পেপটিক আলসার বা গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগের গ্যাস্টিক বা আলসার নামটির সাথে পরিচিত নন এমন লোক খুঁজে বের করা হয়তো খুব কঠিন হবে। সাধারণত লোকজন গ্যাস্টিক বা আলসার বলতে যা বুঝে থাকেন আমরা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলি পেপটিক আলসার।
পেপটিক আলসার যে শুধু পাকস্থলীতেই হয়ে থাকে তা কিন্তু নয়; এটি পৌষ্টিকতন্ত্রের যেকোনো অংশেই হতে পারে। সাধারণত পৌষ্টিকতন্ত্রের যে যে অংশে পেপটিক আলসার দেখা যায় সেগুলো হচ্ছে
১। অন্ননালীর নিচের প্রান্ত;
২। পাকস্থলী;
৩। ডিওডেনামের বা ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম অংশ এবং
৪। পৌষ্টিকতন্ত্রের অপারেশনের পর যে অংশে জোড়া লাগানো হয় সে অংশে।
পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় উন্নয়নশীল দেশ তথা আমাদের এ উপমহাদেশে এ রোগীর সংখ্যা খুবই বেশি। ধনীদের চেয়ে গরিব লোকদের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা যায়। তবে নারী-পুরুষ প্রায় সমানভাবে এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
যেসব কারণে পেপটিক আলসার হতে পারে
বংশগতঃ কারো নিকটতম আত্মীয়স্বজন, যেমন মা, বাবা, চাচা, মামা, খালা, ফুফু যদি এ রোগে ভুগে থাকেন তবে তাদের পেপটিক আলসার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। যাদের রক্তের গ্রুপ ‘ও’ তাদের মধ্যে এ রোগের প্রবণতা বেশি।
রোগ-জীবাণুঃ হেলিকো বেক্টারে পাইলোরি নামক একপ্রকার অনুজীব এ রোগের জন্য বহুলাংশে দায়ী।
ওষুধঃ যেসব ওষুধ সেবনে পেপটিক আলসার হতে পারে তার মধ্যে ব্যথানাশক ওষুধ বা ঘ ঝধরফং বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ধূমপানঃ ধূমপায়ীদের মধ্যে এ রোগের প্রবণতা বেশি।
এ ছাড়াও কারো পৌষ্টিকতন্ত্র থেকে যদি বেশি পরমাণে অ্যাসিড ও প্রোটিন পরিপাককারী একধরনের এনজাইম বা পেপসিন নামে পরিচিত তা নিঃসৃত হতে থাকে এবং জন্মগতভাবেই পৌষ্টিকতন্ত্রের গঠনতন্ত্রের গঠনগত কাঠামো দুর্বল থাকে তাহলেও পেপটিক আলসার হতে পারে।
তবে সাধারণত যে কথাটা প্রচলিত ভাজা-পোড়া কিংবা ঝালজাতীয় খাবার খেলে পেপটিক আলসার হয় এর কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ চিকিৎসা বিজ্ঞানে মেলেনি। তবে যারা নিয়মিত আহার গ্রহণ করেন না কিংবা দীর্ঘ সময় উপোস থাকেন, তাদের মধ্যে পেপটিক আলসার দেখা দিতে পারে।
উপসর্গগুলো
পেটব্যথাঃ সাধারণত পেটের উপরিভাগের মাঝখানে বক্ষ পিঞ্জরের ঠিক নিচে পেপটিক আলসারের ব্যথা অনুভব হয়। তবে কখনো কখনো ব্যথাটা পেছনের দিকেও যেতে পারে।
ক্ষুধার্ত থাকলে ব্যথাঃ এ জাতীয় রোগী ক্ষুধার্ত হলেই প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করে এবং খাবার খেলে সাথে সাথে ব্যথা কমে যায়।
রাতে ব্যথাঃ অনেক সময় রাতের বেলা পেটে ব্যথার কারণে রোগী ঘুম থেকে জেগে ওঠে। কিছু খেলে ব্যথা কমে যায় এবং রোগী আবার ঘুমিয়ে পড়ে।
মাঝে মধ্যে ব্যথাঃ পেপটিক আলসারের ব্যথা সাধারণত সবসময় থাকে না। একাধারে ব্যথাটা কয়েক সপ্তাহ চলতে থাকে। তারপর রোগী সম্পূর্ণরূপে ভালো হয়ে যায়, এ অবস্থা কয়েক মাস থাকে তারপর আবার কয়েক সপ্তাহ ধরে ঠিক আগের মতো ব্যথা অনুভব হয় ।
ব্যথা কমেঃ পেপটিক আলসার ব্যথা সাধারণ দুধ, অ্যান্টাসিড, খাবার খেলে কিংবা বমি করলে অথবা ঢেঁকুর তুললে ব্যথা কমে।
এ ছাড়াও পেপটিক আলসারের মধ্যে বুক জ্বালা, অরুচি, বমি বমি ভাব, ক্ষুধামন্দা, কিংবা হঠাৎ রক্ত বমি অথবা পেটে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব হতে পারে।
চিকিৎসা
শৃঙ্খলাঃ পেপটিক আলসারে আক্রান্ত রোগীদের অবশ্যই ধূমপান বন্ধ করতে হবে। ব্যথানাশক ওষুধ অর্থাৎ এসপ্রিন জাতীয় ওষুধ সেবন থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকতে হবে এবং নিয়মিত খাবার গ্রহণ করতে হবে।
ওষুধঃ পেপটিক আলসারের রোগীরা সাধারণত অ্যান্টাসিড, রেনিটিডিন, ফেমোটিডিন, ওমি প্রাজল, লেনসো প্রাজল, পেনটো প্রাজল জাতীয় ওষুধ সেবনে উপকৃত হন ।
কারণভিত্তিক চিকিৎসাঃ জীবাণুজনিত কারণে যদি এ রোগ হয়ে থাকে তবে বিভিন্ন ওষুধের সমন্বয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়, যা ট্রিপল থেকে থেরাপি নামে পরিচিত।
অপারেশনঃ পেপটিক আলসারের ক্ষেত্রে অপারেশন সাধারণত জরুরি নয়। তবে দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ সেবনের পরও যদি রোগী ভালো না হন, তবে কিছু খেলে যদি বমি হয়ে যায় অর্থাৎ পৌষ্টিক নালীর কোনো অংশ যদি সরু হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে অপারেশন করিয়ে রোগী উপকৃত হতে পারেন।
সময়মতো পেপটিক আলসারের চিকিৎসা না করলে রোগীর নিম্নলিখিত সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে। যেমন
১। পাকস্থলী ফুটা হয়ে যেতে পারে;
২। রক্ত বমি হতে পারে;
৩। কালো পায়খানা হতে পারে;
৪। রক্তশূন্যতা হতে পারে;
৫। ক্যান্সার হতে পারে (কদাচিৎ) এবং
৬। পৌষ্টিক নালীর পথ সরু হয়ে যেতে পারে এবং রোগীর বারবার বমি হতে পারে।
কাজেই যারা দীর্ঘমেয়াদি পেপটিক আলসারে ভুগছেন তাদের উচিত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। পেপটিক আলসার-জনিত জটিলতা আগে থেকেই শনাক্ত করা এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা নেয়া। প্রয়োজনে অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা ধরে না রেখে সুস্থ-সুন্দর-স্বাভাবিক জীবনযাপন করা।
—————————-
অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুল হক
বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ, চেয়ারম্যান, কলোরেকটাল সার্জারি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
চেম্বারঃ জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল, ৫৫, সাতমসজিদ রোড, (জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড) ধানমন্ডি, ঢাকা
দৈনিক নয়া দিগন্ত, ৩০ মার্চ ২০০৮
Sromobazar.com
আমরা যে ভেজাল সব খাই আমাদের সবারই পেপটিক আলসার বা গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগের ঝুকিটা একটু বেশি।
পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ।
sohel
আমার গ্যাস্টিক আলসার আমার মাজে মাজে রক্ত বমি হয়।এবং মাথা গোরায়, মাথা বার হয়ে আসে।
কি করব——–? বলেন প্লিজ।
Bangla Health
প্রচুর পানি পান করেন। কখনোই খালি পেটে থাকবেন না। একবারে অনেক না খেয়ে অল্প অল্প করে দিনে কয়েকবার খাবেন। হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাহাটি বা দৌঁড়াদৌডি করতে পারেন।
তবে কোনো ওষুধ খাবার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবেন।
শারিফ
হেলিকো বেক্টারে পাইলোরি কি টেস্ট এর মাদ্ধুমে নিন্নয় করব?
এবং সেটির দাম কত পরবে?
দয়া করে জানাবেন
Bangla Health
এক্সরে, বায়োপসি থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রকার টেস্ট আছে যা রোগের ধরন বুঝে করা হয়।
saiful
আমার অনেক দিন ধরেই সমস্যা। খাওয়ার সময় বমি বমি ভাব, বুক জ্বালাপোড়া করে। খাওয়ার রুচি একদমই নাই। খাওয়ার পরও পেট ফাঁপা থাকে এবং শুধু ঠেকুর উঠে। কি করতে পারি?
Bangla Health
আপনি যত তাড়াতাড়ি পারুন কিছু একটা ব্যায়াম করা শুরু করুন। সবচেয়ে ভালো হয়ে যদি দিনের কোন এক সময়ে ৩০-৪৫ মিনিট দৌড়াতে পারেন। সপ্তাহ ২/৩-এর মধ্যে ফল পেতে শুরু করবেন। ৩ মাসের মধ্যে আপনার অধিকাংশ সমস্যাই দূর হতে বাধ্য।
ততদিন খাওয়ার পর দু-একটা লবঙ্গ বা একটু আদা চিবুবেন। এতে বমিভাব বা বুকজ্বালা কমে যাবে। খাওয়ার ঘন্টা খানেক আগে একটা আমলকি খাবেন। এতে রুচি এবং খিদে লাগা ফিরে আসবে। খাওয়ার সময় অল্প অল্প খাবার মুখে দিয়ে ধীরে ধীরে মুখ বন্ধ রেখে চিবুবেন; একটু সময় নিয়ে খাবেন। পেট ভরে খাবেন না। আর কখনোই খালি পেটে থাকবেন না। একটু পর পর অল্প অল্প করে খাবেন। সব সময় পানি সাথে রাখবেন।
৩ মাস পরে এসে ফিডব্যাক জানাতে ভুলবেন না।
Shahidul islam
Hi:dear,Ami akjon gastricer rogi.Daily 2500(kcl) khowar proyjon.gastric er karone ami fat jathiy khowar aboid kori.Ki babe khalew ami daily 2500(kcl) khalri khobow .ami daily 4/5 bar bath khay.pochur porimane pani khai.daily bayem kori.ami cosec20mg regluar khaci.Doya kora amake donik khawar routine dila ami apnard kache chiro kithgo thakbo.
Bangla Health
রান্না করা তেল বা মসলা দুটাই আপনার জন্য ক্ষতিকর। কখনোই পেট ভরে খাবেন না। খাওয়ার পরে একটু আদা বা লবঙ্গ চিবুবেন।
আপনাকে খাবার তৈরীর ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে খাদ্য প্রস্তুত করতে হবে। শুধু স্বাদ বাড়াতে তেল-মসলার ব্যবহার বাদ দিতে হবে। তেল মসলা কম দিয়ে কিভাবে রান্না করা যায়, সে ব্যাপারে জানতে হবে। য়ার যেহেতু আপনার বেশি ক্যালরি দরকার, তাই দেখতে হবে কোন খাবার অল্প খেলে বেশি ক্যালরি পাওয়া যায়। যেমন ধরুন, যদি ভাত খেয়ে পেট ভরিয়ে ফেলেন তাহলে কিন্তু সঠিক পুষ্টি পাবেন না। মাছ, মাংশ, ডিম, দুধ, দই, ডাল, আটা, লাল চাল, শাকসবজি, ফলমূল- এসব বেশি খাবেন। সুগার, সোডিয়াম, ক্যাফেইন- এসব এড়িয়ে চলবেন।
Shahidul islam
kola ki gastric er khoti kora. ami akhon thake daily kalo zira khabo.kalo zira ki gaser opokar kora opkar korle tha kibabe khobo amar daily routine khawar routine dilla opkar hobe.gastric ki chiro thora nirmul kora jay
Bangla Health
কলা খেতে পারেন। কালো জিরার তেল কোন খাবারের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
আপনি সাধারণত কখন কি কি খান, তার একটা লিস্ট দেন। আমরা দেখে এদিক-ওদিক করে দিতে পারব। আমাদের জানা দরকার আপনি কোথায় থাকেন, সেখানে কি কি খাবার পাওয়া যায়, ইত্যাদি।
নিয়মিত ব্যায়াম করলে গ্যাস্ট্রিক কমে যাবে। আর কখনোই খালি পেটে, না খেয়ে থাকা যাবে না। অল্প অল্প করে সবসময় খাওয়ার উপর থাকতে হবে।
Shahidul islam
Many many thanks for u’r healping mind.Ami noakhali companigonj bas kori age 21.amar pate gasher problem ace.Apni bolacen ami kothay thaki ta janle apni amake daily food routine kora diben.
wait badanor jonno ja kono routine follow korte parbo.ja ko bayw bhoul food ami khate parbo.
apni routine korar shomoy amar gastric& gasher problem er kathwa khawal rakben.Lot of luv all ever green friend
Bangla Health
ওজন বাড়াতে এই পোস্টটি দেখুন।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা এড়াতে তৈলাক্ত ও মসলা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলবেন। অল্প অল্প করে ঘনঘন খাবেন।
ওজন বাড়াতে যে কোন পুষ্টিকর খাবার বেশি বেশি খাবেন। দুধ, ডিম, দই, মাছ, মাংশ, কলা- এগুলো বেশি খাবেন। প্রতিবার আহারের সময় এগুলো কিছু না কিছু খাবেন। যাদের গ্যাস্ট্রিক আছে, তাদের অনেক সময় দুধ সহ্য হয় না। এর বদলে টকদই বেশি খাবেন। সাদা ভাত, ময়দা, গোল আলু, সুগার, অ্যালকোহল, ক্যাফেইন, ধূমপান- এসব এড়িয়ে চলবেন।
একবারে পুরো লিস্ট দেয়া সময় সাপেক্ষ। সাথে থাকুন, এক এক করে চেয়ে নিন।
Shahidul islam
Amar boyos 21 hight 5:7″ wait 51kg.Amar routine kora dila kithogho thakbo.doya kora janaben gastric er problem thake chirothora mukthi powar chikisha. woigih
Bangla Health
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে খুব সহজেই মুক্তি পেতে পারেন। এজন্য শুধু নিয়মিত কিছু না কিছু ব্যায়াম করতে হবে আর খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে একটু সতর্ক থাকতে হবে। তৈলাক্ত ও মসলা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলবেন। অল্প অল্প করে ঘনঘন খাবেন। প্রচুর পানি পান করবেন।
Cshoton
Fat ki gas & Gastric er problem kora
Bangla Health
হ্যাঁ করে। ফ্যাটের কাজ হলো হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়া। এই জন্য দেখবেন তৈলাক্ত খাবার, যেমন বিরিয়ানী, পোলাউ- এসব খেলে অনেকক্ষণ আর ক্ষুধা লাগে না। তো গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকলে তার উপর আবার হজমে সমস্যা হলে দুটো মিলিয়ে ব্যাপারটা আরো খারাপ হয়ে যায়।
প্রতিবার খাবারে একটা নির্দিষ্ট মাত্রার ফ্যাট থাকা উচিত যাতে খাবারটা ৩ ঘন্টার মধ্যে হজম হয়ে যায় এবং ৩ ঘন্টা পর আবার ক্ষুধা লাগে।
haradon
Vaiya amar aksomoy prochondo gestic chilo.akon bes control a ase.tobe saradin pete kokono mridu beta,kokono mridu jole take arokom keno hoy?ar ami 3bela vat kai,achara onanno somoy ki ki doroner kabar kete pari?pete chara o soriler onnan jaigay mridu beta kore?waiting for ans
Bangla Health
৩ বেলা নয়, ভাগ করে ৫/৬ বেলা খাবেন। এতে পেট খালি থাকবে না একেবারে। তখন ব্যথা হবে না। শাকসবজি বেশি খাবেন।