জানুয়ারি ২০০৮-এ প্রকাশিত দুইটি গবেষণার ফলাফল থেকে জানা যায় যে, বার বার টনসিল প্রদাহে আক্রান্ত শিশু ও বয়স্ক রোগীদের টনসিল অপারেশন করলে জীবন-যাত্রার মানের যথেষ্ট উন্নতি ঘটে। একটি গবেষণায় ৯২ জন প্রায়ই টনসিল প্রদাহে আক্রান্ত শিশুর পিতা-মাতার মতামত সংগ্রহ করা হয় টনসিল অপারেশনের পূর্বে, অপারেশনের ৬ মাস ও ১ বছর পর।
এক বছরের মধ্যে ৩ বার বা তার চেয়েও বেশি টনসিল প্রদাহ হলে তাকে দীর্ঘমেয়াদী টনসিলাইটিস (Recurrent Tonsillitis) বলা হয়।
৫৮ জন শিশুর ৬ মাসের এবং ৩৮ জন শিশুর ১ বছরের অপারেশন পরবর্তী তথ্য প্রদান করা হলোঃ নিউইয়র্কের ব্রুকলিনস্থ স্টেটস ইউনিভার্সিটির ডাউনস্টেট মেডিক্যাল সেন্টারের ডাঃ এনএ গোল্ডস্টেইন রয়টার্স হেলথকে জানান যে, গড় বয়স ১০.৬ বছরের শিশুদের মধ্যে টনসিল অপারেশনের পর জীবন-যাত্রার মানের উল্লেখযোগ্য উন্নতি, যেমন-তাদের শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ায়, খাওয়া-দাওয়া এবং আচার ব্যবহারে উন্নতি লক্ষ্যণীয়।
উপরোক্ত শিশুদের অপারেশনের পর মানসিক, শারীরিক ও সামাজিক বিকাশ ঘটেছে এবং স্বাস্থ্যের যথেষ্ট উন্নতি ঘটেছে। ডাঃ গোল্ডস্টেইনের মতে পিতা-মাতারা আরো জানিয়েছেন যে, শিশুদের গলায় প্রদাহে ভোগেনি, ডাক্তারের কাছে যেতে হয়নি এবং অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করতে হয়নি। এমনকি শিশুদের ডে-কেয়ার বা স্কুলের কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক রয়েছে।
একইভাবে বার বার টনসিল প্রদাহে আক্রান্ত ৭২ জন বয়স্কদের অপারেশন পূর্ববর্তী এবং ৬ মাস ও ১ বছর পরবর্তী জীবন-যাত্রার মানের তুলনা করা হলে দেখা গেছে যে, অপারেশনের পর দৈনন্দিন কাজে অধিক উন্নতি ঘটেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যারোলিনাস্থ ডিউক ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের ডাঃ ডেভিড এল উইটসেল ও তার সহকর্মীরা জানান যে, ৯৮% রোগীর সামান্য ইনফেকশন হয়েছে এবং ৭৭% পূর্ণ আরোগ্য লাভ করেছে। বয়স্ক রোগীরা আরো জানায় যে, গলা ব্যথা, টনসিলে ব্যথা আর হয়নি, শ্বাস নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ হয়নি এবং ডাক্তারের কাছেও যেতে হয়নি। টনসিল অপারেশন একটি নিয়মিত অপারেশন যা বয়স্কদের তুলনায় শিশুদের ক্ষেত্রে অধিক পরিমাণে করা হয়। নিউইয়র্কের ওয়েইল করনেল মেডিক্যাল কলেজের ডাঃ মাইকেল জি স্টুয়ার্ট, যিনি এই গবেষণার সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না, বলেন যে, বার বার টনসিলে আক্রান্ত রোগী এবং টনসিল অপারেশনের ক্ষেত্রে উক্ত গবেষণাগুলো বিশেষ অবদান রেখেছে।
টনসিল অপারেশনের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। উক্ত প্রবন্ধের লেখক আল্ট্রাসনিক পদ্ধতিতে রক্তপাতহীন টনসিল অপারেশন করেন। বাংলাদেশের কমফোর্ট হাসপাতাল ১৬৭/বি, গ্রীন রোড ঢাকায় নিয়মিত আল্ট্রাসনিক টনসিল অপারেশন হয়। এই পদ্ধতিতে সুবিধাসমূহ হচ্ছে, রক্তপাতহীন, নিরাপদ, অত্যন্ত কম সময় লাগে, অপারেশনের পরেই রোগী মুখে খেতে পারে এবং অতি শীঘ্র আরোগ্য লাভ করে।
——————–
অধ্যাপক ডাঃ এম আলমগীর চৌধুরী
নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ সার্জন
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইএনটি
মেডিক্যাল কলেজ ফর উইমেন এন্ড হসপিটাল, উত্তরা, ঢাকা।
দৈনিক ইত্তেফাক, ১৬ মার্চ ২০০৮
Leave a Reply