লিউকেমিয়া রোগের নাম আজকাল অনেকেরই জানা। এটি ব্লাড ক্যানসার নামে আরও বেশি পরিচিত। ভয়ানক রোগ। তবে এমন রোগ নিয়েও অনেকে বড় সাহসী। তেমন একজনের কাহিনি শোনাই আজ।
প্রতিদিন তাদের অনেক ঝক্কি সামলাতে হয়। এদের অনেকের বয়স খুব কম, তবু এই ভয়ংকর রোগ এবং এর চিকিৎসা বয়সের তুলনায় তাদের অনেক বেশি পরিপক্ব করে তোলে। আমাদের এক বন্ধু সেদিন বলছিল নীপার ব্যাপারে, তাদের সন্তানের হয়েছে লিউকেমিয়া। তার কাছে ‘পোর্ট’ শব্দটির মানে ছিল, যেখানে সে তার খেলনা জাহাজের নোঙর ফেলত, সেই বন্দর; আর ‘কাউন্টস’ শব্দটির মানে ১, ২, ৩ গোনা—ব্লাড কাউন্ট নয়। এবার বলি, অন্য একটি ছেলের গল্প। যথারীতি কাল্পনিক নাম ‘কল্প’। কতই বা বয়স তার। মাত্র নয় বছর। বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল, বাস্কেটবল আর ভিডিও গেম খেলতে খুব ভালোবাসে সে।
‘খেলার পর দেখতাম, শরীরে এখানে-ওখানে কাটাছেঁড়া, কালশিটে—কিছু মনে করতাম না। নয় বছর বয়সের ছেলে খেলতে গিয়ে অমন করেছে মনে করে পাত্তা দিতাম না ওসব।’ বললেন কল্পর মা।
দিন যায়। একসময় তার মা দেখেন, কল্প সন্ধ্যা ছয়টা হতে না-হতেই বিছানায় শুতে যায়। মাকে বলে, শরীর তার ভালো যাচ্ছে না। বলে, ‘মা, গলা খুসখুস করছে, বেশ ব্যথা।’ ২০০৬ সালের ৩০ মার্চ। কল্পকে নিয়ে তার মা গেলেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞর চেম্বারে। করা হলো স্ট্রেপ টেস্ট। তাকে দেওয়া হলো একটি অ্যান্টিবায়োটিক শট। এর পরদিন সকাল থেকে অ্যান্টিবায়োটিক বড়ি খাওয়া শুরু হলো। পরদিন কল্প আরও অসুস্থ হয়ে পড়ল। খুব জ্বর, বমিভাব ও বমি। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বললেন, শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করতে। আরও কিছু টেস্ট করতে হবে, শিরার মধ্যে তরলও দিতে হবে। রক্ত পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া গেল। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জরুরি অ্যাম্বুলেন্সে তাকে পাঠালেন বারডেমের বিশেষায়িত মা ও শিশু হাসপাতালে। তার চিকিৎসা শুরু হলো। রোগ ধরা পড়ল অ্যাকিউট লিমফেটিক লিউকেমিয়া (ALL)। তার টনসিলে ইনফেকশন, পুঁজে ভর্তি ফোলা টনসিল। ২ এপ্রিল অস্ত্রোপচার করে ফেলে দেওয়া হলো টনসিল।
চিকিৎসা শুরু হলো পরদিন। দুই সপ্তাহ পর উপশম হলো রোগের। তবে চিকিৎসা চলবে ২০০৯ সাল পর্যন্ত। প্রথম বছর কল্পর কষ্ট হলো বেশ, তার মেডিপোর্ডে সংক্রমণ হলো, একে তাই সরিয়ে বসাতে হলো বুকের অপর পাশে।
এদিকে তার হার্পিস সিমপ্লেক্স সংক্রমণও হলো। সেই সংক্রমণ ছড়িয়ে গেল নাসিকাপথ, গলা ও গলনালিতে। টনসিল অপসারণের ফলে রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যাও হলো। রক্তের শ্বেতকণিকা অনেক কমে যাওয়া এবং খুব জ্বরের জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হলো কয়েকবার।
প্রতি মাসে যে স্টেরয়েড চিকিৎসা চলছিল, তাতেও তার কষ্ট কম হলো না। আমরা সবাই খুশি হব যদি তার এই বেদনা ও যন্ত্রণার পথচলা শেষ হয়…। কল্প আমাদের নায়ক। এই লড়াইয়ে সে জিতবে, নিরাময়ের জন্য লড়াই করে যাবে, অতিক্রম করবে সব বাধা। জয় হবে তার।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল
সাম্মানিক অধ্যাপক, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ০৪, ২০১১
Leave a Reply