বৃষ্টি হোক বা না হোক, বর্ষার ভাপসা গরমে বাইরে ব্যায়াম করতে কারোরই ভালো লাগে না। অথচ নিজেকে ফিট রাখতে হালকা ব্যায়াম না হলে কি চলে? এ সময় ঘরেই সেরে নিতে পারেন হালকা ব্যায়াম। এ জন্য দরকার হবে কিছু হালকা যন্ত্রপাতি।
ব্যায়ামের আগে
পারসোনা হেলথের প্রধান তানজিনা চৌধুরী বলেন, এনার্জি লেভেল বিবেচনা করে ব্যায়ামগুলো নির্বাচন করা উচিত। শরীরের ভিন্ন অংশের জন্য ভিন্ন ব্যায়াম আছে। আবার কিছু ব্যায়াম আছে আপনার পুরো শরীরে প্রভাব ফেলবে। প্রথমেই ভারী ব্যায়াম না করে হালকা ব্যায়াম দিয়ে শুরু করতে হবে। শরীর একটু চটপটে হয়ে ওঠা মানেই আপনি ফিট হয়ে গেছেন, তা কিন্তু নয়। প্রতিদিন ৪০-৫০ মিনিট খালি হাতে ব্যায়াম চালিয়ে যেতে হবে। একেক দিন একেক অংশের ব্যায়াম করা উচিত। একদিনেই শরীরে অতিরিক্ত চাপ তৈরি করা যাবে না।
হরেক রকম ঘরোয়া ব্যায়াম
জিমে যেসব ব্যায়াম করানো হয় তার আছে রকমফের। রানিং, ফাইট টুইস্ট, ডাম্বেল লিফটিং, বারবেল, পুশআপ, স্কিপিং, ট্রেডমিল, বাইক, ক্রসট্রেইনার, স্কোয়াট, বিটস, ব্যাকক্রাঞ্চ, অ্যারোবিকস, ইয়োগা, স্ট্রেচিংসহ হরেক রকম ব্যায়াম করানো হয় ব্যায়ামাগারে। এর মধ্যে ছেলে ও মেয়েদের ব্যায়াম আলাদা। আবার কিছু ব্যায়াম ছেলেমেয়ে উভয়ই করতে পারে।
মেয়েদের জন্য
ইন্টারনেটে ব্যায়াম সম্পর্কে প্রচুর তথ্য পাওয়া যায়। সেখান থেকে জেনেও অনুশীলন করা যায়। আর এসব ব্যায়ামে জায়গাও কম লাগে। নিচের পাঁচটি ব্যায়াম আপনি নিজেই চেষ্টা করে দেখতে পারেন। জানাচ্ছেন তানজিনা চৌধুরী।
অ্যারোবিকস: সংগীতের তালে তালে ফ্রিহ্যান্ড কসরতেরই অপর নাম অ্যারোবিকস। অ্যারোবিকসে হাত, পা ও অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নাড়াচাড়া হয় বেশ নান্দনিক ভঙ্গিতে। অ্যারোবিকসের বিভিন্ন কসরত ও সুরের সিডি পাওয়া যায় দোকানে। যাঁরা নতুন শুরু করছেন অ্যারোবিকস, তাঁরা লো ইনটেনসিটির সিডি দিয়ে শুরু করতে পারেন।
ইয়োগা: তানজিনা চৌধুরীর পছন্দের দ্বিতীয় তালিকায় আছে ইয়োগা—মানে যোগব্যায়াম। এই ব্যায়ামে একটা আরামদায়ক ম্যাট ছাড়া তেমন কিছুই লাগে না। শুরু করার আগে বিভিন্নভাবে ঘরে হেঁটে নিতে পারেন ১০ মিনিট। কখনো স্বাভাবিকভাবে বা শুধু আঙুলে ভর দিয়ে। তারপর মনটা শান্ত করে শুরু করতে পারেন বিভিন্ন আসন, যেমন—বজ্রাসন, সূর্যপ্রণাম, অর্ধকোণাসন, ত্রিকোণাসন ইত্যাদি। শরীর, মন, দুটোরই ব্যায়াম হবে। একই সঙ্গে অভ্যাস করুন শ্বাসের ব্যায়াম বা প্রাণায়াম।
স্কিপিং: ছোটবেলায় বন্ধুদের সঙ্গে মিলে দড়িলাফ কে না খেলেছে, বলুন? তাই অভ্যাস করতে পারেন স্কিপিংয়ের অনুশীলন। যাদের ওজন অনেক বেশি বা যাদের হাঁটুতে ব্যথা থাকে, তাদের স্কিপিং এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
স্ট্যান্ড জগিং: স্ট্যান্ড জগিংয়ের জন্য আপনার কোনো যন্ত্রই প্রয়োজন হবে না। একটি স্থানে দাঁড়িয়ে খালি হাতে বা কিছু ধরে জগিং করা যেতে পারে। এতে আপনার পুরো শরীরের ব্যায়াম হবে। বেশি ক্লান্ত হতে না চাইলে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে পারেন।
ট্রেডমিল: তানজিনা চৌধুরীর সবশেষ পরামর্শ ট্রেডমিল। এটি আর কিছুই না, যান্ত্রিক হাঁটার ও দৌড়ানোর যন্ত্র। যাঁরা বাইরে বেরোতে চান না, তাঁরা ঘরের কোনায় দৌড়ে নিতে পারেন।
ছেলেদের জন্য
ঢাকার ফার্মগেটের হেলথ পয়েন্ট জিমের প্রধান প্রশিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ছেলেদের ব্যায়ামগুলো মেয়েদের ব্যায়াম থেকে একটু ভারী হয় এবং ছেলেদের ব্যায়ামে বেশি জোর দেওয়া হয় পেশি গঠনের প্রতি। তেমনই কিছু ঘরে বসে করার মতো ব্যায়াম হলো—
শোল্ডার সার্কেল: সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সামনে তাকান। ডান হাত ভাঁজ করে ডান কান বরাবর তুলুন, একটি নির্দিষ্ট তালে পেছনে, নিচে ও ওপরে ঘোরান, অন্তত আটবার ঘুরিয়ে একইভাবে বাম হাত ঘোরান। নিঃশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। একইভাবে অপর হাতেও করুন।
সাইড বেন্ডস: সোজা, স্বাভাবিকভাবে দাঁড়ান। দুই পা কাঁধের চেয়ে চওড়া জায়গা নিয়ে হাঁটু একটু বাঁকা করে দাঁড়ান। দুই হাত কোমরের পেছনে রাখুন। এবার মধ্যশরীর বা ধড় একটু উঁচু করে একবার ডানে ও একবার বামে বাঁকা করুন। এভাবে ধীর তালে ১৬ বার ব্যায়াম করুন। বাঁকা হতে শ্বাস ছাড়ুন, সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে শ্বাস নিন।
ট্রাংক টুইস্ট: সোজা, স্বাভাবিকভাবে দাঁড়ান। কাঁধের চেয়ে চওড়া জায়গা নিয়ে, হাঁটু হালকা বাঁকা করে, কোমরের পেছনে হাত নিয়ে দাঁড়ান। মেরুদণ্ড সোজা রেখে, পুরো মধ্যশরীরকে একবার ডান থেকে বামে, আবার বাম থেকে ডানে ঘোরান। ধীর ছন্দে ১৬ বার অভ্যাস করুন। নিঃশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে।
জেনে নিন
তানজিনা চৌধুরী বলেন, অনেক মানুষের ধারণা, ব্যায়ামের সময় পানি খেতে নেই। এ ধারণা একদম ভুল। তেষ্টা পেলেই গলা ভিজিয়ে নিতে পারেন। কারণ, ব্যায়ামের সময় শরীর থেকে ঘামের সঙ্গে পানিও বের হয়ে যায়। অনেকে খালিপেটে ব্যায়াম করতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে হালকা নাশতা, যেমন দুটি বিস্কুট, এককাপ চিনি-ছাড়া চা খেতে পারেন। আর ভারী নাশতা করে ফেললে অবশ্যই দেড় বা দুই ঘণ্টা পর ব্যায়াম করবেন। সকালে ব্যায়াম করাই ভালো। একদমই না পারলে খাবারের নিয়মটা মেনে বিকেলে বা সন্ধ্যায়ও ব্যায়াম করতে পারেন।
ব্যায়ামের যন্ত্রপাতি
ঢাকার তেজগাঁও, গুলশান লিংক রোডে বেশ কিছু দোকানে ব্যায়ামের যন্ত্রপাতি পাওয়া যাবে। এ ছাড়া পাবেন ঢাকার বসুন্ধরা শপিং মল, কলাবাগানসহ যেকোনো স্পোর্টসের দোকানে। তেজগাঁও-গুলশান লিংক রোডে অবস্থিত ভিআইপি স্পোর্টস অ্যান্ড ফিটনেসের স্বত্বাধিকারী মোতালেব খান জানান, আজকাল তরুণ, মধ্যবয়স্ক সবাই জিমের দিকে ঝুঁকছেন। তাঁর দেওয়া তথ্যে দেখা যায়, ট্রেডমিল বা রানিং মেশিনের দাম পড়ছে আট হাজার ৫০০ থেকে শুরু করে ৩০ হাজার, এমনকি তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ক্রসট্রেইনার আট হাজার থেকে দুই লাখ ৫০ হাজার, বাইক সাত হাজার থেকে এক লাখ ৫০ হাজার, অ্যাব কিং প্রো তিন হাজার ৮০০, ডাম্বেল কেজিপ্রতি ১৪০ থেকে ৩০০, পুশআপ বার ৬০০ থেকে ৮০০, বক্সিং ব্যাগ তিন হাজার থেকে ১০ হাজার, অ্যারোবিক স্টেপ দুই হাজার ৫০০, বক্সিং গ্লাভস ৮০০ থেকে এক হাজার ২০০, স্টিক বা বারবেল রড এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৮০০, রোলার স্লাইডার এক হাজার ২০০, ফাইভ স্ট্রিং ৯০০, ডোর জিম ৬০০, মেডিসিন বল এক হাজার ২০০, জিম বল এক হাজার, ক্যাপসুল বল এক হাজার ৫০০, স্কিপিং রোপ ৮০ থেকে ১৫০ এবং ইয়োগা ম্যাট ৮০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা।
প্রতিটি যন্ত্রের সঙ্গে দেওয়া বই অনুসরণ করে আপনি শুরু করতে পারেন আপনার ব্যায়াম। আজই এখনই।
খাদিজা ফাল্গুনী
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ১৯, ২০১১
মামুন.pb
কেন যেন ট্রেডিংমিল সম্পর্কে কিছু মানুষের নেতিবাচক মন্তব্য শুনেছি,তারা বলেছে এটা নাকি কাজের না।আপনার কি মনে তারা কেন একথাটা বলে থাকে।এটা যন্ত্রের ট্রুটি অর্থাত্ দ্রুত নষ্ট হবার কারণ নাকি রাতারাতি ইতিবাচক পরিবর্তন করার কারণ নাকি কেনার কিছু দিন পরেই উত্সাহ হারিয়ে যাবে বলে তারা এটাকে নেতিবাচক মন্তব্য করে?মূল কারণটা জানতে চাই।
Bangla Health
প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম জিনিসের মধ্যে পার্থক্য থাকবে। এই থেকেই অনেকে প্রাকৃতিক জিনিসের প্রতি পক্ষপাতিত্ব বেশি করেন।
কিছুদিন পর উৎসাহ হারিয়ে যাওয়া আরেকটি কারণ হতে পারে।
মামুন.pb
ধন্যবাদ।ট্রেডিংমেশিনের ভালো ব্রান্ড কোনগুলো।মোটামুটি ভালোগুলোর দাম কেমন হয়।
Bangla Health
কিনতে চাইলে দোকানে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন।