সাধারণ এই স্বাস্থ্য সমস্যা ডায়াবেটিস হলে রক্তে বেড়ে যায় শর্করার মান। কখন হয় ডায়েবেটিস? অগ্নাশয় নষ্ট হয়ে শরীর যখন ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে না তখন হতে পারে ডায়েবেটিস। একে বলে টাইপ ১ ডায়েবেটিস। আবার শরীরের কোষগুলো যদি ইনসুলিন ব্যবহার করতে অক্ষম হয় এবং অগ্নাশয় ও কম ইনসুলিন উৎপাদন করে, তখনো হতে পারে ডায়েবেটিস। একে বলা হয় টাইপ ২ ডায়েবেটিস। আগে টাইপ ১ ডায়েবেটিসকে বলা হয় তরুণকালীন ডায়েবেটিস এবং টাইপ ২ ডায়েবেটিসকে বলা হত বয়স্কলোকের ডায়েবেটিস। এখন দেখা গেছে, বয়স নির্বিচারে যে কোনো রকমের ডায়েবেটিস হতে পারে। সেজন্য তরুণ ডায়েবেটিস বা বয়স্কদের ডায়েবেটিস নামগুলোর আর প্রচলন থাকছে না। টাইপ-১ ডায়েবেটিসকে ইনসুলিন নির্ভর এবং টাইপ-২ ডায়েবেটিসকে ইনসুলিন-অনির্ভর ডায়েবেটিস বলা হচ্ছে। অবশ্য টাইপ-২ ডায়েবেটিসেও ক্ষেত্র ও অবস্থা বিশেষে ইনসুলিন প্রয়োগ করতে হয়।
ডায়েবেটিসের সচরাচর দৃষ্ট যেসব জটিলতা সেগুলো হলঃ চোখের ক্ষতি, স্নায়ুরোগ, কিডনির সমস্যা, অবশ্য হার্টএটাক, স্ট্রোক, হাড় ও পেশীরোগ এবং সংক্রমণের মত সমস্যা ও পুনঃপুনঃ হতে পারে, রোগ জটিল হলে। চিকিৎসা হলে এক সঠিক সময়ে ব্যবস্থাপনা করলে এসব জটিলতা ঘটানো দেরী করানো যায় এমনকি রোধও করা যায়।
কি কারণে হতে পারে ডায়েবেটিস?
ব্যক্তি বিশেষে ডায়েবেটিস কেন হয়, তা অজানা, তবে আছে নানা মত এ ব্যাপারে। গবেষণা চলছে, কি করে এই রোগ হয় তা জানার জন্য। আছে কিছু ঝুঁকি উপাদান, যেমন-
-বংশগতি।
-মেদস্থূলতা।
-ওষুধ।
-ভাইরাস সংক্রমণ।
বর্তমানে বলা হচ্ছে যেসব খাদ্যের গ্লাইসিমিক ইনডেক্স খুব উঁচু, এসব খাদ্য বেশি বেশি খেলে পরিণতিতে হতে পারে ডায়েবেটিস। যেসব খাবার খাওয়ার পর পরই অন্য খাবারের তুলনায় অনেক দ্রুত রক্তের সুগার মান বাড়িয়ে দেয় সেসব খাবারের গস্নাইসিমিক ইনডেক্স উঁচু এমন বলা হয়। তবে এও ঠিক অনেক মানুষ এসব খাবার আকচার খাচ্ছে তবে তাদের ডায়েবেটিস হচ্ছে না।
সুগার ও ডায়েবেটিস
ডায়েবেটিস আছে এমন এক রোগীর জন্য পরামর্শ হল, যেসব খাবারে সুগার বেশি সেসব খাবার পরিহার করা এবং এমন খাদ্যবিধি ও ওষুধবিধি মেনে চলা যাতে রক্তের শর্করা মান থাকে স্বাভাবিক ও সুস্থিত। রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ ভালোভাবে করলে রোগটির জটিলতা অনেক এড়ানো সম্ভব। রোগটির মূল বৈশিষ্ট্য যেহেতু রক্তের সুগার মানের বৃদ্ধি এবং যেহেতু উঁচুমান সুগারকে স্বাভাবিক পর্যায়ে নামিয়ে আনাই হলো চিকিৎসার প্রধান লক্ষ্য, সেজন্য খাদ্যের শর্করা পরিমাণ এককভাবে এ রোগের জন্য দায়ী নয়।
রক্তে সুগার মান বেড়ে যাওয়া হলো ডায়েবেটিসের পরিণতি, কারণ নয়।
নিউমোনিয়ার কারণ যেমন কফ-কাশ হয়, তেমনি রক্তে সুগার মান বৃদ্ধি ও ডায়েবেটিসের কারণ নয়, পরিণতি মাত্র।
আর একটি কথাঃ এ কথা ঠিক টাইপ-২ ডায়েবেটিস বোধ করতে মেদস্থূলতা এড়ানো প্রয়োজন তবে এজন্য বিশেষ বিশেষ খাদ্য খেলে তা এড়ানো যাবে এমনও নয়। আর সব ডায়েবেটিস রোগী স্থূল একথাও ঠিক নয়। এসব রোগীর ক্ষেত্রে বংশগতি এবং অনাবিষ্কৃত অনেক উপাদান দায়ী থাকতে পারে।
শেষ কথাঃ
দেহের ওজন সুমিত রাখা ছাড়া ডায়েবেটিস প্রতিরোধে খাদ্যবিধি বা অন্য উপায় যে খুব সফল তা নয়। এই রোগ বিকাশের পেছনে যে জীনগত, ইম্যুন ব্যবস্থাজনিত বা অন্যান্য পরিবেশগত উপাদান রয়েছে সেসব সনাক্ত করার জন্য চলছে গবেষণা, বিশেষ করে যেসব লোকের ঝুঁকি বেশি এদের ক্ষেত্রে এ রোগ প্রতিরোধ বেশি জরুরী। তবে সুগার সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেলে ডায়েবেটিস হয় এ তথ্যটি অবশ্যই সঠিক নয়।
২৮ ফেব্রুয়ারি পালিত হচ্ছে ডায়েবেটিস সচেতনতা দিবস। এ দিন জাতীয় অধ্যাপক মোঃ ইব্রাহীম অন্যান্যদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ডায়েবেটিক সমিতি। এ দিনটি স্মরণীয় এজন্য যে চিকিৎসা ক্ষেত্রে এ দেশে সেদিন সূচিত হয়েছিল একটি নতুন মাইলফলক।
———————————–
অধ্যাপক ডাঃ শুভাগত চৌধুরী
ডাইরেক্টর, ল্যাবরেটরী সার্ভিসেস,
বারডেম, ঢাকা।
দৈনিক ইত্তেফাক, ১৬ মার্চ ২০০৮
Leave a Reply