চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে স্ট্রোকের (Stroke) ঝুঁকি এড়াতে স্বাস্থ্যসচেতনতা খুবই জরুরী। উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস এবং মেদবহুলতা স্ট্রোকে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বাড়ায়। অনেকেই স্ট্রোকের উপসর্গ না জানার কারণে মিনিস্ট্রোকে আক্রান্ত হবার ব্যাপারে একেবারেই অজ্ঞ থাকেন। একবার মিনিস্ট্রোকে আক্রান্ত হলে পরবর্তীতে পূর্ণ স্ট্রোকে আক্রান্তের ঝুঁকি বেড়ে যায়। মিনিস্ট্রোকের বেলায় ধমনী বা রক্তনালীতে সাময়িক রক্ত জমাট বেঁধে মস্তিষ্কে সাময়িকভাবে রক্তপ্রবাহ বন্ধ করে দেয়। মিনিস্ট্রোকে সাধারণত মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতি হয় না তবে এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ জরুরী। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যথার্থভাবে রোগ নির্ণয় করতে পারেন যেমন ঘাড়ের ক্যারোটিড ধমনীর গতিপথ শুকিয়ে যাওয়া (ক্যারোটিড স্টেনোসিস) ইত্যাদি বিষয়ে আগাম সতর্কতা বলে দিতে পারেন।
বাল্টিমার মেরিল্যান্ড স্কুল অব মেডিসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. পামেলা পিকী স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে কয়েকটি পরামর্শের উল্লেখ করেছেন।
এগুলো হচ্ছেঃ
এক. উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ রাখা।
দুই. বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ সেবন করা। অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে তবে তা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্রহণ করা উচিত নয়।
তিন. রঙ্গীন ফলমূল এবং শাক-সবজি গ্রহণ করা। এসব ফলমূল এবং শাক-সবজি দিনে কমপক্ষে পাঁচবার খেলে স্ট্রোকের ঝুঁকি শতকরা ৩০ ভাগ কমে। বিভিন্ন ধরনের লেবুজাতীয় ফল, ব্রকলী, সবুজ এবং রঙ্গীন শাক-সবজি খুবই উপকারী।
চার. ব্যায়াম, হাঁটা-চলা ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতিদিন দেহকে সক্রিয় এবং কর্মব্যস্ত রাখা। সর্বোপরি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।
পাঁচ. শরীরের কোনো অংশ অবশ বোধ করলে, চোখে ঝাপসা দেখলে হঠাৎ করে কথা বলতে বা কথা বুঝতে অসুবিধা হলে, হাঁটতে অসুবিধা, প্রচণ্ড মাথাব্যথাসহ অন্যান্য শারীরিক ও মানসিক উপসর্গ হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া। মনে রাখতে হবে স্ট্রোকে আক্রান্তের পরবর্তী তিন ঘন্টার মধ্যে অব্যাহত জরুরী চিকিৎসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে জীবন পদ্ধতি স্বাস্থ্যসম্মত করে তোলার পাশাপাশি সতর্কতা অবলম্বন স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
ধূমপানে অস্থি ক্ষয়
সানদিয়াগোর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল বিশেষজ্ঞরা পর্যবেক্ষণ করেছেন যে, ধূমপান হিপ বা কোমরের অস্থি-ঘনত্ব (ঈমভণ ঢণভ্রর্ধহ) কমিয়ে দিতে পারে। এই অস্থি ক্ষয় কড়া ধূমপায়ীদের মধ্যে সবচাইতে বেশি। গবেষকরা আরো উল্লেখ করেন যে, অস্থি ঘনত্বের এই ক্রমহ্রাস ষাটোর্ধ্ব লোকদের হিপ ফ্রাকচার বা কোমরের হাড়ভাঙ্গার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এই অস্থি ক্ষয় বা হিপ ফ্রাকচারের ঝুঁকি ধূমপায়ী মহিলাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। উল্লেখ্য, ধূমপান ছেড়ে দিলে অস্থিক্ষয় বা হিপ ফ্রাকচারের ঝুঁকিও কমতে থাকে।
—————–
কায়েদ উয জামান
সহকারী অধ্যাপক, জীববিজ্ঞান বিভাগ, শহীদ জিয়াউর রহমান কলেজ, জামালপুর।
দৈনিক ইত্তেফাক, ১৬ মার্চ ২০০৮
Leave a Reply