প্রথম আলো গোলটেবিল বৈঠক
ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে অগ্রগতি ও করণীয়
১৭ সেপ্টেম্বর ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে অগ্রগতি ও করণীয়বিষয়ে স্বাস্থ্যকুশলের উদ্যোগে গোলটেবিলবৈঠকের আয়োজন করা হয়। ব্র্যাক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সহযোগিতায় আয়োজিত সেই গোলটেবিল বৈঠকের আলোচনার সারসংক্ষেপ নিয়েই এবারের স্বাস্থ্যকুশল।
যাঁরা অংশ নিলেন
মুহম্মদ হুমায়ূন কবির
সচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়
অধ্যাপক এম এ ফয়েজ
সাবেক মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ
পরিচালক, (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ও লাইন ডাইরেক্টর (সিডিসি), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়
ডা. এ মান্নান বাঙ্গালী
এনপিও, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
অধ্যাপক মো. রিদোয়ানুর রহমান
বিভাগীয় প্রধান, মেডিসিন বিভাগ
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
ডা. রাশিদুল হক
সায়েন্টিস্ট অ্যান্ড হেড, প্যারাসাইটোলজি বিভাগ
আইসিডিডিআরবি, মহাখালী, ঢাকা
ডা. মো. জহিরুল করিম
ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি, স্বাস্থ্যঅধিদপ্তর
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিরউদ্দিন
প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, ঢাকা সিটি করপোরেশন, ঢাকা
ফারুক আহমেদ
পরিচালক, ব্র্যাক স্বাস্থ্যকর্মসূচি
শীপা হাফিজা
পরিচালক, জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি, ব্র্যাক
শহীদ উদ্দিন মাহমুদ
পরিচালক, ভলান্টারি অ্যাসোসিয়েশন ফর রুরাল ডেভেলপমেন্ট (ভার্ড)
জেসমিন প্রেমা
চেয়ারম্যান, সমাজকল্যাণ উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস)
ড. মো. আকরামুল ইসলাম
প্রোগ্রাম হেড, ব্র্যাক স্বাস্থ্যকর্মসূচি
ডা. মোকতাদির কবীর
প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ব্র্যাক স্বাস্থ্য কর্মসূচি
ডা. সামসুন্নাহার
সিনিয়র সেক্টর স্পেশালিস্ট, ব্র্যাক স্বাস্থ্য কর্মসূচি
সঞ্চালক
আব্দুলকাইয়ুম
যুগ্ম সম্পাদক, প্রথম আলো।
ডা. ইকবাল কবীর
সহকারী অধ্যাপক, নিপসম,
বিভাগীয়সম্পাদক, স্বাস্থ্যকুশল, প্রথম আলো।
আব্দুল কাইয়ুম
ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে নানা কর্মসূচি চলছে। সে ক্ষেত্রে কার কী করণীয়, কী করলে সবাইকে সচেতন করা যাবে, নিজেরাও সচেতন হওয়া যাবে সে সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করাই আজকের আলোচনার মূল উদ্দেশ্য। ছোটবেলায় ১৫ দিন পরপর ম্যলেরিয়া রোগের প্রতিরোধক হিসেবে কুইনাইন সেবন করতাম। যার স্বাদ ছিল তিতা। আজ এত বছর পরও ঢাকার যেকোনো বাসায় মশারি ও স্প্রে ছাড়া মনে ভয় থেকে যায়। কেননা মাত্র কয়েক দিন আগেও ঢাকায় একজন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। যদিও বর্তমানে ঢাকায় ম্যালেরিয়ার আশঙ্কা অনেক কম। বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে ষাট-সত্তর বছর ধরে। এরপরও আমাদের অনেক করণীয় আছে। ম্যালেরিয়া রোগ শনাক্তকরণ সহজলভ্য করতে পারলে সফলতার হার বাড়বে। ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে আধুনিক প্রযুক্তি বিদ্যার ব্যবহার এবং পরিবেশবান্ধব কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না আলোচনার মাধ্যমে তা বেরিয়ে আসবে বলেআশা করছি। ব্র্যাকের সামসুন্নাহারকে এ বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা করার জন্য অনুরোধ করছি।
সামসুন্নাহার
ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকায় বসবাসরত জনগোষ্ঠীর ম্যালেরিয়া ও ম্যালেরিয়া সেবা সম্বন্ধে ধারণা আছে প্রায় ৫৩%, গর্ভবতী মহিলা মশারির ভেতর ঘুমিয়েছে এমন খানা (বাড়ি) ৮৭%। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মশারির ভেতর ঘুমিয়েছে এমন খানা ৮৯%, ম্যালেরিয়া রোগের সেবা পাওয়ার সন্তুষ্টির হার ৮৬%। ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকে। জনগণের কাছে ম্যালেরিয়ার বার্তা পৌঁছে দেওয়া, ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের ওপর প্রতিবেদন প্রকাশ করা, কার্যক্রমের সাফল্য ও ব্যর্থতা তুলে ধরে এর অগ্রযাত্রায় সহায়তা করা গণমাধ্যমের কাছে প্রতাশ্যা।
ইকবাল কবীর
সরকারের পক্ষে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ উপকর্মসূচি ব্যবস্থাপক মো. জহিরুল করিম এবারে বলবেন।
মো. জহিরুল করিম
ষাটের দশকে স্প্রে করে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণের কর্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৭ সালে প্রোগ্রামটা প্রাইমারি হেলথ কেয়ারের তত্ত্বাবধানে চলে যায়। ২০০৬ সাল পর্যন্ত গ্লোবাল ফান্ড সাপোর্টেড কোনো প্রোগ্রাম ছিল না। ২০০৭ সালে সরকারের সঙ্গে গ্লোবাল ফান্ডের সহযোগিতা পায়। সাধারণত নিবন্ধন ছাড়া কোনো ডাক্তার বা নার্স রোগ নির্ণয়করতে পারেন না। কিন্তু ম্যালেরিয়া রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য কর্মীদের হাতে-কলমে শিক্ষা দিয়ে তাদের কাছে র্যাপিড ডায়াগনস্টিক টেস্ট (আরডিটি) ও ওষুধ প্রদান করে মাঠ পর্যায়ে কাজ করার জন্য সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে বর্তমানে আমাদের দেশে একজন ম্যালেরিয়া রোগীকে দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। তাই মৃত্যুর হারও অনেক কমে এসেছে। তবে ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ার হার বেড়ে গেছে, যা প্রায় ৯৩ শতাংশ। সারা বিশ্বে মনো ড্রাগ থেরাপি বন্ধ হয়ে একটি কম্বিনেশন বা মিশ্র ড্রাগ থেরাপি দেওয়া হচ্ছে। এই ড্রাগ সংযুক্তির খরচ অনেক বেশি। একটি কোর্স করতে প্রায় ৬০০ টাকা লাগে। ভাইভেক্স ম্যালেরিয়া এখনো ক্লোরোকুইন সংবেদনশীল। যা ১০ টাকা দামের ট্যাবলেট সেবন করলে ভালো হয়ে যায়। ম্যালেরিয়া হলে অবশ্যই সুনির্দিষ্ট ওষুধ সেবন করতে হবে।
আমাদের একটি নিয়মিত ম্যালেরিয়া নিরীক্ষণ কার্যক্রম হাতে নেওয়া উচিত যেখানে তথ্য-উপাত্তের মধ্যে রোগীর নাম, বয়স, রোগী কোন জেলার, কোন উপজেলার, কোন গ্রামের বাসিন্দা তা উল্লেখ থাকবে। এনজিওর সহযোগিতা ছাড়া এটা সম্ভব নয়। পরবর্তী সময়ে এ তথ্যের ভিত্তিতে রোগীকে সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে। সচেতনতা বাড়ানোর জন্য টিভি, রেডিওতে আমাদের প্রচারণা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। কিছুদিন আগে ঢাকা শহরে ম্যালেরিয়া সংক্রমণে একজনের মৃত্যু হয়। পরিদর্শক দল সেখানে গিয়ে সার্ভে করে কোনো ভেক্টর পায়নি। জানা গেছে ছয় মাস আগে রোগী ব্যাংকক সফর করেছিলেন। রোগীর কোনো মাইক্রোস্কপিক রেজাল্ট পজেটিভ ছিল না। শুধু আরডিটি পজিটিভ ছিল। এ জন্য ম্যালেরিয়া রোগ নির্ণয়ে চিকিৎসকদের আরও সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে। গ্লোবাল ফান্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক নিয়মকানুন মানতে হয়। তাই আমাদের সরকারি অর্থায়নের ওপর নির্ভরশীল থাকতেই হবে।
আকরামুল ইসলাম
২০০৫-০৬ সালে প্রাথমিক পর্যায়ে ম্যালেরিয়া-বিষয়ক খুব বেশি তথ্য ছিল না। তবুও তার ভিত্তিতেই কার্যক্রম চালানো হয়। কিন্তু ২০০৭ থেকে বর্তমান পর্যন্ত এই চার বছরে বেশ ভালো তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। বেশ কিছু সফল গবেষণাও সম্পন্ন হয়েছে। তবে তাতে যে আংশিক ব্যর্থতা নাই তা বলা যাবে না।
ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট প্যাটার্ন অবশ্যই দেখা উচিত।
একজনের দেহ থেকে অন্যের দেহে বা এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে ম্যালেরিয়া জীবাণু ছড়িয়ে যাওয়ার প্রকোপ দমন করতে না পারলে রোগাক্রান্ত লোকের সংখ্যা কমবে না। সে ক্ষেত্রেও আমাদের গবেষণামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। মানুষের আচরণ কেমন, ম্যালেরিয়া সম্পর্কিত জ্ঞান আছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে।
পরিকল্পনা মাফিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙামাটি—এসব ম্যলেরিয়া-প্রবণ অঞ্চলগুলোতে জোর প্রয়াস চালানো যেতে পারে।
সরকারি পর্যায় থেকে রিসোর্সগুলোর গতি বাড়াতে হবে, হিউম্যান রিসোর্স থেকে ম্যাটেরিয়াল পর্যন্ত। এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা লাগবে। পর্যটন অঞ্চলে সফরকারীরা যেন সঠিক বার্তা পায় এবং ওইসব অঞ্চলে সফরে অনাগ্রহ না দেখায়। এ ব্যাপারে গণমাধ্যম জোরালো ভূমিকা পালন করবে। তাদের কাছে সঠিক বার্তা পৌঁছাবে।
ইকবাল কবীর
এবার গবেষণার দিকে নজর দেওয়া যাক। ম্যালেরিয়া রিসার্চগ্রুপের সদস্য রিদোয়ানুর রহমান এবারে বলবেন।
রিদোয়ানুর রহমান
ম্যালেরিয়া দমনে বর্তমানে বাংলাদেশ সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে। আন্তর্জাতিক তহবিল যখন থাকবে না তখন আমরা কীভাবে পরিবর্তন আনব তা চিন্তা করতে হবে।
আন্তর্জাতিক তহবিলের সমান অর্থ কোনোভাবেই সরকার প্রদান করবে না, তাই কম খরচে কীভাবে একই মানের কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
যখন ম্যালেরিয়ার প্রকোপ কমে যায় তখন মৃত্যুর হার বেড়ে যায়। কারণ মানুষের সচেতনতা ঢিলেঢালা হয়ে যায়। যারাই ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয় সময় মতো সঠিক চিকিৎসার অভাবে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়ে তাদের মধ্যে মৃত্যুর হার বেড়ে যায়। সুতরাং পরিকল্পনা এখন থেকেই করতে হবে, কারণ ২০১৫ সাল খুব বেশি দূরে নয়। কীভাবে আমরা পরিবর্তন আনব তা উল্লেখ করে পরিকল্পনার জন্য আমরা একটা তহবিল চাইতে পারি।
আমাদের সার্ভিলেন্স প্রক্রিয়া অনেক অর্থ ব্যয়ের পরও দুর্বল রয়ে গেছে। সরকারি তথ্য ছাড়া বেসরকারি খাত থেকে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। ঠিক তেমন দেশের বড় বড় মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকেও প্রতিবেদনেরও অভাব আছে।
আমাদের নিজস্ব যথেষ্ট এভিডেন্স নেই। দেশের যে প্রধান ভেক্টর এনোফিলিস মশা তা দেয়ালে বসে না। জঙ্গল থেকে উড়ে এসে মানুষকে কামড় দিয়ে রক্ত খেয়ে আবার জঙ্গলে ফিরে যায়। দেয়ালে স্প্রে করেও মশাগুলোকে মারা সম্ভব নয়। এই মশাগুলো সাধারণত সন্ধ্যার সময় কামড়ায়।
যার ফলে শিশুদের এবং গর্ভবতী মায়েদের ওই সময়ে যদি মশারির ব্যবহার করাতে না পারি তাহলে মানুষ এবং ভেক্টরের মধ্যে যোগাযোগ আমরা কমাতে পারব না।
রাশিদুল হক
আইসিডিডিআর’বি ম্যালেরিয়া কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অতি নিকটতম অতীতে, যার ফলে তাদের অভিজ্ঞতাও খুব বেশি নয়। ২০০১ সালে ম্যালেরিয়া বিষয় সংযুক্ত হয় আইসিডিডিআর’বির কার্যক্রমে। ২০০৭ সালে গ্লোবাল ফান্ডের সহযোগিতায় ব্র্যাকের সঙ্গে আইসিডিডিআর’বি প্রথম ১৩টি জেলায় একটি সার্ভে করেছিল। ওই সার্ভে অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি ম্যালেরিয়াপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে খাগড়াছড়ি জেলাকে চিহ্নিত করা হয়। আমাদের জেলাভিত্তিক ছক দরকার। বর্তমানে আমরা একটি অ্যাকটিভ সারভাইলেন্স করছি বান্দরবান জেলার দুটি উপজেলায়। এ ধরনের সারভাইলেন্স অন্যান্য জেলাতেও করা উচিত, যা আমাদের ম্যালেরিয়াবিষয়ক তথ্যগুলোতে সমৃদ্ধ করবে।
শীপা হাফিজা
ম্যালেরিয়া শুধু একটি স্বাস্থ্যগত সমস্যা নয়, এটি একটি সামাজিক সমস্যা এবং মানসিক সমস্যাও বটে। এটা আসলে গরিব মানুষের অসুস্থতা। অনেকে এ জন্য অসুস্থ হলেও বলতে চান না। মনে করেন যে এটা বলা ঠিক হবে না যে আমাকে মশা কামড় দিয়েছে। এটা তো কেবল লজ্জার ব্যাপার। কিন্তু অসুস্থতা যেকোনো ব্যক্তির হতে পারে। ফলে এটা খুব সামাজিক এবং মানসিক-সংক্রান্ত রোগও বটে।
এরপর থেকেই আমরা অ্যাডভোকেসির প্রতি গুরুত্বারোপ করি এবং এটা এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে যেন কোন সময়ে কোন পদক্ষেপ নিতে হবে তা সবার জানা থাকে।
নারীদের ম্যালেরিয়া কম পুরুষদের তুলনায় এমন তথ্য উঠে আসছে নানা পরিসংখ্যান থেকে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে নারীরা কি অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও তা প্রকাশ করছে না কিংবা প্রকৃতপক্ষেই তারা ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন না তা খতিয়ে দেখতে হবে।
পর্যটন এলাকায় আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ীরা ব্যবসায়িক স্বার্থে কোনো সফরকারীকেই হয়তো এ তথ্য দেবেন না যে এখানে তাদের ম্যালেরিয়া আক্রমণ করতে পারে, তবে কীভাবে এ ধরনের সাবধানতার বার্তা তাদের কাছে উপস্থাপন করলে তারা সতর্ক অবস্থান নেবে এবং পর্যটনবিমুখ হবে না তা ভাবতে হবে।
ইকবাল কবীর
এবারে এনজিও প্রতিনিধিদের কথা শুনব।
শহীদ উদ্দিন মাহমুদ
মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজ নিজ এলাকায় কাজ করে যাচ্ছে। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সুতরাং ওই প্রশিক্ষিত মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হলে আমরা সফল হব।
ম্যালেরিয়া রোগসংক্রান্ত নানা ছবি, পোস্টার, লিফলেট এগুলোও সবার বোধগম্য নয়, তাই বার্তাগুলো কীভাবে সবার বোধগম্য করা যায় সে বিষয়ে আরও গবেষণা করা প্রয়োজন।
স্থানীয় পর্যায়ে কর্মরত সংগঠনগুলো অনেক ধরনের কর্মসূচি পালন করে থাকে, তাদেরও এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির হার বাড়াতে পারি।
জেসমিন প্রেমা
২১টি এনজিও টিম ম্যালেরিয়া কার্যক্রম বাস্তবায়নের কাজ করছে এবং তারা অনেকাংশে সফল বলে দাবি করে, কিন্তু সে তুলনায় মিডিয়ায় এ বিষয়গুলো সম্পর্কে তেমন কোনো প্রচারণা নেই।
আমাদের দেশে যাঁরা পর্যটক হিসেবে আসেন বিমানবন্দরেই তাঁদের কাছে এ ধরনের বার্তাগুলো পৌঁছে দেওয়া যায় কি না তা ভেবে দেখা দরকার।
মো. নাসির উদ্দিন
একসময় ম্যালেরিয়ার ভয়ে কেউ পার্বত্য অঞ্চলে যেতে চাইত না। গবেষণা ও উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য পাবলিক প্রকল্প সেনাবাহিনীর কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিতে পারে। শুধু আমাদের দেশের নয়, আফ্রিকাতেও ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া বেশি।
অ্যাডভোকেসি খুব প্রয়োজন সেই সঙ্গে মনিটরিং জোরদার করতে হবে।
বে-নজির আহমেদ
১৯৯০ সালে সর্বাধিক ম্যালেরিয়া রিপোর্টেড হয় এক লাখ ২১ হাজারের মতো। ২০০৮ সালে জিএফএটিএমের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চালু হয় তখন ৮০ হাজারের ওপরে ম্যালেরিয়া রিপোর্টেড করতে পেরেছি, এবারে জুন পর্যন্ত ২১ হাজারের মতো রিপোর্ট এসেছে যা গত বছরের থেকে কম হবে। পাশাপাশি মৃত্যুর কথা বললে গড়ে প্রায় ৫০০ জনের মৃত্যু হতো। গত কয়েক বছরে আনুপাতিকহারে কমছে ৫৭-৪৮, ৩৭। ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ার কারণেই সাধারণত মৃত্যু হয়।
হালুয়াঘাটে একটি গ্রামে মানুষের বাড়িঘরের আশপাশে প্রায় ২৫০টি ডোবা পুকুর রয়েছে। ফলে এখানে জন্মানো মশা সহজেই ঘরে এসে মানুষকে কামড় দিতে পারবে। সেখানে স্থানীয়জনসাধারণ সম্মিলিতভাবে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে সফল করেছে।
কিন্তু পার্বত্য অঞ্চলে এটা বাস্তবায়ন করা কঠিন দুর্গম এলাকার জন্য।
ম্যালেরিয়াপ্রবণ ১৩টি জেলাই সীমান্ত অঞ্চলে, তাই পাশাপাশি দুটি প্রতিবেশী দেশেই কার্যক্রম পরিচালনা না করলে সফলতা সম্ভব নয়। স্বাস্থ্য বিভাগ কার্যক্রমটা নিজের দায়িত্ব হিসেবে নিচ্ছে না। অনেকেই মনে করছে, এটা ব্র্যাকের কাজ, এনজিওদের কাজ—এটা কর্মসূচি বাস্তবায়নে একটা বড় ঝুঁকি।
এ মান্নান বাঙ্গালী
১৯৯৪ সালে কুমিল্লার বার্ডে এক সভায় ড্রাগ রেজিমেন পরিবর্তন করার কথা বলা হয় কিন্তু পরবর্তী চার বছর সময় লেগে যায় এই পরিবর্তন আনতে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর ডিডিটি এবং ক্লোরোকুইন এসেছিল বলে সবাইকে ইরাডিকেশনে যাওয়ার পরামর্শ প্রদান করা হয়। অনেকগুলো দেশ খুবই সফলতা অর্জন করে কিন্তু কিছু দেশ প্রাথমিক পর্যায়ে ভালো ফল পায়নি। ভেক্টর দমন করতে পারেনি বলে যেমনটি আমরাও করতে পারিনি।
গ্লোবাল ফান্ডের আওতায় গিয়ে রাউন্ড-২ থেকে রাউন্ড-৫-এ তেমন কোনো সফলতা আসেনি। পরবর্তী সময়ে ৬৪ জেলা বাদ দিয়ে শুধু ১৩টি জেলার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। কেননা ওই ১৩টি জেলার রোগীর সংখ্যা ৯৮%। ৬৪ জেলা পরিসংখ্যান বিবেচনা করলে আমাদের অবস্থান অনেক নিচে নেমে যায়। যার ফলে গ্লোবাল ফান্ডের সহযোগিতা পাওয়া হয়তো সম্ভব হতো না। এর ফলে শুধু ১৩টি জেলার জোর কার্যক্রম পরিচালনা করে ওই অঞ্চলের শতকরা ৯৮ ভাগের ৮০ শতাংশ দমনের চেষ্টা করব তাহলে অনেকটা সফলতা আসবে। ব্র্যাকের নেতৃত্বে ২১টি এনজিও নিয়ে একটি এনজিও কনসোর্টিয়াম গঠন করা হয়েছিল ফলে আজকের এই সফলতা।
বর্তমানে ১১ হাজারেরও বেশি প্রশিক্ষিত সেবাকর্মী আছে যারা প্রতিনিয়ত সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। এমন একটা সুন্দর অবস্থান বর্তমানে পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই। এনোফিলিস মশা চার রকম অঞ্চলে ম্যালেরিয়া ছড়ায় ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে। চেন্নাই শহরে ৫০% ম্যালেরিয়া আছে। সেখানে এনোফিলিস স্টিফেনসাই নামক মশা এই রোগের বাহক হিসেবে কাজ করছে, যেটা শহর অঞ্চলে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব ঘটায়। কাজেই আমাদেরও শহর অঞ্চলে এ মশার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
মোকতাদির কবীর
স্থানীয় পর্যায়ে লোকজ গান, নাটক এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনসমাজকে উদ্বুদ্ধকরণ করার কোনো বিকল্প নেই। সব চিকিৎসকদের একযোগে দেশের ম্যালেরিয়া চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য স্ট্যান্ডার্ড ড্রাগ রেজিমেন মেনে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ঐকমত্য হওয়া প্রয়োজন।
ইকবাল কবীর
সাধারণভাবেই একটি প্রশ্ন এসে যায় কীভাবে দেশের সব চিকিৎসককে এ বিষয়েসচেতন করা যায়।
জহিরুল করিম
গত বছরে ১৩টি জেলার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর চিকিৎসকদের কিছু প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
ইকবাল কবীর
গ্লোবাল ফান্ডের আওতায়ও এটা করা সম্ভব। কারণ তারা শুধু ১৩টি জেলায় কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য কাজ করতে বলবে না।
আকরামুল ইসলাম
মেকিডেল কলেজগুলোতে যদি এটা ফোকাস করা যায় তাহলে নবীন সব চিকিৎসককে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা সম্ভব হবে। পরবর্তী প্রোগ্রামে এ উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
বে-নজির আহমেদ
ম্যালেরিয়ার গাইডলাইনটা আমাদের ওয়েবসাইট থেকে চিকিৎসকেরা পেতে পারেন যেখানে প্রতিনিয়ত হালনাগাদগুলো সহজেই দেওয়া সম্ভব। কেননা দেশজুড়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া সব সময় সম্ভব হয় না, সে ক্ষেত্রে খরচের একটা ব্যাপার আছে। মেডিকেল কলেজগুলোতে সেমিনার করা যেতে পারে, যেখানে ছাত্র চিকিৎসক ও সবাই অংশগ্রহণ করবে।
ইকবাল কবীর
আমাদের সবগুলো উপজেলায় যদি একটি করে তথ্যবহুল শিট পৌঁছে দেওয়া যায় সেখানে তারা তাদের কাজের টেবিলে ঝুলিয়ে রাখবে এবং প্রত্যেকে তাদের তত্ত্বাবধানে থাকা চিকিৎসকদের ওই ড্রাগ রেজিমেন্ট সম্পর্কে ধারণা দেবে।
ফারুক আহমেদ
আজকে আমরা যে পর্যায়ে এসেছি তার মূল কৃতিত্বের অধিকারী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আমরা সহযোগী সংগঠন হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি।
ম্যালেরিয়া সংক্রমণ সীমাবদ্ধ রাখা ও স্বাস্থ্যশিক্ষার মূল দায়িত্ব সরকারের। সরকার উপায় বের করে দেবে ও অর্থায়ন করবে। সবার সম্পৃক্ততার মাধ্যমে জাতীয় আয়োজন পরিচালনা করতে হবে।
এখানে যাঁরা আছেন সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ। সবাই মিলে তিন দিনের জন্য ঢাকার বাইরে একসঙ্গে বসে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে প্রতিবেদন আকারে আমরা সরকারের কাছে পেশ করতে পারি, পেশ করতে পারি গ্লোবাল ফান্ডের কাছে। অবশ্যই তা তথ্য ও উপাত্তের ভিত্তিতে হতে হবে।
কীভাবে আমরা সবচেয়ে ফলপ্রসূ ম্যালেরিয়া কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারব কোন সুযোগকে মুখ্য করে অগ্রগতি বাড়ানো যাবে উপাত্তের পর্যালোচনা করে তা নির্ণয় করতে হবে।
মাটিরাঙ্গা উপজেলায় প্রথম সাধারণ মশারি কীটনাশকে চুবিয়ে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম শুরু হয়। সরকারের আস্থা অনুযায়ী আমরা সফল হয়েছিলাম। এ প্রক্রিয়া সব উপজেলার বাস্তবায়নে প্রায় এক বছর সময় লেগেছিল কিন্তু তা আমাদের বড় ধরনের সফলতার একটি। সর্বক্ষেত্রে আমাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বৃদ্ধি পেয়েছিল। কোথায় কোথায় আমাদের দুর্বলতা আছে তা খতিয়ে দেখে পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
ইকবাল কবীর
দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে এবারে বলবেন এম এ ফয়েজ।
এম এ ফয়েজ
গত দশকে ম্যালেরিয়া রোগ নির্ণয় ও নিয়ন্ত্রণে যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে যার ছোঁয়া বাংলাদেশেও লেগেছে। এর অন্য কারণ হিসেবে সরকারের সুনির্দিষ্ট ক্রমিক পরিকল্পনা ও লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে গ্লোবাল ফান্ড থেকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উল্লেখযোগ্য একটি তহবিল পাওয়ার কারণে এ দেশেও ম্যালেরিয়া পরিস্থিতিতে উন্নতির ছোঁয়া লেগেছে।
সফলতায় উল্লেখযোগ্য দিকের মধ্যে গ্রামপর্যায়ের রক্ত পরীক্ষা করে বিজ্ঞানভিত্তিক দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে, যা আজ থেকে চার-পাঁচ বছর আগেও সম্ভব ছিল না।
কীটনাশকযুক্ত মশারি বা সাধারণ মশারি কীটনাশকে চুবিয়ে এর ব্যবহার বাড়ানো গেলে ম্যালেরিয়া সংক্রামণের হার ও মৃত্যুর হার কমানো যাবে। ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে যাঁরা বেঁচে যান তাঁদের কিন্তু কিছু ঝুঁকি থেকে যায় এবং তাঁদের প্রতি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া চলতে থাকে যা শিশুদের ক্ষেত্রে প্রায় ১০ শতাংশের এবং বড়দের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশেরও কম অর্থাৎ ৫ শতাংশের মতো।
নিউরোলজিক্যাল ও বুদ্ধিগতভাবে, উন্নয়নের দিক থেকে ওই সব শিশু অন্য শিশুদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে থাকবে। ৮০% রোগী আসছে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে, মাত্র ২০% আসছে সরকারিভাবে।
হালুয়াঘাটের সফলতা এসেছে চারটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে—নোংরা পুকুর পরিষ্কার করে তাতে মশার লার্ভা খেকো মাছ ছেড়েছে, স্কুলের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, তারা তাদের নিজস্ব বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার করে রাখে এবং আক্রান্ত রোগীদের যথাসময়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
কোনো ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে বা অসুস্থতা অনুভব করলে তারা যেন দ্রুত পার্শ্ববর্তী স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে যায় সে জ্ঞান তাদের দেওয়া হয়েছে।
এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে ওই দুটি গ্রামে একটি রোগীও পাওয়া যায়নি। এটি অবশ্যই বড় ধরনের সফলতা। সুতরাং সমাজভিত্তিক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের মাধ্যমেও সফলতার মুখ দেখা সম্ভব।
সরকারের গ্রামপর্যায়ে যে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো আছে তারা যদি প্রতি সপ্তাহে তথ্য প্রেরণ করে এবং তা যদি কেন্দ্রীয়ভাবে নিরীক্ষণ করা হয় তবে সারা দেশের তথ্য আমাদের কাছে অতি স্বল্প সময়ে পৌঁছে যাবে।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভুটান দুটি জেলাতে ৩৫ হাজার রোগী থেকে দুই-তিন হাজার নামিয়ে নিয়ে এসেছে। যেখানে তিন-চারটি মৃত্যু সংঘটিত হয়। সেখানে কিন্তু কোনো মেডিকেল কলেজ নেই। অথচ আমাদের ষাটের অধিক মেডিকেল কলেজ আছে ও অসংখ্য স্বাস্থ্যকর্মী আছে তাহলে আমরা কেন পারব না।
বর্তমানে প্রচলিত ওষুধের পূর্ণ কোর্স অর্থাৎ ছয়টি ডোজ পূর্ণভাবে নেওয়া প্রয়োজন।
আমাদের দেশে রেফারেল পূর্ববর্তী ইনজেকশন ব্যবহার করতে পারলে প্রতি তিনজনে অন্তত একজনের মৃত্যু অবশ্যই কমে যাবে। শুধু মশারি ব্যবহার সবকিছুর সমাধান নয়, স্প্রে করাও সব সময় সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে ইনজেকশন বা সাপোজিটরির মাধ্যমে অতি দুর্গম এলাকায় মারাত্মক ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে।
গর্ভবতী মহিলা এবং শিশুদের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সময়ে মাতৃস্বাস্থ্য ক্লিনিকগুলোকে সম্পৃক্ত করে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ে ম্যালোরিয়া প্রতিরোধক নানা তথ্যমূলক ও সহজবোধ্য কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমাদের অগ্রগতি আরও বাড়াতে পারি।
ইকবাল কবীর
আমাদের আলোচনা অনেক ভালো হয়েছে। সবশেষে প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মুহম্মদ হুমায়ূন কবিরের সমাপনী কথা শুনব।
মুহম্মদ হুমায়ূন কবির
ম্যালেরিয়া বিষয়ে আমাদের অর্জন অনেক। যখন আমরা গ্লোবাল ফান্ডের সঙ্গে কথা বলি সেখানে ম্যালেরিয়া, টিবি এসব ক্ষেত্রে বেশ ভালো সহায়তা প্রদান করেছে এবং আমরাও অনেকাংশেই সফলতা আনতে সক্ষম হয়েছি। আপনাদের মধ্যে হয়তো এমন শঙ্কা কাজ করছে যে গ্লোবাল ফান্ড চলে গেলে আমাদের সাফল্য ধরে রাখতে পারব কি না। এ ক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতা বলে, এইচআইভি এইডসের ওষুধ সংকটের সময় গ্লোবাল ফান্ডের সহযোগিতা ছাড়াই আমরা সরবরাহ ঠিক রাখতে পেরেছি। সুতরাং গ্লোবাল ফান্ডের অনুপস্থিতিতে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিও মুখ থুবড়ে পড়বে না। আমাদের সরকারি কর্মীবাহিনীকে এ ব্যাপারে সচেষ্ট থাকতে হবে। গ্লোবাল ফান্ড চলে গেলেই আমাদের উদ্যোমে ভাটা পড়ার কোনো কারণ নেই।
ওষুধের সরবরাহ সর্বদা সচল রাখার ক্ষেত্রে যথেষ্ট নজর দেওয়া হয় যেন ওষুধের অভাবে দরিদ্র মানুষের কোনো কষ্ট না হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভেক্টর নিয়ন্ত্রণ করা সে ক্ষেত্রে ভেক্টর ব্যবস্থাপনায় কোনো ঘাটতি আছে কি না তা খতিয়ে দেখা উচিত।
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে।
সরকারি যে ব্যবস্থাপনা আছে তা যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে।
জনস্বাস্থ্য চিকিৎসাকেন্দ্র থেকেই যেন তথ্য পাওয়া যায় সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চিন্তা সরকারের আছে, পরবর্তী সময়ে পরামর্শ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে ড্রাগ রেজিমেনের পরিবর্তনের ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে যারা জড়িত বা প্রোগ্রামের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরই এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে অর্থ সংকট বা অন্য কোনো কারণে কোনো কর্মসূচি বাদ দেওয়া হবে না। আমাদের সবাইকে জনকল্যাণের দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।
আব্দুল কাইয়ুম
এ ধরনের আলোচনায় অনেক বাস্তব প্রভাব পড়ে। অনেক পাঠক নানা রকম প্রশ্নের উত্তর জানতে চান। যেমন আজকের বিষয় নিয়েই হয়তো প্রশ্ন করবেন কীভাবে ম্যালেরিয়া হয়, ম্যালেরিয়া হলে তাদের করণীয় কী, সেসব বিষয় আমাদের আলোচনায় উঠে এসেছে, যার মাধ্যমে পাঠকেরা প্রশ্নগুলোর উত্তর সহজেই খুঁজে পাবেন। এগুলো দেশের জনসাধারণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজকের গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১১
Leave a Reply