ্নিত করবে।
ব্যায়ামের পরের খাবার
যেকোনো ধরনের ব্যায়াম করার আগে খাবার রুটিনটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি ব্যায়াম করার পরের রুটিনটাও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ব্যায়াম করার পারে আপনার শরীর থেকে প্রয়োজনীয় ক্যালরি এবং গ্লুকোজ কমে যায়। আর তাই ব্যায়াম করার পরে শরীরকে পর্যাপ্ত পরিমাণে শক্তি বর্ধক কিছু খাবার দেয়া উচিৎ।
প্রথমেই শরীর থেকে ঘাম হয়ে ঝরে যাওয়া তরল ঘাটতি পূরণ করতে হবে। এর জন্য ব্যায়াম শেষ করে প্রচুর পানি খান। সাথে গ্লুকোজ মিশিয়ে নিতে পারলে আরো ভাল। ব্যায়াম শেষে করার ১৫ মিনিট পরে ফলের জুস খান। এটা আপনার শরীরে গ্লুকোজের ঘাটতি মেটাতে সহায়তা করবে। এক গবেষণায় দেখা গেছে ব্যায়াম শেষ করার দুই ঘন্টার মধ্যে যেকোনো ধরনের তরল খাবার শরীরের মাংসপেশীতে অনেক দ্রুত শক্তি যোগায়। আর তাই ব্যায়াম শেষ করার ১৫ মিনিট পর থেকে টানা ২ ঘন্টা বিভিন্ন তরল পানীয় ও এনার্জি ড্রিঙ্ক গ্রহণ করুন। এরপর খাবার তালিকায় এমন কিছু কার্বোহাইড্রেড রাখুন যেগুলো আপনাকে শক্তির যোগান দেবে দ্রুত। মূলত ব্যায়াম করার ফলে আপনি যে শক্তি ক্ষয় করেছেন তা ফিরিয়ে আনতেই ব্যায়াম শেষে খাবার গ্রহণ করতে হবে। তবে চেষ্টা করুন ব্যায়াম শেষ করে প্রথম ২ঘন্টায় ফলের জুস, সব্জি জুস, বিভিন্ন ধরনের সালাদ খেতে। এরপর এমন কিছু খাবার গ্রহণ করুন যেগুলোতে শক্তি বৃদ্ধিকারী উপাদান বেশী। যেমন আলু সিদ্ধ, ইয়োগার্ট ইত্যাদি। তবে মনে রাখুন তরল খাবারগুলো আপনার শরীরের জন্য দ্রুত শক্তি যোগান দেবে। তার তুলনায় আপনি যদি বেশ পরিমাণে ভারি খাবার গ্রহণ করেন তা কিন্তু আপনার শরীরের জন্য উপকারী হতে সময় নেবে অনেকটা।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, জুলাই ২১, ২০০৯
mustain
amai khub balo laglo
Minakshi saha
Amr akta help holo eta jene