দাঁত ও মাড়ির অন্যান্য রোগের মতো আঘাতের কারণেও এর ক্ষতি হয়ে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, পৃথিবীর এক-চতুর্থাংশ লোক কোনো না কোনোভাবে আঘাতজনিত কারণে দাঁত ও মাড়ির রোগে ভুগে থাকে। এর মধ্যে আট থেকে ১০ বছর বয়সের শিশুরাই বেশি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দৌড়াদৌড়িসহ বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা, সাইকেল চালানো অথবা কৈশোরে মারামারি করার সময় দাঁত ও মুখে আঘাত লেগে দাঁত আংশিকভাবে মাড়ির ভেতর ঢুকে যেতে পারে কিংবা বের হয়ে আসতে পারে। অনেক সময় বেশি জোরে আঘাত পাওয়ার কারণে দাঁত আংশিক ভেঙে যায় কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ দাঁত চোয়াল থেকে বের হয়ে আসে। এ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনার কারণে দাঁত ও মাড়ির এ ধরনের সমস্যা যেকোনো বয়সের লোকের হতে পারে।
আঘাতজনিত দাঁতের চিকিৎসা:
আঘাতজনিত কারণে দাঁত যদি শুধু নড়ে যায়, সে ক্ষেত্রে দুধদাঁত হলে কোনো চিকিৎসা করার দরকার নেই। আঘাতজনিত কারণে মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়লে পরিষ্কার তুলা অথবা কাপড় দিয়ে পাঁচ-সাত মিনিট চেপে ধরে রাখতে হবে। সামান্য ব্যথা থাকলে সে ক্ষেত্রে প্যারাসিটামলজাতীয় ট্যাবলেট বা সিরাপ খাওয়ানো যেতে পারে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ খাওয়ানো উচিত। ইনফেকশন যাতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। খাওয়ার পর কুসুম গরম লবণ-পানি কিংবা মাউথওয়াশ দিয়ে কুলকুচি করানো যেতে পারে। স্থায়ী দাঁত হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ও অন্যান্য ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। তবে দাঁত মাঝেমধ্যে এক্স-রে করিয়ে চিকিৎসককে দেখাতে হবে। কোনো কারণে দাঁত ভেঙে গেলে, সে ক্ষেত্রে দাঁতের ভাঙা অংশ আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে আগের জায়গায় বিশেষ পদ্ধতিতে লাগিয়ে দেওয়া সম্ভব। তবে দাঁতটি ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এর ভাঙা অংশসহ দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। দেরি হলে দাঁতটি পরিষ্কার ভেজা তুলা অথবা কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে রেখে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
যদি কোনো কারণে স্থায়ী দাঁত পুরোপুরি বের হয়ে আসে, সে ক্ষেত্রে খুব সাবধানতার সঙ্গে তা পরিষ্কার করে দুধ, মুখের লালা কিংবা সাধারণ স্যালাইনের পানির মধ্যে ভিজিয়ে রেখে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে নিয়ে দাঁতটিকে আগের জায়গায় পুনঃস্থাপন করে নিতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা করিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দিতে হবে। চিকিৎসকের কাছে তাৎক্ষণিকভাবে রোগীকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না হলে প্রথমে উপড়ে যাওয়া দাঁতটি ঠান্ডা পানি (যেমন—টিউবওয়েলের পানি) দিয়ে ৩০ সেকেন্ড ধুয়ে নিতে হবে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই দাঁতের শিকড় স্পর্শ বা শিকড়ের কোনো আবরণ তোলা যাবে না। এরপর দাঁতের ছকেটে (যেখানে দাঁত ছিল) দাঁতটিকে বসিয়ে আঙুল দিয়ে চেপে কিছুক্ষণ ধরে রাখতে হবে অথবা পাশের দাঁতের সঙ্গে সুতা দিয়ে বেঁধে রেখে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কোনো ডেন্টাল সার্জনের কাছে নিয়ে যেতে হবে। তবেই দাঁতটি রক্ষা পাবে।
মো. শামসুল আলম
ডিন, ডেন্টাল অনুষদ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ১৬, ২০১১
Leave a Reply