নবজাতকের চোখ খোলা নিয়ে একটা উৎকণ্ঠা প্রায়ই দেখা যায় নিকটাত্মীয়দের মধ্যে। নবজাতকের চোখ না খোলাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পরিণত নবজাতক চোখ না খুললে তা অবশ্যই চিন্তার বিষয়। আবার চোখ খুললেও শুরু হয় চোখের নানা সমস্যা নিয়ে চিন্তা। নবজাতকের চোখের কিছু সাধারণ সমস্যা এখানে আলোচনা করা হলো।
অন্ধত্ব
চোখের দৃষ্টি প্রায় সাত বছর বয়স পর্যন্ত পরিণত হতে থাকে। প্রথম কয়েক মাস সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় সচেতন থাকা দরকার। চোখের সামনে কোনো তৈরি প্রতিচ্ছবি না থাকলে চোখের দৃষ্টিশক্তি বিকাশ লাভ করে না। যেমন: চোখের পাতা ঝুলে পড়লে, জন্মগত ছানি, গ্লুকোমা থাকলে এগুলো জন্মের পর পরই চিকিৎসার প্রয়োজন।
ট্যারা চোখ
সুস্থ নবজাতকের দুই চোখ অনেক সময় একই লাইনে থাকে না। ছয় সপ্তাহ বয়সের পরও যদি চোখ ট্যারা মনে হয়, তাহলে চক্ষুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। খুব অল্প ক্ষেত্রে জন্মগত ছানি বা টিউমারের জন্য চোখ ট্যারা হতে পারে। এ জন্য স্বল্প সময়ের মধ্যে চক্ষুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই উত্তম।
চোখের মণি ওপরে-নিচে ঘুরে থাকা
জন্মের পর প্রথম কয়েক সপ্তাহ চোখের মণি ওপর বা নিচের দিকে বেশি ঘোরানো থাকতে পারে। অর্থাৎ স্বাভাবিক সময়ে চোখের মণির ওপরে সাদা অংশ পাতার নিচে দেখা যেতে পারে। তবে তা যদি কয়েক সপ্তাহ বয়সের পরও দেখা যায়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ছোট বা অনুপস্থিত অক্ষিগোলক
অনেক সময় অক্ষিগোলক স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট হতে পারে। এটা বড় কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না। তবে অত্যধিক ছোট চোখ দেখা গেলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। সাধারণত এর সঙ্গে অন্যান্য শারীরিক সমস্যাও যুক্ত থাকে।
জন্মগত ছানি
জন্মগত ছানি শুনতে যত ভয়ংকর, চিকিৎসার দিক দিয়ে ততই আশাপ্রদ। তবে খুব দ্রুত এ রোগের নির্ণয় ও চিকিৎসার প্রয়োজন। জন্মের পরপরই অপারেশন ও কন্ট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করাই এর একমাত্র চিকিৎসা। কৃত্রিম লেন্স চোখের ভেতর বসানোর খুব একটা উপকারিতা পাওয়া যায়নি।
নীল চোখ
অনেক সময় চোখের সঙ্গে ত্বকের অত্যধিক সাদা রং ও আলোক সংবেদনশীলতা থাকে। দৃষ্টিশক্তি খুবই দুর্বল থাকে। চোখ কাঁপে, চোখের মণি স্বচ্ছ থাকে ও রেটিনা হয় বর্ণহীন।
চোখের পাতা ঝুলে পড়া
অনেক সময় চোখের পাতা ঝুলে পড়ে। মাংসপেশি বা স্নায়ুর দুর্বলতার কারণে এমনটি হতে পারে।
সমস্যাটি খুব তীব্র না হলে চার থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করা যেতে পারে। তবে চোখের পাতার কোনো টিউমারের জন্য এমন হলে অতিদ্রুত চিকিৎসা দরকার।
অপরিণত নবজাতকের রেটিনার সমস্যা
একসময় মনে করা হতো, ভুল মাত্রায় অক্সিজেন প্রয়োগের কারণেই সমস্যাটি হয়। তবে এখন দেখা যায়, অন্যান্য কারণেও এটি হতে পারে এবং অন্ধত্বের কারণ হতে পারে। অতি কম ওজন ও হ্রস্ব গর্ভকালও এ অবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত। অপরিণত যেসব নবজাতককে রক্ত দিতে হয়, তাদেরও রেটিনার সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। রেটিনার সমস্যায় লেজার ও ক্রায়োথেরাপির কার্যকারিতা রয়েছে।
মাহবুব মোতানাব্বি
নবজাতক ও শিশুবিশেষজ্ঞ, সহকারী অধ্যাপক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ১৫, ২০১১
Leave a Reply