কিছু স্বাস্থ্যকর খাবার আছে, যেগুলো সব পুষ্টিবিদের পরামর্শে থাকে। তবুও এমন খাবার রয়ে যায় এদের আড়ালে, যেগুলো খুব পুষ্টিকর হলেও সমাদর নেই এদের, নজরও নেই এদের প্রতি।
খাবার জন্য ভালো ভালো খাদ্য বেছে নেওয়া সহজ কাজ নয়। ছয়টি খাবারের কথা বলি, যেগুলোর সমাদর নেই, তবে খাবারে যোগ করলে খুব পুষ্টিকর হবে বেলার খাবার। ভালো খাবারের নানা সংজ্ঞা।
খাবারটি গোটা খাবার হবে, হোল ফুড। কেবল তাই? খাবার হবে প্রিয়, পরিচিত, সহজলভ্য, পুষ্টিতে ঠাসা, দামেও সস্তা, স্বাদুও হতে হবে। আমরা ব্লু বেবি, বাদাম, স্যামন মাছ—এসবকে সুপার ফুড মনে করি। কিন্তু সমাদর নেই এমন খাবার হতে পারে তারকা খাবার।
১) শিম ও ডালজাতীয় খাবার: মুদির দোকানে গেলে অনেকে এদের কেনেন, আবার কারও কাছে এদের আদর নেই। শিম হলো সুপারস্টার প্রোটিন, আঁশ, জটিল শর্করা, লৌহ, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম ও দস্তা। সপ্তাহে তিন কাপ শিম খেলে বেশ ভালো। ‘নিউট্রিশন অ্যাট ইওর ফিঙ্গারটিপস’ বইটি লিখে খ্যাত ইলিসাজায়েড বলেন, ডাল ও শুটিসমৃদ্ধ খাবার খেলে ওজন হ্রাস হয়, কমে হূদক্ষতিকর এলডিএল ও বাড়ে এইচডিএল। ভালো স্বাদু খাবার। সবজি সঙ্গে স্যুপ ও স্টু, সালাদে খাওয়া যায় বিনস ও ডাল।
২) তরমুজ: গ্রীষ্মের জনপ্রিয় খাদ্য হলো তরমুজ। প্রাণহরা, তৃষাহরা। মিষ্টি বলে অনেকে ‘চিনি খাবার’ মনে করে খান না। তা নয় কিন্তু। এক্সপেকট দি বেস্ট বই লিখে খ্যাত এলিজাবেথ ওয়ার্ড বলেন, সবার খাবারে থাকবে তরমুজ। খেতে মজা, মিষ্টি, রসাল। লো-ক্যালরি, ভিটামিন এ, সি, পটাশিয়াম ও লাইকোপ্যানে ভরপুর। এতে আছে প্রচুর পানি, তাই শরীরের পানির চাহিদাও পূরণ করে।
৩) মিষ্টি আলু: মিষ্টি আলু মিষ্টি বলে অনেকে মনে করেন হাই-ক্যালরি ও শর্করাভর্তি, তা ঠিক নয় কিন্তু। আমেরিকান ডায়েট অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র হিথার ম্যানগিয়ারি বলেন, ‘মিষ্টি আলু হলো পুষ্টির বিচারে তারকা খাবার, সেরা সবজিগুলোর অন্যতম। এতে আছে প্রচুর বিটাক্যারোটিন, ভিটামিন সি, আঁশ, পটাশিয়াম। সেঁকে, হালকা ভেজে, ভাপে সেদ্ধ করে, সবজি রান্না করে কত ভাবেই না খাওয়া যায় মিষ্টি আলু। আমার স্ত্রী চমৎকার নিরামিষ রাঁধেন এবং তাঁর প্রায় সব সবজি রেসিপিতে থাকে মিষ্টি আলু, আর এটি যোগ করলে খুব স্বাদু হয় নিরামিষ।
৪) লাল বাঁধাকপি: কসিফেরাস সবজির অন্যতম লাল বাঁধাকপিতে আছে প্রচুর আঁশ, ভিটামিন এ, ডি, কে ও ফলেট, অনেক খনিজ এবং এক কাপ বাঁধাকপি কুচিতে রয়েছে মাত্র ২২ ক্যালরি। প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এতে, ক্যানসাররোধী গুণ। খাওয়া যায় কাঁচা, সেদ্ধ, ভাপে সেদ্ধ, রান্না স্যুপে, স্যালাতে, সবজিতে, স্যান্ডউইচে। খাবারও হবে বর্ণিল।
৫) টমেটো।
জর্জিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমিরেটাস ক্রিস রজেন ব্লুম বলেন, ‘অনেকে বলেন, কাঁচা এবং সেদ্ধ না করে টমেটো ভালো, কিন্তু টমেটো রান্না করলে এ থেকে বেরিয়ে যায় কিছু রোগ প্রতিরোধী লাইকোপ্যান, তাই দেহে এর শোষণ হয় ভালো।
২০০৯ সালে জার্নাল অব অনকোলজিতে প্রকাশিত গবেষণা নিবন্ধে দেখা যায়, টমেটোসমৃদ্ধ খাবার খেলে রোধ করা যায় প্রোস্টেট ক্যানসার এবং শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট লাইকোপ্যান রোধ করে অন্যান্য ক্যানসারও। টিনজাত টমেটোও কম পুষ্টিকর নয়। তাজা টমেটো আরও ভালো।
৬) সহজ, সরল, চর্বিহীন দুধের দধি
ঘরে পাতা টক দই। সর তুলে নিয়ে চর্বিহীন দুধের দধি। কাঁচা টক দই। দধিতে আছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আমিষ, দস্তা, ভিটামিন বি৬, বি১২, প্রোবায়োটিক কালচার। সজীব জীবাণু। ল্যাকটোজ কম, আমিষ বেশি। কমে কোলস্টেরল, সহজ পাচ্য। স্বাস্থ্যকর।
শুভাগত চৌধুরীর
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস
বারডেম হাসপাতাল, সাম্মানিক অধ্যাপক
ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ২৭, ২০১১
Leave a Reply