পরামর্শ দিয়েছেন দেশের খ্যাতিমান ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি এ কে আজাদ খান।
সমস্যা: আমার বয়স ৬১ বছর। ২০০০ সালের মে মাসে আমার ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। আমার গাইড বই নম্বর ২১৭৪৩৫। উচ্চতা ১৬৬ সেন্টিমিটার, ওজন বর্তমানে ১১৫ কেজি। মা-বাবা দুজনেরই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, অতিরিক্ত ওজন ও হাঁপানি ছিল। বাবা স্ট্রোক করে মৃত্যুবরণ করেন। মা-ও পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারান এবং পরে মৃত্যুবরণ করেন।
ডায়াবেটিস রোগীদের যেভাবে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও কায়িক পরিশ্রম বা হাঁটার পরামর্শ চিকি ৎ সকেরা দিয়ে থাকেন, তা আমার পক্ষে পালন করা সম্ভব হয়নি। সম্ভব না হওয়ার কারণ, আমি ছোটবেলা থেকেই ভোজনবিলাসী ও অলস-প্রকৃতির ছিলাম। চাকরিজীবনেও আমি আলস্য ত্যাগ করতে পারিনি। সারা দিনের কোনো সময়ই আমি হাঁটাহাঁটি বা কায়িক কোনো পরিশ্রম করিনি। একটি কাজ আমি সব সময় মেনে চলেছি, তা হলো, নিয়মিত ওষুধ সেবন।
অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস ও কায়িক শ্রমের অভাবে আমি ক্রমেই মুটিয়ে যেতে থাকি। এখন আমার কোমরের মাপ ৫৮ ইঞ্চি। হাঁটাচলা করতে পারি না (স্বাভাবিক)। সারা দিন বসে এবং শুয়ে থেকে দিন অতিবাহিত করতে হচ্ছে।
ইতিমধ্যে আমার কিডনিতে জটিলতা দেখা দেয়। অপরদিকে প্রস্টেটগ্রন্থিও বেড়ে যায়। পাঁচ-ছয় বছর ধরে পা ফুলে গেছে, এমনকি পায়ের তালুও ফোলা। চোখেও ছানি পড়ার আভাস দেখা যাচ্ছে। যখন হাঁটতে পারতাম, তখন আমি চিকি ৎ সকের পরামর্শ উপেক্ষা করে হাঁটিনি। এখন আমি বাঁচার জন্য চেষ্টা করেও অতিরিক্ত ওজন ও শ্বাসকষ্টের জন্য হাঁটতে পারি না। আমার দেহের ওজন পায়ের হাঁটু বহনে অক্ষম। মেজাজ সব সময় উত্তেজিত থাকে, তবে খাদ্য নিয়ন্ত্রণে এনেছি। এখন আমি কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় সোজা হয়ে এক মিনিট একনাগাড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না। গোসল করে ওঠার পরও হাঁপাতে হয়। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রধান হওয়ায় সংসারের ব্যয় নির্বাহের পর ওষুধ ও চিকি ৎ সার ব্যয়ভারের জন্য ভাইয়ের ওপর নির্ভরশীল। দেহের নিম্নাংশ প্রায় অবশের পথে বলা চলে।
দৈহিক পরিশ্রম ছাড়া অন্য কোনো ব্যবস্থা, বিশেষ করে ওষুধে ওজন কমানো এবং চলাফেরার উপযোগী করার মাধ্যম থাকলে সে বিষয়ে পরামর্শ দেবেন। আমার রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষার ফল সন্তোষজনক।
এত কথা বলার এবং শোনার জন্য বাংলাদেশে কোনো চিকি ৎ সক নেই।তাই এ সুযোগ গ্রহণ করলাম। ধন্যবাদ।
গাজী আহসান
জিগাতলা, ঢাকা।
যেহেতু আপনার ডায়াবেটিসসংক্রান্ত অন্যান্য জটিলতাও দেখা দিয়েছে, তাই সব রিপোর্টসহ আপনি ১৬ অথবা ২৩ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় মিরপুর দারুস সালামে সরাসরি আমার সঙ্গে দেখা করবেন। এতে আপনার কোনো খরচ হবে না।
আপনার শেষ মন্তব্যটির সঙ্গে একমত হতে পারছি না বলেদুঃখিত। বাংলাদেশে অনেক চিকি ৎ সক রয়েছেন। আমার মতে, অধিকাংশ চিকি ৎ সক ঠিকভাবে কথা শোনেন এবং ব্যবস্থাপত্র দেন। চিকি ৎ সক খারাপ নন। কাজেই আপনার কথা শোনার জন্য বাংলাদেশে কোনো চিকি ৎ সক নেই—এ কথাটির সঙ্গে একমত হতে পারছি না।
সমস্যা: আমার বয়স ৫০। আমি একজন ব্যবসায়ী। ১০ বছর ধরে আমি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। আমার মেজাজ সব সময় খিটখিটে থাকে এবং ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আচরণ পরিবর্তন করতে পারছি না। এ ছাড়া আমি প্রায় ২০ বছর ধরে ধূমপানে আসক্ত। দিন দিন অস্বাভাবিকভাবে স্বাস্থ্যহানি হচ্ছে। পারিবারিক নানা সমস্যায় সারা দিন দুশ্চিন্তার মধ্যে কাটাতে হয়। আমার ওজন ৫৫ কেজি। চিকি ৎ সকের উপদেশে আমি প্রতিদিন গ্লুকোমেট ৫০০ সেবন করি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ।
আপনার জন্য ধূমপান একেবারেই নিষিদ্ধ। ধূমপান এমনিতেই সবার জন্য ক্ষতিকর। ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে আরও বেশি ক্ষতিকর। কাজেই ধূমপান ছাড়ুন। খিটখিটে মেজাজ আর দুশ্চিন্তার সমাধান নেই, যদি না আপনি নিজেই নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করেন। এ জন্য যোগব্যায়াম উত্তম। আপনি মাইন্ড কন্ট্রোল ব্যায়াম করুন।
সমস্যা: ১৫ বছর ধরে তাকে লালন-পালন করছি। অর্থা ৎ ডায়াবেটিসকে। আপনারা বলেন, থ্রিডি অর্থা ৎ ডিসিপ্লিন, ডায়েট এবং ড্রাগ মেনে চললে প্রায় সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যায়। প্রথম দিকে আমি ছিলাম মেলিটাস-২ শ্রেণীর। এখন মেলিটাস-১ গোত্রের সদস্য। দুই বেলা ইনসুলিন ও ওষুধ খেতে হয়। পেশাগত কারণে শারীরিক ব্যায়াম করতে পারি না। বয়স ৫০+। ধূমপানের অভ্যাস ছিল (এখনো মাঝেমধ্যে খাই) বলে ডায়াবেটিসের পাঁচ বছরের মাথায় বুকটা ফেড়ে ফেলতে হয়। না, কোনো অ্যাটাক হয়নি—হালকা ব্যথা অনুভব করা মাত্রই চিকি ৎ সকের শরণাপন্ন হই এবং বাইপাসে চলে যাই। ইনসুলিন নেওয়ার পর থেকে মোটামুটি ভালোই আছি। তিন মাস পর পর লিপিড প্রোফাইল এবং প্রতি দুই মাস পর ডায়াবেটিস সেন্টারে যাই চেকআপ করাতে। ওজন ৬০ কেজি। আমার কয়েকটি প্রশ্ন—
১. প্রায় সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপনের মধ্যে জৈবিক চাহিদা অন্তর্ভুক্ত কি না? নাকি সব ডায়াবেটিস রোগীরই এ দিকটা অন্ধকারাচ্ছন্ন? অনেককে দেখেছি বিয়ে করেছে, সন্তান জন্ম নিচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার পরামর্শ আশা করছি।
২. আমার S-creatinine সব সময়ই ১.৪০-১.৪৫-এর মধ্যে থাকে। এটি কি কোনো আগাম সংকেত?
৩. সকালে (১২+piodar 30) এবং রাতে ছয়-আট ইউনিট ইনসুলিন নিই। মাঝেমধ্যেই রাতে ভাত খেতে হয়। ভাত খেলে শেষ রাতের দিকে মাথায় একটা হালকা ব্যথা হয়। এটি কি কোনো সমস্যা?
৪. হাঁটাহাঁটির সময় পাই না, তবু প্রায়ই হাঁটি। হাঁটলে পায়ের মাসল ও নিচে ব্যথা হয়। ভরা পেটে হাঁটলে মাঝেমধ্যে অস্বস্তি লাগে। কোনো ব্যথা করে না। বুকটা মনে হয় একটু চেপে আসে। দুই-এক মিনিট বিশ্রাম নিলে হাঁটতে আর কোনো সমস্যা হয় না। আবার কি ব্লক হয়ে যাচ্ছে?
জাকির হোসেন
বৈকালী, খুলনা।
আপনার সমস্যা থেকে বোঝা যাচ্ছে, আপনি ঠিক টাইপ-১ গোত্রের সদস্য নন। আপনার যেটা হয়েছে, আপনার এখন ইনসুলিননির্ভর ডায়াবেটিস হয়েছে। কারণ, টাইপ-১ জন্মগত। আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে পারিবারিক জীবনে জৈবিক চাহিদা পূরণে কোনো অসুবিধা হবে না। যেহেতু আপনার ক্রিয়েটিনিন বাড়তি মাত্রা দেখাচ্ছে। তাই একজন কিডনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। হাঁটাহাঁটির সময় বুকে ব্যথা হলে বিশ্রাম নেবেন এবং অতিসত্বর একজন হূদেরাগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। শুক্রবার সকাল ১০টায় মিরপুর দারুস সালামে ডায়াবেটিস হাসপাতালে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
সমস্যা: আমি সাত বছর ধরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বাসায় অ্যাকুচেক মেশিনে রক্ত পরীক্ষা করে নিজেই মনিটরিং করে আসছি। মুখে খাওয়ার ওষুধ খাই। তবে যে বিষয়ে জানতে চাইছি তা হলো, রাতে খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর ব্লাড সুগার যদি ৮০ হয়, তাহলে সকালে ফাস্টিং ব্লাড সুগার তো আরও কম হওয়ার কথা; কিন্তু তা না হয়ে হয় ৯.০—এই এক মিলিমোল বাড়ে কেন? এ নিয়ে দুশ্চিন্তা হয়। অনুগ্রহ করে আমাকে বলবেন কি? প্রায়ই সকালের সুগার লেভেল বেশি থাকে, খাওয়ার পর কমে যায়।
সৈয়দা হাসনা হেনা
চট্টগ্রাম।
অনেকের ক্ষেত্রে এ রকম সুগারের মাত্রার তারতম্য হতে পারে। আপনি যেহেতু মুখে ওষুধ খান, এ রকমটা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। দুশ্চিন্তার কারণ নেই।
সমস্যা: আমার বয়স ৬২ বছর। আমি আট বছর ধরে ডায়াবেটিসে ভুগছি। ডায়াবিনল ৫ মিলিগ্রাম খাচ্ছি। নাশতার দুই ঘণ্টা পর রক্তের সুগার প্রতি মাসেই পরীক্ষা করাই। সঙ্গে লিপিড প্রোফাইল, ক্রিয়েটিনিন করাই। আমার রক্তের সুগার ওঠানামা করছে। দুই মাস আগে আমি হূদেরাগে আক্রান্ত হয়ে সিসিইউতে নিবিড় তত্ত্বাবধানে ছিলাম। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন হয়েছে। বর্তমানে ইকো করে বলেছেন, তেমন কোনো সমস্যা নেই। আমার রক্তচাপ ওঠানামা করে। আমার অষ্টিও আর্থ্রাইটিসও আছে। আমি বড়ি এনডিব্লেগ, ভ্যালসারটিল, রেমিকার্ড ৫ মিলিগ্রাম খাচ্ছি। এ অবস্থায় সুস্থ থাকতে করণীয় কী?
শংকর চন্দ্র সাহা
নতুন বাজার, বরিশাল।
আপনার রক্তচাপ ওঠানামার জন্য হূদেরাগ হয়ে থাকতে পারে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য সুষম খাবার জরুরি। এ জন্য আপনাকে পুষ্টিবিদের পরামর্শমতো লো-ফ্যাট, হাই-ফাইবার-জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন, পরিমিত আহার করুন। নিয়মিত ওষুধ সেবন করুন, সুস্থ থাকবেন।
সমস্যা: আমার বয়স ৩৭ বছর। ১৫ বছর ধরে আমার ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। আমি শর্করাবিহীন বহুমূত্র রোগে ভুগছি। তিন বছর ধরে জীবনীশক্তি অত্যন্ত দুর্বল এবং ওষুধ-সহিষ্ণুতা অত্যন্ত কম হওয়ায় ২০ মিলিগ্রাম পাওয়ারের ওপর কোনো ওষুধ সেবন করলে আরও কাবু হয়ে পড়ি। এই রোগের কোনো ওষুধ আছে কি না, থাকলে তার নাম অথবা জেনারিক নাম জানালে উপকৃত হব। এর আগে ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ, এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, নামকরা ইউরোলজিস্টের চিকি ৎ সা নিয়েছি। কিন্তু কোনো প্রয়োগসিদ্ধ বা সমাধান তাঁরা দিতে পারেননি। বারডেম যেহেতু প্রস্রাবের রোগসমূহের একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল, কিন্তু এখানে শর্করাযুক্ত বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস রোগেরই চিকি ৎ সা হয়। দুর্ভাগ্য যে অন্য পাঁচ-ছয়টি প্রস্রাবের রোগের সঙ্গে এই রোগটিকে চিকি ৎ সকেরা গুলিয়ে ফেলেন। বর্তমানে আমার অবস্থা খুবই খারাপ, কায়িক পরিশ্রম করতে পারি না এবং বাসায় শুয়ে-বসে দিন কাটাতে হচ্ছে। এ অবস্থায় চিকি ৎ সার ব্যাপারে দৌড়াদৌড়ি, নানা টেস্ট, এটা-সেটা একার পক্ষে কুলিয়ে উঠছি না। বিদেশে চিকি ৎ সার জন্য যাওয়া যায়, কিন্তু শারীরিক দুর্বলতার কারণে গুলশানে দূতাবাস পর্যন্ত যেতেই সাহস হয় না। আত্মীয়ের সংখ্যা নগণ্য হওয়ায় একা বিদেশে যাওয়াও বোকামি হবে।
আরিফ এ আলী
পল্লবী, ঢাকা।
প্রোস্টেট বা প্রস্রাবের ইনফেকশন হলে ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে। আপনার এ রোগের চিকি ৎ সা সম্ভব, দেশে বা বিদেশে কোনো তারতম্য হবে না।
সমস্যা: আমার বয়স ৫০। বিবাহিত। ওজন ৫৬ কেজি। উচ্চতা পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চি। আড়াই বছর ধরে ডায়াবেটিসে ভুগছি। ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞের পরামর্শে খাদ্য গ্রহণ, ওষুধ সেবন ও হাঁটা চলছে। সকালে খালি পেটে খাই কমপ্রিড ৮০ এমজি একটি, পেনটনিকস ২০ এমজি একটি, রাতে খাওয়ার আগে একটি পেনটনিকস ২০ এমজি ও পরে একটি ভিটামিন ট্যাবলেট এ-জেড (A-Z)। প্রতি মাসে চারবার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা মেপে দেখি। ফলাফল খাওয়ার আগে সাত এবং খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর ৮.৫। মাঝেমধ্যে অধিক খাওয়াদাওয়া করলে ৯.৫ পর্যন্ত হয়। এ পর্যন্ত ভালোই ছিলাম। কিন্তু দুই মাস ধরে শরীর খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছে। হাঁটাহাঁটি করতে পারি না। হাঁটতে গেলেই মনে হয়, পড়ে যাব। হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ ভেবে দ্রুত গ্লুকোজের মাত্রা মেপে দেখলে ৮-৮.২-এর মতো পাওয়া যায়। অতিরিক্ত দুর্বলতার কারণে রোজা রাখতে ভয় পাচ্ছি। রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে।
স্থানীয় ডাক্তার রিভোট্রিল (Rivotril) 0.5 একটি আমাকে সেবন করান। এর সঙ্গে সকাল ও রাতে নেক্সাস-২০ (Nexus 20), নিউরো-বি (Neuro-B) চালিয়ে যেতে বলেন এবং দুশ্চিন্তা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে উপদেশ দেন। আমি কি কোনো জটিল রোগে ভুগছি? উল্লেখ্য, মানসিকভাবে ভেঙে পড়া আমি একজন হতাশ মানুষ।
আবসার উদ্দিন
নাসিরাবাদ, চট্টগ্রাম।
আপনার দুশ্চিন্তাজনিত মানসিক সমস্যা রয়েছে।চিকি ৎ সাবিজ্ঞানে আমরা একে ফাংশনাল ডিজ-অর্ডার বলি। দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকা খুবই কঠিন। তাই শিখতে হবে মনকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এ জন্য যোগব্যায়াম উত্তম। যোগব্যায়াম শিখুন। মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন। দুশ্চিন্তামুক্ত থাকা আপনার জন্য জরুরি।
সমস্যা: আমার বয়স ৭৬ বছর। ১৯৯০ সাল থেকে ডায়াবেটিসে ভুগছি। বারডেমের সদস্য ছিলাম। মিক্সটার্ড ইনসুলিন নিচ্ছি। বর্তমান ইনসুলিনের মাত্রা সকালে ১২ ও বিকেলে ৮। এখন একটানা Mixtord না নিয়ে সমমানের ইনসুলিন comb. বা অন্য Brand-এর ইনসুলিন ব্যবহার করা যাবে কি না? ২. রোজার মাসে ইনসুলিন না নিয়ে কোনো মাত্রার কোনো ট্যাবলেট খাওয়া যাবে কি না? এবং একটানা কি ট্যাবলেট খাওয়া যাবে? এখন এ অবস্থায় ইনসুলিন বাদ দিয়ে ওষুধে ফেরা যায় কি না। ৩. ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক রাখলেও কখনো সুগার বেড়ে যায় শুধু খাবার নিয়ন্ত্রণে কমে। ব্যায়াম বা ওষুধে তেমন প্রভাব ফেলে না। এ অবস্থায় আমার পক্ষে কী করা উচিত?
মু. ফয়জর আলী মিয়া।
আপনার ক্ষেত্রে চিরাচরিত থ্রিডি ব্যবস্থাপত্র ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য, পরিমাণমতো, পরিমিত, সময়মতো খাওয়া, ওষুধ সেবন এবং ব্যায়াম সবই দরকার। ধর্মেমতে রোজা রেখে রক্ত দেওয়া এবংইনসুলিন নেওয়া যায়। রেইনাল ফেলইউর টাইপ-১ এবংটাইপ-২ ডায়াবেটিস হলে ঘন ঘন ইনসুলিন নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
সমস্যা: ১৫ বছর তার সঙ্গে বসবাস। ছিলাম মেলিটাস-২, হয়েছি মেলিটাস-১। ৪০ বছরের সময় আক্রান্ত, ৪৭ বছরে ওপেন হার্ট। আমি যে একজন ডায়াবেটিস পরিবারের সন্তান। খুব সতর্ক থেকেছি, তবু এড়াতে পারিনি এ রোগ।
পেশায় প্রকৌশলী। প্রচুর ধূমপান করতাম, সঙ্গে ডায়াবেটিস। ফলাফল ‘আরটারিও ক্লেরোসিস’। বেঙ্গালুরুর চিকি ৎ সক দেবী শেঠি আমার বুকটা চিরেছিলেন। বলেছিলেন, ‘ইঞ্জিনিয়ার সাহেব, ধূমপান করবেন না এবং ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে রাখবেন, ১৪-১৫ বছর নিশ্চিন্তে চলতে পারবেন।’ আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগের কথা। ‘শৃঙ্খলাই জীবন’ বিষয়টি মেনে চলতে পারিনি। এখন আমাকে ইনসুলিন, ওষুধ সবই নিতে হচ্ছে। বয়স ৫৫ বছর। ওজন ৫৯ কেজি। উচ্চতা পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি। ওষুধ ইনসুলিন (৭০/৩০, পেনপিল), সকালে ১৪, রাতে ছয় ইউনিট (তিন বছর ধরে)। ট্যাবলেট সকালে পিওডার ৩০, দুপুরে অগলি ১৫।
এ ছাড়া হার্টের জন্য ট্রাইটেস পাঁচ (রাতে) ডিলিপিড/নোফিয়েস্ট/ মনোকার্ড/পেনটাবেক্স/ইকোস্প্রিন ইত্যাদি চলছে (আট বছর ধরে)। বিপি-১৩০/৮০। খাদ্য—সকালে রুটি, দুপুরে ভাত, রাতে রুটি।
বর্তমান সমস্যা: ইদানীং খাওয়ার পরপরই জরুরি কাজে একটু দ্রুত হাঁটাচলা করলে বুকে ভারী বোধ হয়, সঙ্গে সঙ্গে মুখ দিয়ে ঢেঁকুর/গ্যাস ওঠে এবং পাঁচ-ছয় মিনিট পর বুকের অস্বস্তি ভাবটা কমে যায়। পেট খালি বা আধাখালি থাকলে এমন কোনো অনুভূতি হয় না।
রং-চায়ের (লেবু খাই প্রচুর) সঙ্গে দিনে ১৫-১৬টা Huxol বড়ি খাই, এটাতে কোনো সাইডএফেক্ট হয় কি না?
# দুপুরে ভাত খাওয়ার পর ব্লাড সুগার ১০-১১ পাওয়া যায়।
# বর্তমানে বেশি হাঁটাচলা করলে পায়ে ব্যথা হয়।
নাম-ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক।
আপনার যে বিবরণ, তাতে বাইপাসের পরও হূদেরাগের সমস্যা হতে পারে। আপনি অতিসত্বর একজন হূদেরাগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
সমস্যা: সালাম নেবেন। আমার বয়স ৪৩। ওজন ৫৩ কেজি। বারডেমের সদস্য। সুগারের মাত্রা সাত থেকে ১০-এর মধ্যে থাকে খাওয়ার পর। প্রেসার ১২৫/৯০। পায়োগ্লিটাজোন হাইড্রোক্লোরাইড ১৫ মিলিগ্রাম প্রতিদিন খাই। ইদানীং লক্ষ করছি, প্রস্রাবের পর যেখানে প্রস্রাব জমা হয়, সেখানে ঘন ফেনা দেখা যায়। স্থানীয় এক চিকি ৎ সকের ভাষ্যমতে, প্রস্রাবের সঙ্গে প্রোটিন বেরিয়ে যাচ্ছে। আমার প্রশ্ন, ডায়াবেটিসের জন্য প্রোটিন প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায় কি না। প্রোটিন যাতে বেরিয়ে না যায়, তার জন্য করণীয় কী?
ফয়সাল আহমেদ
মির্জাপুর, টাঙ্গাইল।
আপনি নিয়মিত প্রস্রাব পরীক্ষা করান এবং বিশেষজ্ঞ চিকি ৎ সকের পরামর্শনিন।
সমস্যা: আমার মায়ের বয়স ৪৬ বছর। এ বছরের মার্চের শেষের দিকে তাঁর ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। মায়ের পরিবারে কারও ডায়াবেটিস নেই। আমরা পরিবারের সবাই মাকে নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় থাকি। নিয়ম-শৃঙ্খলাও ঠিকমতো মানতে পারেন না তিনি। আমি ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছি। যতটা যত্ন নেওয়ার, ঠিক সেভাবে পালন করতে পারছি না। আমার নিজেরই অনেক ভয় হয়, মা যদি আবার স্ট্রোক করে বসেন। কেউ তাঁকে বলছিলেন, কোনো একটা ফল খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ফলটির নাম জানালে খুশি হব।
নুসরাত জামান মণি।
আধুনিক চিকি ৎ সায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ হয়। সে কারণে যত ভালোভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, আপনার মা তত ভালো থাকবেন। কিছু নিরাপদ প্ল্যান্ট আছে। যেমন—করলা, মেথি ইত্যাদি সেবনে ভালো ফল পাওয়া যায়।
সমস্যা: সালাম নেবেন। আমার বয়স ৩৫। ওজন ৫৮ কেজি। ডায়াবেটিসের রোগী। প্রতিদিন খাওয়ার ২০ মিনিট আগে ডায়াটটল একটি ট্যাবলেট খাই। সুগারের মাত্রা খাওয়ার পর সাত থেকে ১০-এর মধ্যে ওঠানামা করে। প্রেশার ১৩০/৯০ থাকে। ঘাড়ের পেছনে সব সময় অল্প অল্প ব্যথা করে। ইদানীং কোমরেও ব্যথা করে। সারা দিন কোথায় কী করেছি, রাতে ঘুমাতে গেলে চোখ বন্ধ, কিন্তু মাথায় সারাক্ষণ সেটা ঘুরপাক খেতে খেতে সকাল হয়ে যায়। এতে ঘুম হলো কি না, টের পাই না। এ সমস্যাটা গত দুই-তিন বছর থেকে। এ সমস্যাটা আমাকে মানসিকভাবে কষ্ট দেয়। এতে আমার ডায়াবেটিসের মাত্রাও বেড়ে যায়।
দীন মোহাম্মদ
পশ্চিম রামপুরা, ঢাকা।
ঘুম বিষয়ে বেশি সংবেদনশীল হওয়ার প্রয়োজন নেই। না ঘুমিয়ে কোনো লোক মারা গেছেন—এমনটা শোনা যায় না। যোগব্যায়াম করুন। পরিশ্রম আপনাকে ঘুমাতে সাহায্য করবে। আপনার শারীরিক সমস্যার চেয়ে মানসিক সমস্যা বেশি।
সমস্যা: সালাম নেবেন। আমার বয়স ৪২। ওজন ৫৪ কেজি। ডায়াবেটিসের রোগী। বারডেমের সদস্য। প্রতিদিন সেগলিট ১৫ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট খাই। সুগারের মাত্রা সাত থেকে ১০-এর মধ্যে ওঠানামা করে (খাওয়ার পর)। প্রেশার ১৩০/৯০। ঘাড়ের পেছনে অনেক সময় ব্যথা করে। প্রশ্ন হলো, উচ্চ রক্তচাপের জন্য কোনো ওষুধ খাব কি না। খেলে কোন ওষুধ ও কত মাত্রার?
সাজ্জাদ আহমেদ
নাগরপুর, টাঙ্গাইল।
ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তচাপ ওঠানামা করলে হূদেরাগের ঝুঁকি বাড়ে।একজন হূদেরাগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শমতো চিকি ৎ সা নিন এবংডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
দুনিয়াজুড়ে বাড়ছে ডায়াবেটিসও
স্বাস্থ্যকুশল: আজ (৬ সেপ্টেম্বর) অধ্যাপক ইব্রাহিমের মৃত্যুদিবস। বারডেমের ডায়াবেটিস সেবা দিবস। এ দিবস সামনে রেখে বাংলাদেশ তথা গোটা বিশ্বে ডায়াবেটিসের প্রকোপ এবং নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাইছি।
এ কে আজাদ খান: গোটা পৃথিবীতে মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন ঘটেছে এবং ঘটছে। তাই রোগবালাইয়ের ঘরানারও পরিবর্তন হচ্ছে। একসময় সংক্রামক ব্যাধির প্রকোপ এত বেশি ছিলযে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। অধ্যাপক মোহাম্মদ ইব্রাহিম একজন ভিশনারি মানুষ ছিলেন। তাই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, ভবিষ্যতে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ডায়াবেটিস এবং এ-জাতীয় অসংক্রামক ব্যাধি বাড়তেই থাকবে।সেখান থেকেই ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির প্রতিষ্ঠা। বর্তমানে গোটা দুনিয়ায় অসংক্রামক ব্যাধির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে।বাড়ছে ডায়াবেটিসও।ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে অন্যান্য জটিলতা দেখা দেয় না। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে উচ্চ রক্তচাপ, হূদেরাগসহ অন্যান্য অসংক্রামক ব্যাধি বাড়তে থাকে। এটা এখন উন্নত, অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল সব দেশেরই সমস্যা। বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাই জীবনাচরণে পরিবর্তন এবংকঠোর শৃঙ্খলা মেনে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
স্বাস্থ্যকুশল: ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে করণীয় কী?
এ কে আজাদ খান: প্রথম কথা হচ্ছে, রোগটি সম্পর্কেজানতে হবে। আমরা সব সময় শৃঙ্খলার কথা বলি। তিনটি ডি-এর কথা বলি—ডায়েট, ড্রাগ ওডিসিপ্লিন। পরিমাণমতো, পরিমিত ও সময়মতো সুষম খাবার গ্রহণ, নিয়মিত হাঁটাসহ কায়িক পরিশ্রম করা এবং সুশৃঙ্খল জীবনযাপন ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে পারে। একইভাবে ডায়াবেটিস দেখা দিলে সেটিকেও শৃঙ্খলা মেনে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। একজন ডায়াবেটিক রোগী নিয়ম মেনে খাবার খেলে, ব্যায়াম করলে এবং যথাযথভাবে ওষুধ সেবন করলে কোনো জটিলতা ছাড়াই দীর্ঘদিন সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন। সে কারণেই ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে অন্যান্য অসংক্রামক ব্যাধিও শরীরে বাসা বাঁধে।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১১
Leave a Reply