২০ কেজি ওজন কমাতে সফল হলেন অতি পরিচিত টিভি অভিনেত্রী, মডেল, নৃত্যশিল্পি সাদিয়া ইসলাম মৌ। স্বামী সফল অভিনেতা সবার প্রিয় জাহীদ হাসান। তাদের দুই সন্তান, পুষ্পিতা ও জারীফ। বগুড়ার মেয়ে মৌ, সিরাজগঞ্জের ছেলে জাহীদ হাসান। বিয়ের পর থেকে মৌ’র একটু একটু করে ওজন বাড়তে থাকে এবং ২ সন্তানের জননী হবার পর মৌ আর আদর্শ ওজনে থাকতে পারেনি। যেটা সব মায়ের-ই হয়ে থাকে। পূরো গর্ভকালীন সময়ে একজন মায়ের ১২-১৫ কেজি পর্যন্ত ওজন বেড়ে যায়। এবং প্রসবের পর থেকে সে যদি তার সঠিক খাদ্য তালিকা বেছে নিতে পারে, তবে সে তার সদ্যজাত সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানের পাশাপাশি নিজের অতিরিক্ত ওজনও কমাতে সক্ষম হবেন।
মৌ’র ২ সন্তান, পুষ্পিতা ও জায়িফ হবার পর থেকে ওজন বাড়তে থাকে। সে অনুভব করে তার পায়ে ব্যথা। তখনই সে বুঝেন অতিরিক্ত ওজন তার পায়ের ব্যথার অন্যতম কারণ। সে সিদ্ধান্ত নেয় ওজন কমাবার। অতিরিক্ত ওজনের কারণে শুধু পায়ের ব্যথা কেন?
ফুড রিলেটেড ক্রনিক ডিজিজ গুলো হলো:
(১) ডায়াবেটিস
(২) উচ্চরক্তচাপ
(৩) ডিসলিপেডিমিয়া:
(ক) রক্তে কোলেস্টেরলের আধিক্য
(খ) রক্তে ট্রাইগ্লিসেরাইডের আধিক্য।
(৪) ফ্যাটি লিভার
(৫) হূদরোগের ঝুকি বেড়ে যাওয়া
(৬) পায়ের ব্যথা, হাঁটুর ব্যথা, কোমড়ের ব্যথা।
(৭) মহিলাদের মাসিকের সমস্যা
(৮) ক্যান্সার বিশেষ করে মহিলাদের ব্রেষ্ট ক্যান্সার এর জন্য ওবেসিটি একটি কারণ
(৯) দাম্পত্য সমস্যা
(১০) অতিরিক্ত ওজন মহিলাদের বন্ধ্যাত্ব ও শ্বাসকষ্টের অন্যতম কারণ
(১১) শরীরে ফাটা দাগ এবং অতিরিক্ত ওজন একজন নারী অথবা পুরুষের বাহ্যিক সৌন্দ্যকে নষ্ট করে। আত্ববিশ্বাস কমিয়ে, মানষিক চাপ বৃদ্ধি করে।
মৌ যেভাবে ওজন কমালেন:
(১) ওয়েট রিডিউসিং ডায়েট চার্ট
(২) হাঁটা।
এই দুই পদ্ধতি ছাড়া কোন কিছুই করতে হয়নি তাকে। তবে হ্যাঁ তার ছিলো অদম্য ইচ্ছা শক্তি, ইচ্ছা শক্তি ছাড়া যে কোন পদ্ধতি অকার্যকর। ওজন কমাতে গিয়ে তাকে যে ছকের মধ্যে পড়তে হয়েছে তা হলো:
(১) ১০০% ইচ্ছা শক্তি
(২) ধৈর্য্য
(৩) ১০০% ডায়েট চার্ট মেনে চলা
(৪) ডায়েট নির্দেশিকা মেনেচলা
(৫) প্রতিদিন নিয়ম করে ১ ঘন্টা হাঁটা।
(৬) নির্দিষ্ট সময় পর পর ফলো-আপ এ আসা।
এই চিকিত্সা সে সম্পন্ন করেছেন শমরিতা হাসপাতালের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগে। ওজন কমানোর জন্য প্রত্যেককে কিছু নিয়ম মানতে হবে:
(১) নিজের ইচ্ছা বা আগ্রহ
(২) রোগ প্রতিরোধের আগ্রহ
(৩) রোগের ভয়াবহ পরীনতি সম্পর্কে জানার আগ্রহ
(৪) ওজন কমানোর সঠিক পদ্ধতি বেছে নেয়া
(৫) হাঁটার অভ্যাস আয়ত্ব করা
(৬) খাদ্যের পুষ্টিমূল্য সম্পর্কে সাধারণ ধারণা নেয়া
(৭) নিজের সৌন্দর্য বোধ সম্পর্কে সচেতন হওয়া, এসবগুলো আনুভূতি মৌ এর মধ্যে এসেছিল বলেই সে ওজন কমাতে পিছপা হননি।
প্রথম ৩ সপ্তাহে সে যে প্রাণপণ ভাবে ডায়েট চার্ট মেনে চলেছে তাতে তার ফল আসে, ৬ কেজি ওজন কমে যায়, এতে তার আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যায় এবং উত্সাহিত হন। অনেকে মনে করেন, প্রথম ১ মাসে ৫-৬ কেজি ওজন কমানো ক্ষতিকর। সঠিক ধারণাটি হলো শরীরে যখন কোন ব্যক্তির অতিরিক্ত ২০-৩০ কেজি ওজন থাকে তখন তাকে ভিএলসিডি এর মাধ্যমে প্রথম ১ মাসে ৫-৬ কেজি পর্যন্ত ওজন কমে যায়। এটি উক্ত ব্যক্তির জন্য মোটেই ক্ষতিকর নয়। তখন শরীরে সঞ্চিত শক্তি খরচ হয়ে তার স্বাভাবিক চলাফেরা, কাজকর্মে সাহায্যে করে।
মৌ’র ওজন কমানোর পিছনে যে শক্তি কাজ করেছে তা হলো:
(১) তার নিজস্ব ইচ্ছা শক্তি
(২) ওজন কমানোর খাদ্য তালিকা সে ১০০% মেনে চলেছে
(৩) তাকে বেঁধে দেয়া নির্দিষ্ট সময়ে সে নিয়মিত হেঁটেছে
(৪) আমার এড্যাভাইস এর বাইরে খাদ্য তালিকা পরিবর্তন করেনি
(৫) লাঞ্চ ও ডিনার পার্টিতে উপস্থিত থেকেও পার্টি খাবার এড়িয়ে চলেছেন
(৬) নির্দিষ্ট খাদ্য তালিকা ও হাঁটার বাইরে তার ওজন কমানোর চিকিত্সার পিছনে অন্য কোন প্রোসিডিউর এর সাহায্য নিতে হয়নি
(৭) চিকিত্সা খরচ এত সহনীয় ছিলো যে, এটি যে কোন স্থূলো (অতিরিক্ত ওজন) ব্যক্তির জন্য সস্তিকর।
ওজন কমাতে সর্তকতা:প্রত্যেকের ওজন উচ্চতা, লিঙ্গ, বয়স, শারীরিক অবস্থা, পেশাগত অবস্থা, রক্তের বিভিন্ন উপাদানের তারতম্যের পার্থক্য, দির্ঘ মেয়াদী বিভিন্ন রোগ যেমন:
(১) ডায়াবেটিস
(২) উচ্চরক্তচাপ
(৩) হূদরোগ
(৪) কিডনি রোগ ইত্যাদি তারতম্যের ভিত্তিতে প্রত্যেকের খাদ্য তালিকা হবে ভিন্ন। একজনের খাদ্যতালিকা অন্যজনের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। তাই এ অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। তানা হলে একটুখানি অসর্তকতা সারা জীবনের কান্না হতে পারে। ওজন কমাতে “ব্যালেন্স এবং ডায়েট” একথা ভূলে গেলে চলবে না।
আপনার খাদ্য তালিকায় ৬টি পুষ্টি উপাদানের সমন্বয় থাকতে হবে:
(১) প্রোটিন
(২) ফ্যাট
(৩) কার্বোহাইড্রেট
(৪) ভিটামিনস
(৫) মিরা রেনাস
(৬) পানি। এদের যে কোন একটি বাদ পড়ে গেলে শরীরে পুষ্টির অভাব হবে।
স্বল্প ব্যয়ে, কোন রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া সর্বোচ্চ নিশ্চয়তায় ওজন কমানোর সূত্র হলো:
(১) নিজের ১০০% ইচ্ছা
(২) ধৈর্য্য
(৩) ওজন কমানোর খাদ্য পরিকল্পনা অর্থাত্ ডায়েট চার্ট
(৪) হাঁটা
(৫) খাদ্য নির্দেশনা।
উপরোক্ত ৫টি নিয়ম মেনে মৌ ২০ কেজি ওজন কমালেন, অন্য কোন কিছুই করেনি সে। মৌকে আমার অভিনন্দন। অতিরিক্ত ওজন নিয়ে দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। শুধু দরকার উপরোক্ত ৫টি পদক্ষেপ।
এস. এন শম্পা পুষ্টিবিদ শমরিতা হাসপাতাল পান্থপথ, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক
শুক্র, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১১, ১ আশ্বিন ১৪১৮
রুহুল আমীন
স্যার,ওজন কমানোর খাদ্য তালিকা এবং ডায়েট নির্দেশিকাটি জানালে ভালো হতো৷আর আমি পেট কমানোর জন্য SAUNA Belt ব্যবহার করি,এতে কোনো side affect আছে কি না?দয়া করে জানাবেন।