স্বাভাবিক ওজন থাকলেই যে হৃদবিপদ হবে না, এমন কথা নয়। সাম্প্রতিক গবেষণা পর্যালোচনা করে প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ আর্থার আগাটসন বলেন, স্বাভাবিক ওজন আছে যেসব নারীর, তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি থাকতে পারে স্থূল নারীদের মতোই। একসময় হৃদস্বাস্থ্য বিচার করতে গিয়ে বলা হতো, রক্তের মোট কোলেস্টেরল ২০০-এর নিচে থাকলে বেশ নিরাপদ। কিন্তু এখন জানা গেছে, এর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো কোলেস্টেরল ও লাইপোপ্রোটিনের ধরন: যেমন—এলডিএল, এইচডিএল, কোলেস্টেরল কণার আয়তন, রক্তের ট্রাইগ্লিসাবাইড মান—এগুলো হৃদস্বাস্থ্য সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য বেশি প্রযোজ্য।
তেমনি শরীরের মোট ওজন এবং হৃদস্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে আমাদের যে ধারণা এতেও পরিবর্তন এসেছে। শরীরের কী পরিমাণ মেদ এবং কোথায় এ মেদ বিস্তৃত, এটি হচ্ছে বড় বিবেচ্য বিষয়। বিখ্যাত মেয়ো ক্লিনিকের বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার এটি। সহস্র সহস্র পূর্ণবয়স্ক লোকের নানা স্বাস্থ্যসূচকের সঙ্গে দেহের ওজন ও বডি মাস ইনডেকস (বিএমআই) তুলনা করে তাঁরা দেখেছেন, স্বাভাবিক দেহের ওজন ও বিএমআই এমন অর্ধেকেরও বেশি লোকের দেহের অভ্যন্তরে মেদ, হূদ্যন্ত্র ও বিপাকে গোলযোগ রয়েছে। এর মানে তাদের করোনারি রোগ, ডায়াবেটিস ও অন্যান্য ক্রনিক রোগের ঝুঁকি স্থূল লোকদের সমান।
ওজনে ভারাক্রান্ত হওয়া যাবে না, তলপেটে মেদ বড় কথা: রক্তের মোট কোলেস্টেরলের মতোই দেহের মোট ওজন স্বাস্থ্যের অন্যতম পরিমাণ বটে, সার্বিক দৃষ্টিতে একমাত্র সূচক নয়। মোট ওজন শরীর থেকে ঝেড়ে ফেলা ভালো। তবে বিএমআই সুস্থমানে থাকলেই হূদেরাগের ঝুঁকি এড়ানো গেল, তা ঠিক নয়। মূল বিপদ অনুধাবনের জন্য।
নাভি বরাবর কোমরের বেড় মাপা ভালো। ওজন যদি মোটামুটি স্বাভাবিক থাকে এবং নাভির ঠিক ওপর বরাবর কোমরের বেড় ৩৫ ইঞ্চি বা বেশি (পুরুষের জন্য ৪০+ ইঞ্চি) থাকে, তাহলে এনডব্লিউও আছে বুঝতে হবে। দেহমেদ ও পরিমাপ করে নেওয়া যায়। বিশেষজ্ঞরা তা করতে পারেন। এটি যদি ৩০ শতাংশের বেশি থাকে (২০ শতাংশ পুরুষের ক্ষেত্রে), তাহলে বুঝতে হবে, এনডব্লিউও আছে।
রক্ত পরীক্ষা চাই: এনডব্লিউওর সতর্কসংকেত হলো নিম্নমান এইচডিএল (এলডিএল ও মোট কোলেস্টেরল) স্বাভাবিক থাকতে পারে। বেড়ে যাবে রক্তে ট্রাইগ্লিসাবাইড, সুগার। বেড়ে যেতে পারে রক্তচাপ।
তলপেটে মেদ বড় কথা: এনডব্লিউও চিহ্নিত হলে, অন্তর্যন্ত্রের মেদ লক্ষ করতে হবে। চেষ্টা চাই কমানোর। ময়দার রুটি, মিলে ছাঁটা চাল, চিনি, মিষ্টি-মিঠাই, পরিশোধিত সব শর্করা পরিহার করতে হবে। যোগ করতে হবে মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট (যেমন, জলপাই তেল), খাদ্যে। ব্যায়াম করতে হবে নিয়মিত মেদ পোড়ানোর জন্য, স্ট্রেংথ ট্রেনিং ব্যায়াম ক্ষীণ দেহভার গঠনের জন্য (Lean body mass)।
মেদ অনুসরণ: শরীর-ওজন নজর করার জন্য স্কেলে শরীরের ওজন দেখার মতোই দেহমেদকেও নজরদারিতে রাখতে হবে। পরীক্ষা কমিয়ে নিন। হয়তো দেহভাব বেশি দেখা গেল, তবু ভাবনা নয়। যদি দেহমেদের মাপ ৩০ শতাংশের কম (পুরুষ ২০ শতাংশ), রক্তের পরীক্ষার ফলাফল স্বাভাবিক, তাহলে ওই ব্যক্তি মেদদেহী হলো স্বাস্থ্যবান। অনেকে অ্যাথলেট ও সে রকম ফ্যাট এবং ফিট, তাই স্মার্ট খান, ব্যায়াম করুন।
সজল থাকুন: প্রচুর পানি পান করুন। রক্তচাপ থাক নিরাপদ।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল
সাম্মানিক অধ্যাপক, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ১৭, ২০১১
Leave a Reply