প্রায়ই রোগীরা বলে, ‘ডাক্তার সাহেব, আমি শক্ত জায়গায় বসতে পারি না বা বসলে মেরুদণ্ডের শেষ হাড়ে বেশ ব্যথা হয়। সামনের দিকে ঝুঁকে বসলে ব্যথা কিছুটা কম অনুভব হয়। রিকশায় বসলে হাতে ভর দিয়ে কোমর আলগা করে রাখি।’
এ এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। এ রকম রোগে না ভুগলে এই অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতা উপলব্ধি করা যায় না। চিকিৎসাবিজ্ঞানে একে ককসিডাইনিয়া বলে। ককসিডাইনিয়া বা মেরুদণ্ডের শেষ হাড়ের ব্যথা ১৫৮৮ সালে প্রথম চিহ্নিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে স্যাম্পসন ১৮৫৯ সালে ককসিডাইনিয়া বা ককসিগোডাইনিয়া বা মেরুদণ্ডের শেষ হাড়ের ব্যথা নামকরণ করেন। ককসিস, মেরুদণ্ডের শেষের হাড় এবং ৩-৫ সেগমেন্টের সমন্বয়ে গঠিত। তবে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে চারটি সেগমেন্ট থাকে এবং বিভিন্ন ধরনের পেশি, লিগামেন্ট ও টেনডনের সঙ্গে যুক্ত। ককসিস আকৃতিতে সামনের দিকে অবতল লেন্সের মতো এবং পেছনের দিকে উত্তল লেন্সের মতো। ককসিস পেশি, লিগামেন্ট বা টেনডনের মাধ্যমে মলদ্বারের স্ট্যাবিলিটি নিয়ন্ত্রণ করে এবং মলের বেগ নিয়ন্ত্রণ করে। বসলে, দুই পাশে ইসচিয়াল টিউবেরোসিটি এবং মাঝখানে ককসিস শরীরের ওজন বহন করে। পেছনে ঝুঁকে বসলে ককসিসের ওপর চাপ বেশি পড়ে এবং সামনে ঝুঁকলে চাপ কম পড়ে। তাই ককসিডাইনিয়া বা মেরুদণ্ডের শেষ হাড়ের ব্যথার রোগীরা সামনের দিকে ঝুঁকে বসে।
কারণ: এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে কারণ জানা নেই। তবে আঘাত, বিশেষ করে পেছনের দিকে পড়ে গেলে এমনটা হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে প্রদাহ থাকলেও হতে পারে। প্রসবের সময় আঘাত বা প্রলোং ডেলিভারি হলে। অনেক সময় সার্জারির কারণেও হতে পারে। মিসএলাইনড, শক্ত বা লম্বা ককসিসের কারণেও এমনটা হয়। এ ছাড়া পেশির সংকোচন, পাইলোনাইডাল সাইনাস, পাইলোনাইডাল সিস্ট, মেনিসকাল সিস্ট, রিপিটেটিভ স্ট্রেইন যেমন দীর্ঘক্ষণ মোটর বা বাইসাইকেল চালানোর ফলেও এই ব্যথা হতে পারে। ইনফেকশন, ক্যালসিয়াম ডিপসিশন এবং টিউমারও এটার কারণ হতে পারে।
লক্ষণ: ককসিডাইনিয়া বা মেরুদণ্ডের শেষ হাড়ের ব্যথা পুরুষের থেকে মহিলাদের পাঁচগুণ বেশি হয়। বসার সময় বা বসার পর ব্যথা অনুভূত হয় এতে। দীর্ঘক্ষণ বসলে ব্যথা বেড়ে যায়। শক্ত জায়গায় বসা যায় না। কখনো বসা থেকে দাঁড়াতে গেলে ব্যথা হয়। আবার কখনো নরম জায়গায় বসলেও ব্যথা হয়। পেছনে হেলান দিয়ে বসলে বেশি ব্যথা হয় কিন্তু সামনে ঝুঁকে বসলে ব্যথা কম হয়। গভীর ব্যথা হয় ককসিসের আশপাশে। রিকশায় বসলে হাতে ভর দিয়ে কোমর আলগা করে রাখতে হয়। মলত্যাগ করার সময় বা আগে ব্যথা হয়। সহবাসের সময়ও ব্যথা হতে পারে এর কারণে।
প্রতিকার: ককসিডাইনিয়া বা মেরুদণ্ডের শেষ হাড়ের ব্যথার চিকিৎসা নির্ভর করে এর কারণগুলোর ওপর। সাধারণ পরীক্ষা, এক্স-রে বসা ও দাঁড়ানো অবস্থায় এবং কখনো কিছু সোফিসটিকেটেড পরীক্ষার প্রয়োজন হয় ককসিডাইনিয়ার সঠিক কারণ জানার জন্য। পরীক্ষাগুলোর মধ্যে আছে সিটি স্ক্যান ও এমআরআই।
চিকিৎসা: উপযুক্ত স্ট্রেসিং ও পেশি শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম করতে হবে। রিপিটেটিভ স্ট্রেইন যেমন দীর্ঘক্ষণ মোটর বা বাইসাইকেল চালানো যাবে না। শক্ত জায়গায় বসা নিষেধ। নরম জায়গায় বসতে হবে। বসার জন্য ককসিস কুশন ব্যবহার করা যায়। গরম সেক দেওয়া। বেদনানাশক ওষুধ সেবন। স্টেরয়েড ও লোকাল অ্যানেসথেটিক এজেন্ট ইনজেকশন নেওয়া যেতে পারে। নেওয়া যেতে পারে অ্যান্টিসাইকোটিক ড্রাগ থেরাপি।
ককসিস সার্জারি: দীর্ঘদিন ব্যায়াম, মেডিকেল চিকিৎসা এবং স্টেরয়েড ও লোকাল অ্যানেসথেটিক এজেন্ট ইনজেকশন দেওয়া সত্ত্বেও যদি ককসিডাইনিয়া বা মেরুদণ্ডের শেষ হাড়ের ব্যথা না কমে সে ক্ষেত্রে ককসিস সার্জারি করাতে হবে। তবে সার্জারির সময় অতি সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।
জি এম জাহাঙ্গীর হোসেনী
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ০৬, ২০১১
kamran Razib
valo bolacan