বেশি কথা বলা অনেকেরই পছন্দ নয়। আর তা যদি হয় আড্ডা, খোশগল্প, পরচর্চা বা কোনো কিছুর সমালোচনা, সে ক্ষেত্রে বক্তার দিকে দৃষ্টি হয়ে থাকে আরও বাঁকা। জনশ্রুতি আছে, কথার এই তুবড়ি ছোটানোর বেলায় মেয়েরা নাকি এককাঠি সরস। বকবকানির এই দোষ মেয়েদের ওপর যতই চাপানো হোক না কেন, মন খুলে অনর্গল কথা বলার বেশ সুফলও রয়েছে। কথাটি মনগড়া বা বানোয়াট কিছু নয়, এটি বিজ্ঞানীদের গবেষণানির্ভর।
সম্প্রতি একদল বিজ্ঞানী বলেছেন, খোশগল্প, পরচর্চা বা সমালোচনা করতে গিয়ে বেশি বেশি কথা বলার ব্যাপারটা শরীরকে আরও সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, আড্ডা, খোশগল্প বা পরচর্চায় ‘প্রজেস্টেরন’ নামের একটি হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা উদ্বেগ ও মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে। অন্যের সমালোচনা, খোশগল্প প্রভৃতি সামাজিক বন্ধন জোরদার ও মেয়েদের সুখী করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অধ্যাপক স্টেফানি ব্রাউনের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এ গবেষণা চালান। গবেষণার ফল হরমোনস অ্যান্ড বিহেভিয়ার নামের একটি সাময়িকীতে প্রকাশ করা হয়।
এই গবেষণার জন্য গবেষকেরা ১৬০ জন ছাত্রীকে বেছে নেন। তাঁদের দুই ভাগ করে দুজন দুজন করে জুটি বেঁধে দেওয়া হয়। এক দলকে আলোচনার মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রত্যেক জুটিকে তাঁদের বিশ্বের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে বেছে নিতে বলা হয়, যাঁদের তাঁরা খাবারের টেবিলে পাশে পেতে চান। বলা হয় তাঁদের করা মহত্তম কাজ সম্পর্কেও আলোচনা করতে। এভাবেই তাঁদের মধ্যে উসকে দেওয়া হয় মুখরোচক পারস্পরিক আলোচনার বীজ।
ছাত্রীদের অন্য দলটিকে উদ্ভিদবিজ্ঞানের একটি গবেষণামূলক নিবন্ধের কপির ভুল সংশোধনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০ মিনিট পর পরীক্ষা করে দেখা যায়, প্রথম দলের ছাত্রীদের প্রজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা হয় আগের মতোই আছে, নয়তো বেড়ে গেছে। অন্যদিকে কমে গেছে অন্য দলের ছাত্রীদের এই হরমোনের মাত্রা।
অধ্যাপক স্টেফানি ব্রাউন বলেন, সামজিক বন্ধন ও আচরণের সঙ্গে রয়েছে অনেক হরমোনের নিবিড় সম্পর্ক। আর এই হরমোনের প্রভাবেই উদ্বেগ ও মানসিক চাপ কমে যায়।
প্রজেস্টেরন হরমোনের উৎপত্তি হয় নারীর গর্ভাশয়ে। এটি গর্ভাশয়কে সন্তান ধারণের প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করে। কোনো ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধেও এটি কাজ করে থাকে।
সূত্রঃ ডেইলি মেইল অনলাইন, এমএসএন ডট কম, প্রথম আলো, জুন ২৫, ২০০৯
Leave a Reply