তথ্যচিত্র
পুকুরে ডুবে শিশুর মৃত্যু এখনো সংবাদপত্রে ও টিভি চ্যানেলের নিত্যদিনের বেদনাদায়ক খবর। শিশু সুরক্ষার তথ্য যাচাইয়ে বাংলাদেশ হেলথ অ্যান্ড ইনজুরি সার্ভে (বিএইচএস) সূত্রে জানা যায়, দেশে প্রতিবছর প্রায় ৩০ হাজার শিশু মারা যায় ইনজুরির কবলে। আর এদের অর্ধেকেরও বেশি মৃত্যু ঘটছে পানিতে ডুবে।
দেশে দৈনিক গড়ে ৪৬ জন শিশু পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে। ১৯৮৩ সালের তুলনায় ২০০৩ সালে এসে যা প্রায় ৯ শতাংশ বেড়ে গেছে।
প্রায় ছয় হাজার ৫০০ পুকুর, চার হাজার দিঘি ও পৃথিবীতে ভূমি অনুপাতে সর্বাধিক নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর যে তথ্যচিত্র পাওয়া যায়—
পুকুরে বা দিঘিতে ডুবে শিশুমৃত্যুই সর্বাধিক
এপ্রিল-সেপ্টেম্বরে বেশি ঘটে
এক থেকে দুই বছরের শিশুতে বেশি
সকাল নয়টা থেকে দুপুরের মধ্যে
মা যখন সাংসারিক কাজে ব্যস্ত থাকেন
৭৫ শতাংশের বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে যখন বাড়ি থেকে অনধিক ২০ মিটারের কম দূরত্বে পানির উৎস রয়েছে অথচ এসব শিশুমৃত্যুর ১০০ ভাগই প্রতিরোধযোগ্য।
পানিতে ডুবে মৃত্যু-ড্রাওনিংয়ের প্যাথো-ফিজিওলজি
ফুসফুসে পানি ঢুকে যাওয়ার ফলে শিশু অক্সিজেন স্বল্পতাজনিত ও তৎপরবর্তী ব্রেইনে অক্সিজেনের অভাবজনিত মৃত্যুর শিকার হয়। মস্তিষ্কে অক্সিজেন ঘাটতিতে শিশু সহসাই জ্ঞান হারায়। শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রধান নালি সংকুচিত থাকে। শরীরে অক্সিজেন প্রেসার ২৫-৩০ মিমি পারদে নেমে আসে। মিনিট খানেকের মধ্যে শিশুকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস জোগানো গেলে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
৯০ শতাংশ পানিতে ডোবার দুর্ঘটনা ঘটে মিঠা পানিতে। এ ক্ষেত্রে অসমোসিসের জন্য ফুসফুসে পানি প্রবাহিত হয়। রক্তে পটাশিয়াম মাত্রা বাড়ে, কমে যায় সোডিয়াম, ফলে হূদ্যন্ত্রের ইলেকট্রিক কর্মযজ্ঞ বাধা পায়। দুই থেকে তিন মিনিটে ঘটে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট।
সমুদ্রের নোনা পানিতে ডোবার ঘটনা ১০ শতাংশ। এই পরিস্থিতিতে ফুসফুস থেকে পানি বের হয়ে আসে। ফুসফুসে ঘটে রক্তক্ষরণ।
ত্বরিত ব্যবস্থাপনা
যত দ্রুত সম্ভব শিশুর মুখ-নাক পানির স্তরের ওপরে নিয়ে আসা। ডুবে যাওয়া শিশু অনেক সময় উদ্ধারকারীকে আঁকড়ে ধরে নিচে তলিয়ে যেতে থাকে। সুতরাং উদ্ধারকারী শক্ত কিছু অবলম্বন ধরেই প্রচেষ্টা চালাবে।
সিপিআর প্রশিক্ষণ নেওয়া থাকলে ডাঙায় তুলে এনে তার ত্বরিত প্রয়োগ।
শিশুর অত্যধিক শীতলতাজনিত মৃত্যু নিবারণে ভেজা কাপড়-চোপড় সরিয়ে গরম কাপড়-চোপড়ে আবৃত করা।
প্রতিরোধ
জনসচেতনতাবিষয়ক কমিউনিটি কার্যক্রম ও প্রশিক্ষণ।
পুকুর, ডোবা বা দিঘির চারপাশে বেড়া দেওয়া, যাতে তা শিশুর নিরাপদ বাড়ি হিসেবে গণ্য হয়।
সুইমিংপুলে সেফটি ক্যামেরা প্রতিস্থাপন।
প্রণব কুমার চৌধুরী
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ১৯, ২০১১
Leave a Reply