বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ১০ ভাগ হেপাটাইটিস-বি এবং ৩ ভাগ হেপাটাইটিস-সি ভাইরাসে আক্রান্ত। গর্ভবতীদের শতকরা ৩.৫ ভাগ হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে অনাগত সন্তানসহ নিজেরাও পতিত হচ্ছেন মারাত্মক স্বাস্হ্য ঝুঁকিতে। হেপাটাইটিস একটি দুরারোগ্য ব্যাধি, যার মধ্যে হেপাটাইটিস বিওসির ব্যাপকতা ভয়াবহ। সমীক্ষায় দেখা গেছে, সমগ্র বিশ্বে হেপাটাইটিস-বি ও সি ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ৬০০ মিলিয়ন। এর মধ্যে হেপাটাইটিস-বি জনিত সংক্রমণে ৩৫০-৪০০ মিলিয়ন এবং হেপাটাইটিস-সি জনিত সংক্রমণে ১৮০ মিলিয়নের অধিক লোক আক্রান্ত। ধারণা করা হয়, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ১০ ভাগ হেপাটাইটিস-বি এবং ৩ ভাগ হেপটাইটিস-সি দ্বারা আক্রান্ত। গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে ৩.
৫ ভাগ হেপাটাইটিস-বি দ্বারা আক্রান্ত। দীর্ঘ মেয়াদে আক্রান্ত থাকার কারণে এসব রোগীরা অনেকেই লিভার ক্যাসার ও পরে লিভার ফেইল্যুর বা বিকল লিভারজনিত সমস্যায় ভোগেন এবং মৃত্যুবরণ করে থাকেন।
হেপাটাইটিস-বি প্রতিরোধের জন্য কার্যকর ভ্যাকসিন থাকলেও হেপাটাইটিস-সি প্রতিরোধে কোনো কার্যকর ভ্যাকসিন এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। ব্যক্তিগত প্রতিরোধই হেপাটাইটিস-সি ভাইরাস প্রতিরোধের একমাত্র উপায়। এ দুটি হেপাটাইটিস ভাইরাসকে নীরব ঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করে এর প্রতিরোধের লক্ষ্যে গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্য লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের উদ্যোগে পর্যায়ক্রমে দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসুচি গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ২০০৭ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকায় তথা দেশে প্রথমবারের মতো বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস পালনের পর ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ তারিখে সিলেটে প্রথমবারের মতো উদযাপন করল-‘সিলেট হেপাটাইটিস দিবস’। এই দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘লিভারকে জানুন এবং ভালো রাখুন’।
লিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর এস এন সামাদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সিলেট এম সাইফুর রহমান অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ‘সিলেট হেপাটাইটিস দিবস’ এর উদ্বোধনী সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে লিভার রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। লিভার রোগের অন্যতম হচ্ছে হেপাটাইটিস বা লিভারের প্রদাহ। সচেতনতার মাধ্যমে এ হেপাটাইটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। তিনি ঢাকা ও সিলেটের পাশাপাশি ক্রমান্বয়ে লিভার ফাউন্ডেশনের কার্যক্রমকে তৃণমুল পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানান।
সেমিনারের মুল বক্তব্য উপস্হাপন করেন লিভার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি জেনারেল প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ আলী। তিনি তার বক্তব্যে বাংলাদেশে লিভার রোগের ব্যাপকতা, হেপাটাইটিসের প্রকোপ ও লিভার রোগ প্রতিরোধে লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের কার্যক্রম সম্পর্কে বিশদভাবে আলোকপাত করেন। তিনি সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে লিভার ফাউন্ডেশনের জনকল্যাণমুলক কাজে সহযোগিতা প্রদানের অনুরোধ জানান।
সেমিনারে বক্তারা বলেন প্রতিটি গর্ভবতী মায়ের হেপাটাইটিস-বি পরীক্ষা করে নেয়া উচিত। কারণ নবজাতকের এই ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। গর্ভবতী মায়ের হেপাটাইটিস-বি পজিটিভ হলে ঐইবঅম এন্টিজেন টেস্ট করতে হবে এবং নবজাতককে হেপাটাইটিস-বি ইমিউনোগ্লোবিউলিন ও ভ্যাকসিন দিতে হবে। তাহলে মা থেকে নবজাতকের শরীরে এই হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস সংক্রমণ বন্ধ করা যাবে। হেপাটাইটিস-সির জন্য কোনো প্রতিষেধক ভ্যাকসিন নেই। তাই এক্ষেত্রে সর্বাত্মক ব্যক্তিগত প্রতিরোধ ব্যবস্হা গ্রহণ করতে হবে।
——————–
ডা. কাজী মাহবুবা আখতার শিমুল
আমার দেশ, ১৮ মার্চ ২০০৮
Leave a Reply