অন্যান্য সার্জারির মতো ভাসকুলার সার্জারির ক্ষেত্রেও কসমেটিক উপায়ে বড় ধরনের ক্ষত ছাড়াই রক্তনালির অসুখ নির্মূল করা যায়। রক্তনালির নানাবিধ অসুখ রয়েছে। এগুলোর দু-একটি ছাড়া বেশির ভাগই কসমেটিক উপায়ে চিকিৎসা করা সম্ভব। আমাদের দেশে এসব অসুখের কিছু ক্ষেত্রে কসমেটিক উপায়ে চিকিৎসা শুরু হয়েছে, যদিও উন্নত বিশ্বে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কসমেটিক উপায়ে চিকিৎসা হচ্ছে।
রোগ
রক্তনালির রোগ, যেগুলো কসমেটিক উপায়ে চিকিৎসা সম্ভব তা দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
– শিরার অসুখ, যেমন- ভেরিকোস ভেইন (পায়ের রগ ফুলে কেঁচোর মতো হয়), শিরার জন্মগত ত্রুটি ইত্যাদি
– ধমনির অসুখ, যেমন- রক্তনালি সরু বা বন্ধ হয়ে যাওয়া (স্টেনোসিস), রক্তনালি ফুলে যাওয়া বা অ্যানিউরিজম।
রক্তনালির সমস্যা বোঝার উপায়
ভেরিকোস ভেইনের ক্ষেত্রে পায়ের রগগুলো ফুলে ওঠে অনেকটা কেঁচোর মতো দেখতে হয়। হাঁটার সময় পা ভারী লাগে, গরম হয়ে যায়, বিশ্রাম করলে অথবা পা উঁচুতে রাখলে একটু ভালো লাগে। অন্যদিকে শিরার জন্মগত ত্রুটির ক্ষেত্রে শরীরের কোনো অংশ টিউমারের মতো ফুলে ওঠে, যা চাপ দিলে বসে যায়, আবার ফুলে ওঠে। রক্তনালি সরু হয়ে গেলে হাঁটার সময় পায়ে ব্যথা হয়, পা শুকিয়ে যায়। ধমনি ফুলে গেলে, ছিঁড়ে গেলে ওই অংশে তীব্র ব্যথা হয়। এর সঙ্গে রোগীর হার্টের অসুখও থাকতে পারে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
সাধারণত ডুপ্লেক্স পরীক্ষার মাধ্যমে এসব রোগের বেশির ভাগই ধরা পড়ে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে সিটি অ্যানজিওগ্রাম, এমআরআই, অ্যানজিওগ্রামের মতো পরীক্ষার মাধ্যমে এসব রোগ শনাক্ত করা যাবে।
চিকিৎসা
ভেরিকোস ভেইন
এ ক্ষেত্রে স্ট্রিপিং অ্যান্ড মাল্টিপল ফ্লেবেকটিমি নামের অপারেশনের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্ষত তৈরি করে নষ্ট রক্তনালি তুলে ফেলা হয়। এসব ক্ষত এত ছোট যে সেলাই লাগে না।
এ ছাড়া ভেরিকোস ভেইনে বারবার আক্রান্ত হলে ইনজেকশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করালে তা ভালো হয়ে যায় এবং কোনো ক্ষত হয় না। সমস্যা বোধ না করলেও দেখতে খারাপ লাগে বলে অনেকে এ রোগের চিকিৎসা নিতে আসেন। তাই চিকিৎসার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত অপারেশনের পর দৃশ্যমান কোনো ক্ষত যেন না থাকে। তবে মনে রাখতে হবে, শুরুতেই চিকিৎসা নিতে পারলে কসমেটিক চিকিৎসা সম্ভব, না হলে নয়।
রক্তনালির জন্মগত ত্রুটি
এ ক্ষেত্রে শুরুতে স্কেলেরোথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ইনজেকশন দিয়ে রোগ ভালো করা হয়। কসমেটিক অপারেশনের আরেকটি পদ্ধতি হলো কয়লিং। এ ক্ষেত্রেও কোনো ক্ষতের সৃষ্টি হয় না।
ধমনি সরু হলে
এ ক্ষেত্রে বেলুনিংয়ের মাধ্যমে রক্তনালি ফোলানো হয়, প্রয়োজনে রিং বা স্টেন্ট বসিয়ে দেওয়া হয়। ফলে দৃশ্যমান কোনো ধরনের ক্ষত থাকে না।
রক্তনালি স্ফীত হলে
এ ক্ষেত্রে এন্ডোভাসকুলার টেকনিক দিয়ে স্টেন্ট গ্রাফট বা কাভারড স্টেন্ট দিয়ে চিকিৎসা করা যায়।
অনেকেই রক্তনালির নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, কিন্তু সঠিক তথ্যের অভাবে প্রকৃত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কসমেটিক ভাসকুলার সার্জারির মতো উন্নত চিকিৎসা এখন বাংলাদেশেই সম্ভব। তবে মনে রাখতে হবে, কসমেটিক ভাসকুলার সার্জারি শুধু রোগের শুরুর দিকেই সম্ভব। দেরিতে রোগের জটিলতা বেড়ে যায়। তখন চাইলেও কসমেটিক সার্জারি করা সম্ভব নয়। তাই রোগের শুরুতেই কার্ডিওভাসকুলার বা ভাসকুলার সার্জনের শরণাপন্ন হোন এবং সঠিক চিকিৎসা নিন।
ডা. মো. আনিসুজ্জামান
হৃদরোগ, রক্তনালি বিশেষজ্ঞ
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা
গ্রন্থনা: ডা. সাকলায়েন রাসেল
সূত্র: কালের কন্ঠ, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১০
MD faysal
ভেরিকোস ভেইন এর জন্য ভ্যাকসিন দিলে কি ক্ষতি হয়?