শিশুর অসুখবিসুখ সারিয়ে তোলা কিংবা প্রতিরোধে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা নিরন্তর গবেষণা কার্যক্রমে যুক্ত আছেন। পর্যবেক্ষণলব্ধ তথ্য-উপাত্ত অনেক ধাপ পেরিয়ে প্রমাণিত সত্যে পর্ষবসিত হয়। বড়দের ওপর তা যথাযথ স্বীকৃত হলে ছোটদের স্বাস্থ্য রক্ষায় চলে এর প্রয়োগ। শিশুস্বাস্থ্য পরিচর্চায় সাম্প্রতিক কিছু গবেষণাপত্রে কল্যাণমূলক নানা দিক উন্মোচিত হয়েছে:
ফুড অ্যালার্জি: কোনো শিশু খাবারের ফুড অ্যালার্জিতে ভুগলে তার একমাত্র নিদান হলো ওই খাবার শিশুকে আর খেতে না দেওয়া। ফুড ওআইটি (ওরাল ইমিউনো থেরাপি) এখন সম্ভাবনাময় থেরাপি। যদিও সঠিক ডোজ, মুখে বা জিভের নিচে কত দিন ধরে তা রাখা হবে, বয়সভেদে তার কার্যকারিতা এবং বাসায় রেখে এর প্রয়োগ কীভাবে নিরাপদ হবে, সেসব তথ্য জানার অবকাশ রয়েছে। তবে এতে অ্যালার্জিক খাবার স্বল্প পরিমাণে প্রতিদিনের খাবারে দেওয়া হবে, ফলে হঠাৎ করে ফুড অ্যালার্জিজনিত তীব্র প্রতিক্রিয়া থেকে শিশু সুরক্ষা পেতে পারে।
জিয়ারডিয়াসিস চিকিৎসায় পাঁচ দিনের অ্যালবেনডাজল: এত দিন ধরে এ চিকিৎসায় মেট্রোনিডাজল সর্বাধিক ব্যবহূত ওষুধ ছিল। সাম্প্রতিক মেটা অ্যানালাইসিস দেখাচ্ছে, প্রতিদিন ৪০০ মিলিগ্রামের এক ডোজ করে পাঁচ দিনের দেওয়া চিকিৎসায় অ্যালবেনডাজল সমান কার্যকর। দাম কম ও নিরাপদ।
ম্যালেরিয়ার জন্য নতুন গাইডলাইনস: আরডিটি ব্যবহার করে চিকিৎসা শুরুর আগে দ্রুত রোগ নির্ণয় করা হলে ওষুধের প্রতি রেসিস্ট্যান্স, প্রতিক্রিয়া ও অন্য অসুখ কি না, তা যাচাইয়ের ধারণা ও প্রবৃত্তি এবং ডাগস ফেলিওর প্রভৃতি ক্ষেত্রে কার্যকর ফলাফল আসবে, বিশেষ করে আফ্রিকা ও এশিয়ার মতো ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকায়। হু বর্তমানে ফ্যালাসিপেরাম ম্যালেরিয়ার মতো মারাত্মক জীবন-সংহারক ম্যালেরিয়ায় এসিটি অর্থাৎ আর্টিমেসিন বেইজড কম্বিনেশন থেরাপি ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছে। এতে রেসিস্ট্যান্সের মাত্রা বাড়বে না। এ ছাড়া প্রতি কেইস ২৮ দিন বা ততোধিক পর্যন্ত ফলোআপে দেখার কথা বলছে, আগে যা ছিল ১৪ দিন পর্যন্ত।
এইচ১এন১ এপিডেমিক ইনফ্লুয়েঞ্জা: ইনফ্লুয়েঞ্জা বা সোয়াইন ফ্লুতে শুধু স্কুল বন্ধ রাখার কার্যক্রম সুফল বয়ে আনবে না, বরং তা যদি কমপক্ষে আট সপ্তাহ বন্ধ থাকে, তবে এপিডেমিক উচ্চমাত্রা এক সপ্তাহের বেশি দেরিতে ঘটার সুযোগ আনতে পারে, তাতে ভ্যাকসিন দিলে এর কার্যকারিতা সৃষ্টির সুযোগ পাওয়া যাবে।
যেসব মা বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করান না, তাঁরা রক্তনালির অসুখ তথা কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজে বেশি ভোগার ঝুঁকিতে আছেন।
বায়োনিক চোখ প্রতিস্থাপন: মানবটিসুতে ইলেকট্রনিক সার্কিট লাগানোর মতো। আগে কানে শোনার জন্য ককলিয়ার ইনফ্ল্যান্ট হয়েছে। এটিও সে রকম। অন্ধদের (যাদের বেশির ভাগ রেটিনাইটিস পিগমেনটোসা অন্ধত্বের কারণ হিসেবে নির্ণয় হয়েছে) চশমায় যেকোনো একটা লেন্সে ক্যামেরা আছে। এসব তথ্য ইলেকট্রনিক সিগনালের মাধ্যমে চোখের সারফেসে পড়ে, যা কেবেলর (রেটিনায় লাগানো) সাহায্যে রেটিনাকে উদ্দীপ্ত করে এবং মস্তিষ্ক এসব সংকেত পড়ে নিতে অভ্যস্ত হয়।
দীর্ঘমেয়াদি কিডনির অসুখে ভোগা শিশুর কিডনির কার্যক্ষমতা নির্ণয় করতে নতুন ফর্মুলার উদ্ভাবন: জিএফআর=০.৪৩১* (উচ্চতা সেন্টিমিটার বা সিরাম ক্রিয়াটিনিন)। কিডনি রোগে আক্রান্ত শিশুর শিরায় স্যালাইন, অ্যান্টিবায়োটিক ও কেমোথেরাপি দিতে এই ফর্মুলা সাহায্য করবে।
প্রণব কুমার চৌধুরী
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ০২, ২০১১
Leave a Reply