এই ব্যস্ত নাগরিকজীবনে নিয়মিত নিজের যত্ন নেওয়ার সময় বের করা কঠিন। একটু অবহেলা বা আলসেমিতে শরীর যে ফিট থাকছে না, সেদিকেও খেয়াল নেই। অনেকেই হয়তো জিম বা ফিটনেস সেন্টারগুলোতে যেতেন। কিন্তু সময়ের অভাবে তাও নিয়মিত হয়ে ওঠে না। সে ক্ষেত্রে কাজের সময় বা চলার পথে যদি হেঁটে হেঁটে ব্যায়াম করেন, তাহলে এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। এ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা· শফিকুর রহমান পাটোয়ারী।
মনকে সতেজ রাখা ও সুস্থ-সবল থাকার মূলমন্ত্র হলো শরীরকে ফিট রাখা। একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের প্রতিদিনই কিছু না কিছু ব্যায়াম করা উচিত। যেহেতু সবাই এখন কমবেশি ব্যস্ত, তাই ব্যায়ামের জন্য সঠিক পরিকল্পনা প্রয়োজন। আপনি সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই ব্যায়াম শুরু করতে পারেন।
আধঘণ্টা হেঁটে আসার পর সকালের নাশতা সেরে নিতে পারেন। হাঁটাই আসলে সর্বোত্তম ব্যায়াম। চলার পথে যেটুকু সহজেই পায়ে হেঁটে যাওয়া যায়, যানবাহন ব্যবহার না করে হেঁটে যেতে পারেন। একভাবে একজায়গায় বসে না থেকে পায়চারি করতে পারেন। লিফটে যতটা সম্ভব কম উঠুন। রাতে খাওয়ার পর কয়েক পা হাঁটুন। খেয়েই সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়বেন না। তাতে হজমে অসুবিধা হবে।
ছুটির দিনগুলোতে পরিবারের সবাই মিলে কাজ করতে পারেন। ঘরের মেঝে পরিষ্কার করা ভালো ব্যায়াম। এতে মনও প্রফুল্ল থাকবে, বাড়তি ক্যালোরিও ঝরবে।। অফিসে বেশিক্ষণ চেয়ারে বসে না থেকে হাঁটাহাঁটি করুন।
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ব্যায়ামের সময় সপ্তাহে কিছুটা বাড়িয়ে নিন। মিনিট ১০-১৫। এ ছাড়া জগিং করতে পারেন। চর্বিযুক্ত ও ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন। ফলমূল, সবজি ও পানি বেশি করে খাবেন। উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার পরিহার করা উচিত। এ ছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে। মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। হৃৎপিণ্ডের রক্ত সঞ্চালনও বাড়ে। ফলে ত্বকও ভালো থাকে। ব্যায়াম নিয়মিত না হলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে নানা রকম রোগ বাসা বাঁধে। কারও সামর্থ্য থাকলে ব্যায়ামের যন্ত্রপাতি কিনেও বাড়িতে করতে পারেন। অনেক সময় রাতে শোয়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখে ঘুম আসে না। তখন আপনি চাইলে শুয়ে শুয়ে করে নিতে পারেন সাইক্লিং। তবে চল্লিশোর্ধ্ব বয়স যাঁদের, তাঁরা ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে একটু সচেতন থাকবেন।’
যাঁরা এত দিন নিজের দিকে নজর দিতে পারেননি বা করি করি করেও করা হয়ে ওঠেনি, তাঁরা আজ থেকে শুরু করতে পারেন। একটু সচেতনতার সঙ্গে একটু বাড়তি যত্নেই আপনি থাকবেন একদম ফিট।
মনে রাখবেন
— চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আপনার বয়স, ওজন ও উচ্চতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডায়েট চার্ট করতে পারেন।
— শরীরে অতিরিক্ত চাপ দিয়ে কখনোই ব্যায়াম করবেন না। ক্লান্তিবোধ নিয়ে ব্যায়াম করা উচিত নয়।
— ব্যায়ামের সময় অপেক্ষাকৃত ঢিলেঢালা ও আরামদায়ক পোশাক পরা উচিত।
— ভরাপেটে ব্যায়াম করা উচিত নয়।
— অফিসে চেয়ারে বসে কাজ করার সময় মেরুদণ্ড সোজা রেখে কাজ করলে মেদ হবে না।
— হাঁটা ও জগিংয়ের সময় উপযুক্ত জুতা ব্যবহার করুন।
— সময় পেলেই শুয়ে, বসে কাটাবেন না।
— ঘরের কাজ নিজে করুন। এতেও ব্যায়াম হয়।
তৌহিদা শিরোপা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ১৩, ২০০৮
Leave a Reply