হেলথ লিটারেসি শব্দই শিরোনামে দিলাম। এই মুহূর্তে ভালো প্রতিশব্দ খুঁজে পেলাম না। ‘হেলথ লিটারেসি’ শব্দটির ব্যাখ্যা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সম্বন্ধে তথ্য ও সংবাদ বুঝতে সমস্যা হলে বড় গুরুতর পরিণতি হতে পারে। চিকিৎসক যে ব্যবস্থাপত্র দিলেন, পরামর্শ দিলেন বা স্বাস্থ্য সম্পর্কে যেসব তথ্য দেওয়া হলো, তা বোঝা, প্রনিধান করা হলো হেলথ লিটারেসি।
দেখা গেল, হেলথ লিটারেসি কম হলে স্বাস্থ্য সমস্যা হয়, ঝুঁকি বাড়ে, ফলাফল উন্নতমানের হয় না, স্বাস্থ্যসেবাও মানুষ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না।
হেলথ রিসার্চ পরিচালনায় নিয়োজিত নর্থ ক্যারোলাইনার সংস্থা আরটিআই ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র হেলথ পলিসি রিসার্চ অ্যানালিস্ট ন্যান্সি বার্কম্যান বলেন, ‘এতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই।’
আমেরিকান এজেন্সি ফর হেলথ কেয়ার রিসার্চ ও কোয়ালিটির অর্থায়নে পরিচালিত এই গবেষণার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে ২০১১ সালের ১৯ জুলাই সংখ্যা অ্যানালক অব ইন্টারনাল মেডিসিন-এ।
গবেষকদের বক্তব্য, প্রায় ৮০ মিলিয়ন আমেরিকানের হেলথ লিটারেসি খুব দুর্বল—এদের স্বাস্থ্য তাই ঝুঁকির মুখোমুখি। বার্কম্যান বলেন, ‘কী হচ্ছে, ঘটছে, ব্যবস্থাপত্রে কী লেখা হলো, তা যদি বুঝতে না পারেন, তাহলে স্বাস্থ্য পরিচর্যা, সেবা ও স্বাস্থ্য পরিণতি এদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বেই।’
পর্যালোচনা করে দেখা গেল, হেলথ লিটারেসি দুর্বল হলে তা যুক্ত থাকে নেতিবাচক বেশ কিছু ফলাফলের সঙ্গে। তেমন ফলাফলের মধ্যে রয়েছে বারবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়া, জরুরি সেবা ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়া, হেলথ স্ক্রিনিং অনেক কম করা, টিকা নেওয়া কমা, সঠিকভাবে ওষুধ গ্রহণে অক্ষমতা, ওষুধের লেভেল বুঝতে অসামর্থ্য ও হেলথ মেসেজ বোঝার অক্ষমতা।
বয়স্ক লোকদের মধ্যে দুর্বল হেলথ লিটারেসির সঙ্গে সম্পর্কিত থাকে সার্বিক স্বাস্থ্যমানের অবনতি এবং উচ্চ মৃত্যুহার। নিউমারেসি বা সংখ্যাজ্ঞান হেলথ লিটারেসির অংশ। যেমন—রক্তসুগার মান, লিপিডমান, ক্রিয়েটিনিন মান, সিজিএফআর, ওষুধ গ্রহণ—এগুলো দুর্বল থাকলে, এগুলোর কোনো ঘাটতি থাকলেও স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।
হার্ভার্ডের স্কুল অব পাবলিক হেলথের মুখ্য গবেষক রিমারাড বলেন, সমস্যা কেবল রোগীর দুর্বল হেলথ লিটারেসিই নয়, কিছু স্বাস্থ্য পরিচর্যাকারী রোগী বোঝার মতো করে বলতে পারেন না, দিতে পারেন না তথ্যগুলো—এটি কমিউনিকেশন সমস্যাও বটে। এটা তাঁদেরও অক্ষমতা। প্রচলিত শব্দ ব্যবহার করে, রোগী বুঝতে পারেন এমন সহজ ও সঠিকভাবে না বললে রোগী হেলথ লিটারেট হবে কীভাবে! সাধারণ স্বাস্থ্যজ্ঞান বড় গুরুত্বপূর্ণ।
তাই রোগী না বুঝলে চিকিৎসককে প্রশ্ন করে বুঝে নেওয়া উচিত। লজ্জাবোধ করার কিছু নেই। চিকিৎসকের চেম্বারে অন্য কেউ যদি ভালো বোঝে, তাকে সঙ্গে নিলেও ভালো। এই গবেষণাপত্রের সঙ্গে সম্পাদকীয় নিবন্ধে আমেরিকান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের সিনথিয়া বাউর বলেন, এই ফলাফলে আগের একটি ধারণা আরও জোরদার হলো—স্বাস্থ্য তথ্যগুলোর লক্ষ্য যাঁদের জন্য, তেমন শ্রোতাদের মধ্যে পূর্ব নিরীক্ষা করা ভালো। তাঁদের উপযোগী হলো কি না।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস বারডেম হাসপাতাল,
সাম্মানিক অধ্যাপক, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ১৪, ২০১১
Leave a Reply