যক্ষ্মা শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা পৃথিবীর দরিদ্র দেশগুলোর অন্যতম জনস্বাস্হ্য সমস্যা। এইচআইভি/ এইডসের দ্রুত বিস্তারের ফলে যক্ষ্মা প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশ্বের ৬০০ কোটি মানুষের এক-তৃতীয়াংশ ২০০ কোটি মানুষ যক্ষ্মা জীবাণু সংক্রমিত। তবে এর অর্থ এই নয় যে তারা সবাই যক্ষ্মা আক্রান্ত। সংক্রমিতদের অনেকের মধ্যেই যক্ষ্মার জীবাণু সুপ্ত অবস্হায় আছে। কোনো না কোনোভাবে এদের শরীরে এইচআইভি প্রবেশ করলে তারা যক্ষ্মা আক্রান্ত হবে।
যক্ষ্মা উন্নয়নশীল বাংলাদেশেরও অন্যতম জনস্বাস্হ্য সমস্যা এবং দ্বিতীয় ঘাতক ব্যাধি। দেশের ১৪ কোটি মানুষের অর্ধেকেরও বেশি যক্ষ্মা জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত। আবার এদের মধ্য থেকে প্রতিবছর ৩ লাখেরও বেশি মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়। আক্রান্তদের অর্ধেকই সংক্রামক রোগী যারা প্রতিনিয়ত যক্ষ্মা জীবাণু ছড়িয়ে অন্যদের সংক্রমিত করে। চিকিৎসার আওতাভুক্ত নয় এমন প্রত্যেক সংক্রামক রোগী থেকে বছরে ১০ থেকে ১৫ জন সুস্হ মানুষের শরীরে যক্ষ্মা জীবাণু প্রবেশ করে। বিশ্বের যক্ষ্মাক্রান্ত ভয়াবহ ২৩টি দেশের তালিকায় ৬ নম্বরে বাংলাদেশ। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসুচির আওতায় বাংলাদেশে ১৯৯৩ সালে প্রথম ডটস পদ্ধতিতে যক্ষ্মার চিকিৎসা শুরু হয়। আক্রান্ত যক্ষ্মা রোগীদের শতকরা ৭০ ভাগকে চিকিৎসার আওতায় এনে তাদের শতকরা ৮৫ ভাগকে রোগমুক্ত করার মাধ্যমে যক্ষ্মা রোগের সংক্রমণ হার কমিয়ে আনাই এই কর্মসুচির লক্ষ্য। এই লক্ষ্য অর্জন ব্যতীত যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। ব্র্যাকসহ বেশ কয়েকটি দেশি ও বিদেশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কাজে সম্পৃক্ত রয়েছে। শুরু থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত এই কর্মসুচি প্রত্যেকটি উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় শহরে সম্প্রসারিত হওয়ায় বর্তমানে দেশের শতকরা ৯৯ ভাগ জনসংখ্যাকে ডটস পদ্ধতির আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসুচির একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য দিক হলো, এই কর্মসুচির আওতায় রোগীদের কফ পরীক্ষা এবং সমুদয় ওষুধ বিনামুল্যে দেয়া হয়। ২০০৫ সালে আক্রান্ত রোগীদের শতকরা ৬০ ভাগকে চিকিৎসার আওতায় আনা সম্ভব হয়, তাদের শতকরা ৮৫ ভাগের চিকিৎসা সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়। যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এ এক মাইলফলক। কিন্তু এত সাফল্য অর্জনের পরও জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসুচি এখনো নির্ধারিত ৭০ শতাংশ রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনতে পারেনি। অবাক হতে হয়, গ্রামের তুলনায় শহরাঞ্চলে রোগীদের চিকিৎসার আওতায় আনার হার অনেক কম।
বিশ্ব স্বাস্হ্য সংস্হা পরিচালিত বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে জানা যায়, যক্ষ্মা রোগ চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রাইভেট প্রাকটিশনারদের বিরাট ভুমিকা রয়েছে। আনুমানিক ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ যক্ষ্মা রোগী রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য প্রথমে প্রাইভেট প্রাকটিশনারদের স্মরণাপন্ন হন। যেহেতু প্রাইভেট সেক্টরে রোগী নিবন্ধনের কোনো ব্যবস্হা নেই সেজন্য তারা কতজন রোগীর চিকিৎসা করছেন এবং তাদের মধ্যে কতজন চিকিৎসা সম্পন্ন করেন সেসব তথ্য অজানা থেকে যায়। বাংলাদেশে যক্ষ্মা রোগী শনাক্তকরণে নিম্নহারের এটা প্রধান কারণ। সুতরাং যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসায় নিয়োজিত বিপুল সংখ্যক প্রাইভেট প্রাকটিশনারকে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসুচিতে সম্পৃক্ত করা না গেলে একদিকে যেমন রোগী শনাক্তকরণের হার বৃদ্ধি পাবে না, অন্যদিকে মাল্টিড্রা রেসিসটেস টিবি রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। কারণ প্রাইভেট সেক্টরে রোগী নিবন্ধন এবং ফলোআপের তেমন কোনো ব্যবস্হা নেই। তাই যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধগুলো কোনোভাবে কার্যকারিতা হারালে দেশ এক ভয়াবহ সংকটের সম্মুখীন হবে। আজকাল যেখানে প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্হায় ৬ থেকে ৮ মাসে একজন যক্ষ্মা রোগীর চিকিৎসায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার ওষুধ লাগে, সেখানে একজন মাল্টিড্রাগ রেসিসটেস টিভি রোগীর চিকিৎসায় ব্যয় হবে এক লাখ টাকার ওপরে, যা আমাদের মতো দেশের রোগীদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করবে। এছাড়া মাল্টিড্রাগ রেসিসটেস টিভি রোগীদের নির্ধারিত হাসপাতালে কঠোর নিয়মের মধ্যে চিকিৎসা দিতে হবে। এত বেশি সংখ্যক রোগীকে হাসাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়ার মতো বিছানাও আমাদের নেই। বর্তমানে বাংলাদেশে শতকরা প্রায় ২ শতাংশ মাল্টিড্রাগ রেসিসটেস টিভি রোগী। এ অবস্হায় প্রাইভেট সেক্টরকে রেকর্ডিং ও রিপোর্টিং ব্যবস্হার আওতায় আনা না গেলে মাল্টিড্রাগ রেসিসটেস টিভি রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং দেশে এক ভয়াবহ অবস্হার সৃষ্টি হবে। এ ধরনের পরিস্হিতি কারোই কাম্য হতে পারে না। সুতরাং দেশকে এই অবস্হা থেকে বাঁচাতে হলে দেশের সব প্রাইভেট প্র্যাকটিশনারকে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসুচিতে সম্পৃক্ত করা অপরিহার্য। আবার যোগ্য প্রাইভেট প্র্যাকটিশনারদের শতকরা ৯০ ভাগই শহরে থাকেন বলে এই কর্মসুচি শহরে সম্প্রসারণ বেশি জরুরি।
——————————–
ডা. এ কে এম ডি আহসান আলী
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতাল (এআইডিসিএইচ) এবং যক্ষ্মা ও কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ সার্ভিসেসের সাবেক পরিচালক; সদস্য, বোর্ড অব ডিরেক্টরস, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন এগেইনষ্ট টিউবারকুলোসিস অ্যান্ড ল্যাংক ডিজিজেস (আইইউএটিএলডি); মুখ্য সংগঠক, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ পাইলট প্রোজেক্ট (পিপিপিপিপি) এবং চেয়ারম্যান, কমিউনিটি পার্টিসিপেশন ফর হেলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিএইচডি)
আমার দেশ, ১৮ মার্চ ২০০৮
অামার ৬ মাস অাগে রোগটা ভালাে হয় কন্তিু মাঝ েমাঝ েপঠি েফুসফুসরে বরাবর ব্যাথা হয়। ঠান্ডা লাগল েব্যাথা বুঝা যায়। এখন ক িকরনীয়?
রোগ ভালো হয়েও অনেক সময় আসলে হয় না। তাই পরবর্তী সময় নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকতে হয়। আপনি আবার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
স্যার
আমার বাবার কুষ্ঠ রোগ আছে। গোটা গায়ে অনেক লাল দাগ অনেক জায়গায় গুটি বেরিয়েছে।হাত পায়ে গিরায় ব্যথা করে । পা ফুলে যায় । গায়ে জ্বর আসে ।শরীল দূবল হয়ে যায় ।হাসপাতালের ঔষধ ১বছর থাই কিন্তু কোন লাভ হয় নি|হাসপাতাল থেকে cortan নামে ঔষধ দেই ।ঔষধ থাওয়া শেষ হয়ে গেলে আবার অসুস্থ হয়ে পরে ।হাসপাতাল থেকে বলে শরীলে জীবানু অনেক বেশী ।আমার বাবার রোগ কী কখন ভাল হবে না । আমি আর আমার বাবার দিকে তাকাতে পারি না ।আমি আমার বাবাকে খুব ভালবাসি । দয়াকরে তারাতরি উওর দিলে ভাল হতো ।
কুষ্ট রোগ নিয়ে আলাদা একটা পোস্ট দেয়া হয়েছে।
আমার পেটে যক্ষা ধরা পরে। আমি যক্ষার ঔষদ খাই ৪ মাস হয়েছে। আমি বিবাহিত , বর্তমানে কি সেক্স করতে পারব বা কোন সমস্যা হবে কি আর সেক্স করলে আমার স্ত্রি কি এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে?। এ অবস্তায় কি করা যাবে বা কিভাবে সেক্স করা নিরাপদ
আপনার যক্ষার ধরণ ছোঁয়াচে কি না, সেটা ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নেবেন। ছোঁয়াচে হলে অন্যদের থেকে দূরে থাকতে হবে। অন্যদের সামনে হাঁচি-কাশি দেয়া যাবে না। এছাড়া নিজের জিনিসপত্র আলাদা রাখতে হবে। অন্যরা আপনার কাছে এলে নাকে-মুখে রুমাল বা মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। তবে এতে ভয়ের কিছু নেই। বর্তমানে এ রোগ চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। আপনারটা ছোঁয়াচে হলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত সহবাস না করাই ভালো।