হার্ট স্মার্ট বলে কথা। হার্ট সম্পর্কে অনেকেই জানেন অনেক কিছু। আবার কিছু কিছু জিনিস জানার বাইরেও রয়ে যায়।
* কেউ বলেন, হার্ট অ্যাটাকের সময় হূদ্স্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়, এটা ঠিক নয়। হার্ট অ্যাটাকের সময় হূদ্যন্ত্র স্পন্দিত হতে থাকে, তবে হার্টের টিস্যুতে রক্ত সরবরাহ রোধ হয়; মৃত্যু ঘটে টিস্যুর। আর হার্ট হঠাৎ কাজ করা বন্ধ করে দিলে একে বলে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট।
* হার্ট অ্যাটাকে নারীদের চেয়ে পুরুষের মৃত্যু বেশি হয়, এ-ও ঠিক নয়। পুরুষের ক্ষেত্রে অবশ্য এটি দেখা দেয় আগে। কিন্তু ঋতুবন্ধের পর নারীরা বেশ কাবু হন হূদেরাগে, মৃত্যু হয়ও এতে। তাই প্রায় সমান বিপর্যয় ঘটে বললেই ঠিক হবে। যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের ১ নম্বর ঘাতক হলো হূদেরাগ। এরপর স্তন ক্যানসার।
* হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, এমন সন্দেহ হলে দেরি করা ঠিক নয়। শুয়ে-বসে বা বিশ্রাম নিয়ে সময় কাটানো বোকামি। দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স ডাকা উচিত।
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ নিয়ে নানা কথা
যদিও হার্ট অ্যাটাকের সবচেয়ে সচরাচর উপসর্গ হলো বুক ব্যথা বা অস্বস্তি। তবে এটি সব সময় একমাত্র উপসর্গ নয়। অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, বমি ভাব, ঘাম হওয়া, মাথা হালকা লাগা, শরীরের ওপরের অংশে যেমন—পিঠ, পেট, গলা, ঘাড় বা চোয়ালে ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে।
‘মন ভেঙে গেলে হার্টেও ভাঙন’—এটি কেবল কথার কথা। ‘ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোম’ সমস্যা বটে।
মানুষের মনে শোক, দুঃখ এসব থেকে হার্টের সমস্যা হয়। মনের প্রচণ্ড ক্ষোভ, দুঃখ এসবের কারণে সমবেদী স্নায়ুতন্ত্র হয় উদ্দীপ্ত। ‘লড়াই করো, নয়তো পালিয়ে যাও’—এমন বোধ হয় শরীরে। হঠাৎ করে রাসায়নিক বস্তু যেমন—এড্রিনালিনের প্লাবন বয়, স্তব্ধ হয় হূদেপশি: সাময়িকভাবে হার্ট পাম্প করতে পারে না। উপসর্গ একরকম হলেও হার্ট অ্যাটাক নয় এটি। সুসংবাদ হলো, হূদ্যন্ত্র সহজেই উতরে যেতে পারে এ দুর্যোগ।
বেশ কয়েকটি কারণে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি আছে। যেমন: স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান, উচ্চমানের কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস ও শরীরচর্চা না করা।
পথ্যবিধি একটি প্রয়োজনীয় বিষয়। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে প্রচলিত খাদ্যবিধি হূদেরাগের ঝুঁকি কমাতে ফলপ্রসূ। ২০০৯ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, ২৯ শতাংশ ঝুঁকি এতে হ্রাস পায়। রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল মানের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
শরীর খুব পাতলা, সঠিক খাই, ব্যায়াম করি—এ জন্য হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি একেবারে নেই, তা বলা যাবে না। তবে এতে ঝুঁকি অনেক কমে, তা ঠিক। তাই এমন জীবনাচরণ হলো হূদ্বান্ধব।
লবণ খাওয়া কমালে হূদেরাগের ঝুঁকি বেশ কমানো যায়। দিনে এক হাজার ৫০০ মিলিগ্রামের বেশি লবণ কখনো নয়। ভিটামিন-ই ও ফলিক এসিড সাপ্লিমেন্ট এখনো প্রমাণিত হিতকারী নয়। প্রাকৃতিক উৎস থেকে নেওয়াই শ্রেয়।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল
সাম্মানিক অধ্যাপক, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ০৮, ২০১১
Leave a Reply