যাঁরা দীর্ঘক্ষণ একঠায় বসে থাকেন, মাঝেমধ্যে একটু হাঁটাচলাও করেন না, এঁদের হূদরোগের ঝুঁকি বেশি, যাঁরা বসার মধ্য থেকে উঠে হেঁটেচলে বেড়ান, এঁদের তুলনায়।
বিশেষ করে অফিসেই তো এমন দীর্ঘক্ষণ বসা হয়, এঁদের কোমরের বেড় বেশি, রক্তচাপ বেশি, রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি, দেহে প্রদাহ বেশি, হিতকর কোলেস্টেরল কম—হূদরোগের ঝুঁকি বেশি তা তো বোঝাই গেল। এমনকি যাঁরা নিয়মিত জিমে যান এঁদের ওপরও দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার নেতিবাচক প্রভাবটি পড়ে।
বোস্টনের হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথের ডা. মারি এ মিটলম্যান বলেন, ফলাফলটি আশ্চর্য হওয়ার মতো নয়। অস্ট্রেলিয়ার গবেষক দলের প্রধান জেনেভেভ এন হিলি বলেন, দিনে ৩০-৬০ মিনিট ব্যায়াম করলেও সারা দিন শরীরচর্চা কী করছেন, হূদস্বাস্থ্যের জন্য তাও গুরুত্বপূর্ণ। এই গবেষণা থেকে বোঝা যায়, দিনে অন্যান্য সময় সামান্য শরীরচর্চা এমনকি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ানোর মতো কাজও যদি নিয়মিত করা হয়, এতেও হূদযন্ত্রের লাভ হয়। এসব পরিবর্তন দৈনন্দিন কাজকর্মে প্রতিফলিত হলে ভালো। বসা থেকে উঠে দাঁড়ান, একটু হাঁটুন বারবার, বেশ লাভ।
গবেষকেরা বলছেন, শিল্পোন্নত দেশগুলোতে লোকজন দিনের কাজে অর্ধেক সময় বসে কাটায়। এও তাঁরা উল্লেখ করলেন, আমেরিকা ও ইউরোপে অকালমৃত্যুর পয়লা নম্বর কারণ হলো হূদযন্ত্র ও রক্তনালির রোগ। এ দুটির মধ্যে পরস্পর সম্বন্ধ খুঁজতে জেনেভেভ হিলি ২০০৩-২০০৬ সাল পর্যন্ত ২০-ঊর্ধ্ব বয়সী চার হাজার ৮০০ স্ত্রী-পুরুষের উপাত্ত সংগ্রহ করেন আমেরিকান ন্যাশনাল হেলথ ও নিউট্রিশন সমীক্ষা থেকে। হূদরোগের ঝুঁকি যেমন কোমরের বেড়, রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মান পর্যবেক্ষণ করা হলো।
চরমসীমায়, যাঁরা শুয়ে-বসে থাকা লোক, এঁরা দিনে ২১ ঘণ্টার সামান্য বেশি সময় আর যাঁরা সবচেয়ে কম বসে থাকা লোক এঁরা বসে কাটিয়েছেন দুই ঘণ্টার কম। এক সপ্তার মধ্যে সবচেয়ে কম বিরতি যাঁরা নিলেন তাঁরা ১০০ বার মাত্র বিরতি নিলেন কাজের ফাঁকে, আর সবচেয়ে বেশি বিরতি যাঁরা নিয়েছেন তাঁরা এক হাজার ৩০০ বার বিরতি নিলেন এক সপ্তাহে।
টিমের পর্যবেক্ষণ, শ্বেতকায় লোকদের যাঁরা বসে বসে যত বেশি সময় কাটিয়েছেন তাঁদের কোমরের বেড় তত বেড়েছে, গোত্রভেদে এর তেমন তারতম্য হয়নি। যাঁরা বেশি সময় বসে কাটিয়েছেন এঁদের রক্তে চর্বি টাইগ্লিসারাইড যেমন বেশি, তেমনি রয়েছে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের নিদর্শন—ডায়াবেটিসের পূর্ব লক্ষণ।
সব দিক বিবেচনায় বসে থাকলেও যাঁরা বেশি বার বিরতি নিয়েছেন, বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়েছেন এঁদের কোমর চিকন, সিআরপি মানও (প্রদাহের সূচক) কম।
গবেষকদের পরামর্শ, কর্মস্থলে কর্মচারী-কর্মকর্তা, ফোনে কথা বলার সময় বা মিটিং কম বসে, দাঁড়িয়ে করতে পারেন এসব কাজ। সহকর্মীদের ই-মেইল না পাঠিয়ে বা ফোন না করে হেঁটে তাঁদের কাছে যেতে পারেন কথা বলার জন্য, যদি হাঁটা দূরত্বের মধ্যে থাকে। কর্মস্থলে যেতে লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারেন।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে শরীর চালু রাখলে ভালো। মধ্যাহ্ন আহারের বিরতিতে একটু হেঁটে চলে বেড়ানো। দালানে সিঁড়ি দিয়ে ওপর-নিচ না করলেও বিরতির সময় করিডরে হাঁটলেও তো হয়। শরীরকে যেকোনোভাবে চালু রাখলেই কাজ হয়। করে দেখুন না।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল
সাম্মানিক অধ্যাপক, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ০৯, ২০১০
Leave a Reply