প্রতিবছরের মতো এবারও ২০ অক্টোবর বিশ্ব অস্টিওপোরোসিস দিবস পালিত হচ্ছে। এ বছর এ দিনটির জন্য স্লোগান হলো ‘হাড়কে ভালোবাসো’। এই স্লোগানকে সামনে রেখে সুস্থ হাড় গঠনের জন্য তিনটি ধাপকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার ও ব্যায়াম।
অস্টিওপোরোসিস কী?
আক্ষরিক অর্থে অস্টিওপোরোসিস বলতে বোঝায় ছিদ্রযুক্ত হাড়। এতে হাড়ে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমে যায়, হাড়ের স্বাভাবিক গঠন নষ্ট হয়ে যায় এবং ক্রমেই হাড় ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। ফলে হাড় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা বহুগুণে বেড়ে যায়। হাড়ের এই ক্ষয় সাধারণত নীরবে এবং ক্রমবর্ধমানভাবে ঘটতে থাকে। সাধারণত প্রাথমিক ধাপে এর কোনো লক্ষণ পরিলক্ষিত হয় না। অস্টিওপোরোসিসে কোমরের হাড়, মেরুদণ্ড ও হাতের কবজির হাড় সবচেয়ে বেশি ভঙ্গুর হয়ে থাকে।
বিশ্বের প্রতি তিন সেকেন্ডে একজনের অস্টিওপোরোসিসের কারণে হাড় ভাঙে এবং প্রতি দুই সেকেন্ডে একজনের মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে থাকে। পঞ্চাশোর্ধ্ব প্রতি তিনজন মহিলার একজন ও প্রতি পাঁচজন পুরুষের একজন এই অস্টিওপোরোসিসজনিত হাড় ভাঙার শিকার হয়।
কেন অস্টিওপোরোসিস হয়?
অস্টিওপোরোসিসের বহুবিধ কারণ রয়েছে। শৈশবে হাড় গঠনের সময় পর্যাপ্ত ক্যালসিয়ামের অভাবে হাড়ের স্বাভাবিক গঠন বাধাপ্রাপ্ত হয়। এ ছাড়া হাড় গঠনে কিছুটা পারিবারিক প্রভাবও রয়েছে।
দৈনন্দিন জীবনে ব্যায়ামের অভ্যাস ও দৈনিক নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালসিয়াম গ্রহণের ওপরও হাড়ের গঠন অনেকাংশে নির্ভর করে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশেষ করে মহিলাদের মেনোপজ-পরবর্তী সময়ে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রোগ ও কিছু কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকেও হাড়ক্ষয় বা অস্টিওপোরোসিস হতে পারে।
অস্টিওপোরোসিসের উপসর্গ ও লক্ষণ
অস্টিওপোরোসিসে নীরবে হাড় ক্ষয় হতে থাকে। হাড় ভাঙার মাধ্যমেই এর উপস্থিতি প্রথমবারের মতো টের পাওয়া যায়। হাড়ে ব্যথা বা অল্প আঘাতে হাড় ভেঙে যাওয়াও হতে পারে অস্টিওপোরোসিসের প্রথম লক্ষণ। মেরুদণ্ডের হাড় ভাঙার ফলে কোমরে ব্যথা, কোমরে হাড়ের গঠনগত ত্রুটি, শরীরের উচ্চতা কমে যাওয়া—এমনকি মেরুদণ্ডের ভেতরে অবস্থিত স্নায়ুর ওপর চাপের প্রভাবে তীব্র ব্যথাও অনুভূত হতে পারে।
অস্টিওপোরোসিস শনাক্তকরণ
হাড়ের সাধারণ এক্স-রের মাধ্যমে অস্টিওপোরোসিস শনাক্ত করা সম্ভব নয়। এক্স-রের মাধ্যমে একমাত্র হাড়ভাঙাই নিরূপণ করা যায়। হাড়ভাঙার আগেই সঠিক সময়ে অস্টিওপোরোসিস শনাক্ত করার জন্য বোন মিনারেল ডেনসিটি পরীক্ষাটি করা হয়ে থাকে। সাধারণত কোমর বা মেরুদণ্ড হাড়ের ডেস্ক স্ক্যানের মাধ্যমে হাড়ের ঘনত্ব নিরূপণ করা হয় এবং তা থেকে হাড়ভাঙার ঝুঁকি নির্ণয় ও সঠিক চিকিৎসা নির্ধারণ করা যায়। এ ছাড়া রক্তের কিছু পরীক্ষার মাধ্যমেও (বোন টার্ন ওভার মার্কার) অস্টিওপোরোসিসজনিত হাড়ভাঙার ঝুঁকি মাপা হয়ে থাকে।
অস্টিওপোরোসিসের চিকিৎসা
অস্টিওপোরোসিস চিকিৎসার প্রধান উদ্দেশ্যই হলো হাড়ভাঙার ঝুঁকি কমানো। জীবনযাত্রায় নিম্নলিখিত নিয়মগুলো মেনে চলা উচিত।
ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন করা
নিয়মিত ব্যায়ামে অভ্যস্ত হওয়া
স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করা
পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-সমৃদ্ধ খাবার যেমন—ছোট মাছ, ডিম, দুধ ইত্যাদি গ্রহণ করা।
সঠিক জীবনযাত্রার সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক মাত্রায় ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট গ্রহণ করা যেতে পারে। বিশেষ করে বযস্ক পুরুষ ও মহিলা এবং মেনোপজ-পরবর্তী মহিলাদের ক্ষেত্রে অস্টিওপোরোসিসজনিত হাড়ভাঙা প্রতিরোধে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেটের ভূমিকা অপরিসীম। এ ছাড়া এর চিকিৎসায় বিসফসফোনেট জাতীয় ওষুধ ব্যবহূত হয়, যা শুধু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবনযোগ্য।
অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ
অন্য অনেক রোগের মতোই চিকিৎসার চেয়ে অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ অনেক সহজসাধ্য। প্রতিরোধের তিনটি ধাপ হলো—
পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি
পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম ও
নিয়মিত ব্যায়াম।
ভিটামিন ডি
সূর্যের আলো হচ্ছে ভিটামিন ডি-এর উৎকৃষ্ট উৎস। এ ছাড়া তৈলাক্ত মাছ, ডিমের কুসুমেও কিছু পরিমাণ ভিটামিন ডি রয়েছে। এসব খাদ্যে বেশি কোলেস্টেরল থাকায় এ ধরনের খাদ্য নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি গ্রহণ করা উচিত নয়। তাই ভিটামিন ডি পেতে হলে সূর্যরশ্মিই হচ্ছে প্রধান উৎস।
ক্যালসিয়াম
দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদা বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন রকম। গড়ে তিন বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রাম, চার থেকে আট বছর পর্যন্ত ৮০০ মিলিগ্রাম, নয় থেকে ১৮ বছর বয়সে এক হাজার ৩০০ মিলিগ্রাম, ১৯ থেকে ৫০ বছরে এক হাজার মিলিগ্রাম এবং ৫১ বছর বা তদূর্ধ্বে এক হাজার ২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম খাবার থেকে গ্রহণ করা উচিত। দুধ ছাড়াও বাদাম, শাকসবজি, হাড়সহ ছোট মাছে প্রচুর ক্যালসিয়াম রয়েছে।
ব্যায়াম
নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমেও সুস্থ হাড় পাওয়া সম্ভব। ব্যায়াম শুরু করার কোনো নির্দিষ্ট বয়স নেই। তবে যত তাড়াতাড়ি ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তোলা যাবে, ততই এর উপকারিতা বেশি।
ওজনবাহী ব্যায়ামগুলোই অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধের জন্য বেশি উপযোগী।
তবে সুখের বিষয় এই যে অস্টিওপোরোসিস এখন একটি প্রতিরোধ ও নিরাময়যোগ্য রোগ। এর জন্য প্রয়োজন সঠিক জীবনযাত্রা ও চিকিৎসা।
ফারিয়া আফসানা
এন্ডোক্রাইন ও মেটাবলিজম বিশেষজ্ঞ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ১৯, ২০১১
monir.ksa
amar backbone 5bosor jabot onak pain x-ra koraise ductor bolasa kono somossa nai. amar boyos 23.
Bangla Health
ব্যথা যখন হচ্ছে তখন কিছু না কিছু সমস্যা আছে। আপনি অন্য কোন ডাক্তার দেখিয়ে নিন।
snigdha
3 bosor jabot amar hatota batha & uta bosa korar somoy hatu ta ak rokom sound hoy amar ki koronio. Amar aga bat jor silo. Amar age 21.
Bangla Health
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান। খাওয়া দাওয়া আর ঘুম ঠিক রাখেন। নিয়মিত ব্যায়াম করুন।