প্রতিদিন আয়নায় তাকালে একবার বোধদয় হয় নিজের শরীরের ফিটনেস লেভেল আর বাড়তি মেদের প্রতি। কিন্তু সেই বোধদয় আবার আয়নার প্রতিবিম্ব থেকে সরে গেলে কোথায় যেন হারিয়ে যায়। খাবার টেবিলে কিংবা ফাস্টফুড শপে যখন খুব ভারি ভারি খাবারের স্বাদ নিতে হয় তখন মনে পড়ে না। কিন্তু বাসায় ফিরে শরীরের ভেতর যখন অবসাদ বাসা বাঁধে তখন মনে হয় একটু এক্সারসাইজ করলে কি এমন হয়? আসলে আপনি নিজেও জানেন না, প্রতিদিন চেতনার ভেতরে এরকম বার বার অনুভূতি তৈরি হলেও কোন এক অজানা কারণে ফিটনেস লেভেল বাড়ানোর চেষ্টা আর শুরু করা হয় না। অথচ আপনি নিজেই পারেন আপনার মোটিভেশন লেভেল গড়ে তুলতে। অনেক সময় মনে হয় জিম থাকলে বোধহয় আপনার বর্তমান অবস্থা হতো না, কখনো কখনো ভাবেন বাসায় ট্রেডমিল থাকলে হতো। কখনো আবার একগাদা ফিটনেসের বই, ভিডিও টেপ কিংবা এক্সারসাইজের জন্য রিদমিক অডিও সিডি কিনে নিয়ে আসেন। কিন্তু শুরু আর করা হয় না। অথচ আপনার চারপাশে এরকম অনেক উপায় ছড়িয়ে আছে। শুধুমাত্র মনোসংযোগ বাড়ানোর মাধ্যমেই আপনি নিজের প্রত্যয়কে একটি সুনির্দিষ্ট অবস্থানে নিয়ে যেতে পারেন। প্রথমেই ভেবে নিন, কেন আপনি এক্সারসাইজ করবেন? মনে রাখবেন, যেকোনো কাজ করার জন্য যেমন একটা কারণ নির্দিষ্ট হিসেবে পেছন থেকে কাজ করে তেমনি আপনার ফিটনেস লেভেল বাড়ানোর জন্য এক্সারসাইজ অলওয়েজ ওয়ান এন্ড অনলি ওয়ে। কেন আপনি সেই উপায়টি গ্রহণ করছেন না, তা নিজেকেই প্রশ্ন করুন। প্রতিদিন কোনো বাজে অজুহাতে আপনি কী তা এড়িয়ে যাচ্ছেন, না সময় পাননি বলে নিজেকেই তাড়িৎ করছেন। আসলে এর কোনোটিই আপনার সমাধান দেবে না। বরং এক্সারসাইজের জন্য আপনার মনোসংযোগ বাড়াতে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি কাজ করবে তা হচ্ছে এর ফলে আপনি কী পাবেন তা ভেবে নিন। মনে রাখবেন, আয়নায় প্রতিদিন নিজের প্রতিবিম্বকে আর উপহাস করতে হবে না। সুনির্দিষ্ট কারণ বের করার পর নিজের কাছেই কমিটমেন্ট করতে শিখুন। মনে রাখবেন, প্রতিশ্রুতি দেয়া যত সহজ রক্ষা করা ততোটা নয়। তবে হতাশ হবেন না, প্রথমেই যে আশিভাগ ফল পাবেন তা কিন্তু নয়। সপ্তাহের শুরুতেই আপনার এই সপ্তাহের ফিটনেস চার্ট ঠিক করে নিন। প্রতিদিন কী কী এক্সারসাইজ করবেন এবং কতক্ষণ করবেন তা আগে থেকেই ঠিক করে নিন। লক্ষ্য অর্জন করতে পারবেন এমন টার্গেটই ঠিক করুন। কেননা, এই সপ্তাহে টার্গেটে পৌঁছাতে পারলে আগামী সপ্তাহে নতুন টার্গেট নির্ধারণে আপনার সহজ মনভঙ্গি প্রতিশ্রুতিশীল হয়ে উঠবে। সম্ভব হলে একটি ডায়েরি রাখুন। কি লক্ষ্য ঠিক করলেন আর কি বাস্তবায়িত হলো তার একটি তুলনামূলক চিত্র গ্রহণ করুন। এভাবেই লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছে প্রতিনিয়ত আপনার মনোসংযোগ বাড়তে থাকবে। একটা সময় গিয়ে দেখবেন, দীর্ঘক্ষণ এক্সারসাইজ করা আপনার জন্য আর কঠিন কিছু নয়। বরং আপনার উন্নতি অন্যদের জন্য উদাহরণ হতে পারে।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, জুন ১৬, ২০০৯
Leave a Reply