পেটের কোনো সমস্যাই সুখকর নয়। তবে কিছু সমস্যা আছে যেগুলো খুবই বিরক্তিকর এবং কষ্টদায়ক। যেমন ঠিকমতো পায়খানা না হওয়া কিংবা বেশি বেশি পেট খারাপ হওয়া। চিকিৎসকরা পেটের এ সমস্যার নাম দিয়েছেন আইবিএস বা ইরিট্যাবল বাওয়েল সিনড্রোম। কবিরাজ ভাই এবং তাদের অনুগতরা অবশ্য একে পুরনো আমাশয় বলে থাকেন। এ রোগটি থেকে মুক্তি পেতে আজকের লেখার সাহায্য নিতে পারবেন।
রোগের লক্ষণঃ
- তলপেটে ব্যথা হয়। ব্যথা মোচড় দিয়ে শুরু হয় এবং পায়খানা করার পর ব্যথা কমে যায়।
- পেটের মধ্যে সারা দিন বুদবুদ আওয়াজ হতে থাকে। মনে হয় পেটের মধ্যে গ্যাস ভরে আছে।
- কখনো পাতলা পায়খানা, কখনো কষা পায়খানা (কনস্টিপেশন) হয়। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে সব সময় পাতলা পায়খানা বা কষা পায়খানা হয়।
- যাদের সব সময় পাতলা পায়খানা হয় তাদের ক্ষেত্রে প্রথমে পেটে ব্যথা হয় এবং পরে পাতলা পায়খানা হওয়ার পর তা কমে আসে। ঘন ঘন বাথরুমে যেতে হয় এবং প্রতিবার খুব অল্প পরিমাণে পায়খানা হয়।
- ঘুমের মধ্যে সাধারণত কখনোই পায়খানার বেগ হয় না।
- পায়খানার সময় প্রচুর পরিমাণে আম বা মিউকাস যায়। আম যায় বলে অনেকে অজ্ঞতাবশত একে আমাশয় বলে।
- যাদের কষা পায়খানার প্রবণতা বেশি তারা পেটে ব্যথা নিয়ে টয়লেটে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলেও অতৃপ্তি নিয়ে টয়লেট থেকে বের হতে হয়।
- পায়খানা সমস্যা থাকলেও এসব রোগীর ওজন তেমন হ্রাস পায় না।
- পায়খানার সমস্যার পাশাপাশি এসব রোগীর ক্ষুধামন্দা, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, মাথা ব্যথা, পিট ব্যথা, অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা থাকতে পারে।
রোগের কারণ
প্রায় ৫০ ভাগ ক্ষেত্রে এ রোগটি মানসিক কারণে হয়ে থাকে। সকালে বাথরুম সেরে অফিসে যাওয়ার জন্য প্যান্ট-শার্ট পরেছেন অমনি দেখা যায়, তলপেট মোচড় দিয়ে ব্যথা ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে টয়লেটে দৌড়। দূরে কোথাও যাবেন তাই বাসে উঠেছেন। যখন মনে হবে বাসে তো বাথরুম করার সুযোগ নেই অমনি দেখবেন তলপেটে ব্যথা শুরু হয়ে গেছে। প্রস্রাব-পায়খানা যতোই পরীক্ষা করান না কেন এ ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা পাওয়া যাবে না। যারা সবসময় দুশ্চিন্তায় ভোগেন, স্ট্রেস যাদের নিত্যদিনের সঙ্গী তাদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা বেশি দেখা যায়।
পুকুরে ঢিল ছুড়লে পানি যেমন তরঙ্গের আকারে পাড়ের দিকে এগিয়ে যায়, পেটের নাড়িভুড়িও তেমনি তরঙ্গের আকারে খাদ্যজাত বর্জ্য পদার্থ পায়খানার আকারে বের করে দেয়। অন্ত্রের সংকোচন প্রসারণের মাধ্যমে এ গতিময় তরঙ্গ সৃষ্টি হয়। কোনো কারণে এ সংকোচন প্রসারণের পরিমাণ বেড়ে গেলে পাতলা পায়খানা এবং কমে গেলে কষা পায়খানা হতে পারে।
কিছু মানুষ আছে যারা সামান্য কথাতেই মুখ গোমড়া করে গাল ফুলিয়ে বসে থাকে। তেমনিভাবে কোনো কারণে অন্ত্রের সংবেদনশীলতা বেড়ে গেলে ঘন ঘন পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অন্ত্রের প্রদাহের কারণে অনেকের ঘন ঘন পায়খানার সমস্যা হতে পারে। এছাড়া দুগ্ধজাত খাবারসহ অনেক খাবার আছে যেগুলো অনেকে হজম করতে পারে না। আইবিএস তাদের ক্ষেত্রেও হতে পারে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
লক্ষণ বা ধরন দেখেই এ রোগ নির্ণয় করা যায়। তবে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো যেতে পারে। পায়খানা পরীক্ষা, রক্তের কিছু পরীক্ষা, সিগময়ডোস্কপি ইত্যাদি করানো যেতে পারে। এছাড়া যাদের প্রধানত পাতলা পায়খানা হয় তাদের ক্ষেত্রে টেস্ট করে দেখতে হবে তারা মাইক্রোস্কপিক কোলাইটিস, ল্যাকটোজ ইনটল্যারেন্স, বাইল এসিড ম্যাল অ্যাবজরপশন ইত্যাদি রোগে ভুগছেন কি না। পায়খানার সঙ্গে রক্ত গেলে কোলোনোস্কপি, ব্যারিয়ার এনেমা ইত্যাদি পরীক্ষা করে দেখতে হবে কোনো ক্যান্সারের লক্ষণ আছে কি না।
চিকিৎসা
এ রোগের চিকিৎসায় প্রথম কথা হলো রোগীকে অভয় দেয়া, সাহস যোগানো। সাহস দেয়া মানে এই নয় যে, রোগীকে বোঝানো, ভাই টেনশন করবেন না, রোগটা ভালো হলে ঠিক হয়ে যাবে। রোগীকে বোঝাতে হবে এটা খুবই সাধারণ একটা সমস্যা। এতে ভয়ের কিছু নেই। টেনশনমুক্ত জীবনযাপন করলে, আত্মবিশ্বাস বাড়ালে এবং খাবারের বিষয়ে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে এ রোগ এমনিতেই ভালো হয়ে যায়।
যাদের পাতলা পায়খানা বেশি হয় তারা অবশ্য শাক-সবজি বা ফাইবার জাতীয় খাবার খুব কম খাবেন। এতে কাজ না হলে ডায়ারিয়া রোধী ওষুধ যেমনঃ লোপেরামাইড, কোডেইন ফসফেট, কোলেস্টাইরামিন ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। এতেও কাজ না হলে অ্যামিট্রিপটাইলিন (২৫ মি.গ্রা.) প্রতি রাতে কমপক্ষে তিন মাস খেয়ে দেখতে পারেন। অন্যদিকে যাদের কষা পায়খানা বেশি হয় তাদের উচিত বেশি পরিমাণে শাক-সবজি খাওয়া। এতেও কাজ না হলে ইসবগুলের ভুষি খাওয়া যেতে পারে। বাজারে টেগরোটোল গ্রুপের ওষুধ পাওয়া যায় যা সেবনে এ ধরনের রোগীরা বেশ ভালো ফল পেতে পারেন।
তলপেটে ব্যথা বা বুদবুদ আওয়াজ কমাতে মেবেভারিন গ্রুপের ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
সুখ ভোগে না ত্যাগে তা বোঝা যায় টয়লেট থেকে বের হওয়ার পর। আপনি খুব বেশি তৃপ্ত হয়ে একমাত্র মেয়ের নাম তৃপ্তি রাখতেই পারেন। কিন্তু সেই তৃপ্তি আইবিএসের মতো বিরক্তিকর পায়খানার সমস্যায় ভুগলে সব সময় অতৃপ্ত মন নিয়ে তাকে টয়লেট থেকে বের হতে হবে। ফলে ছন্দায়িত জীবন গদ্যময় হয়ে যাবে। পেটের এ ধরনের সমস্যায় তাই অবশ্যই একজন মেডিসিন বা গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হবেন। ভালো কথা, আম যাওয়া মানেই কিন্তু আমাশয় নয়। পায়খানার রাস্তাকে মসৃণ রাখার জন্য বিধাতা গ্রিজের মতো করে সেখানে আমের নিঃসরণ ঘটান। তাই এ জাতীয় সমস্যায় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন, ভোগে নয় ত্যাগেই সুখী হোন।
উৎসঃ দৈনিক যায়যায়দিন, ২৮শে নভেম্বর ২০০৭
লেখকঃ ডা. সাকলায়েন রাসেল
Shahidui islam
Hi:dear amar pathe maje maje shobdho kora ar jonn ami veripel sr khaci ata ki gaser shomash
Bangla Health
আপনি দয়া করে একটু বাংলায় লেখার চেষ্টা করুন। ইংলিশ শব্দ হলে বানানটা ঠিক রাখবেন।
আমি
আমি কষা পায়খানার সমসসাই ভুগছি দীর্ঘ ৪-৫ বসর ধরে। এমনি তে বড় কোন সমস্যা হয় না কিন্তু মাঝে মাঝে খুব এ বিরক্ত লাগে। মনে হই আমি মোটা হয়ে জাচ্ছি, অশস্তি লাগে খুব।
আশ জুক্ত খাবার বেশি করে পানি খাওয়া, নিয়ম মত খাবার সব কিছু তো বেশীর ভাগ সময়ই মানতে পারিনা কাজে বেস্ত থাকার কারনে।
এই রোগের মুক্তির জন্য অন্য কোন উপাই বললে খুব এ উপকৃত হব।
Bangla Health
এটা কোন সমস্যাই না। নিয়মিত আঁশযুক্ত খাবার, যেমন শাকসবজি ফলমূল- এসব খেলেই এটা ঠিক হয়ে যাবে। কাজে ব্যস্ত থাকলেও সময় করে এসব খেতে হবে।
রাসেল ( 24years)
আই, বি, এস, বলতে যা বোঝানো হইছে তা সব আমার হয়ই। মাঝে মাঝে পাতলা ও আম যাই। সারাদিন বাথা করে ও শব্দ হয়ই। আমি গ্যাস এর জন্য অমেপ্প্রাযল খাই। সাথে ডম্পিরিডন। তেমন উপকার পাই না। উপরের মেডিসিন গুলো কখন কি পরিমান খেতে হবে দইয়া করে জানাবেন।
Bangla Health
মেডিসিন খাবেন ডাক্তার দেখিয়ে। নিজে থেকে কিনে খাবেন না। আপাতত খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে বেশ পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করেন।