মানবদেহে রক্ত অপরিহার্য। দেহের কোষে কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি উপাদান পৌঁছে দেওয়া, কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং অন্যান্য বর্জ্য ফিরিয়ে আনা, হরমোন, লবণ ও ভিটামিন পরিবহন, রোগ প্রতিরোধ, এমনকি দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ—সবকিছুতেই রক্তের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তাই কারও দেহে রক্তের অভাব ঘটলে তা পূরণের প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে অন্যের রক্ত শিরার মাধ্যমে রোগীর দেহে প্রবেশ করানো তথা রক্ত পরিসঞ্চালন হয়ে ওঠে অন্যতম উপায়।
রক্ত পরিসঞ্চালনের মাধ্যমে প্রয়োজনভেদে রোগীর শরীরে সম্পূর্ণ রক্ত বা রক্তের কোনো উপাদান যেমন—লোহিত কণিকা, অণুচক্রিকা বা রক্তরস দেওয়া হয়। যেকোনো কারণে অল্প সময়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে সাধারণত সম্পূর্ণ রক্ত দেওয়া হয় যেমন—দুর্ঘটনা, রক্তবমি, পায়খানার সঙ্গে রক্তপাত, প্রসবকালীন রক্তক্ষরণ ইত্যাদি। শল্যচিকিৎ সার সময়ও সম্পূর্ণ রক্তের প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে, বিভিন্ন রকমের অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতায় সাধারণত লোহিত কণিকা দেওয়া হয়, যেমন—থ্যালাসেমিয়াসহ অন্যান্য হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়া, আয়রনের অভাবজনিত রক্তস্বল্পতা, হুকওয়ার্মের কারণে অ্যানিমিয়া ইত্যাদি। অবশ্য আমাদের দেশে এসব রোগীকেও সম্পূর্ণ রক্ত দেওয়া হয়। এ ছাড়া ডেঙ্গু, আইটিপিইত্যাদি রোগে প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকা দেওয়া হয়। রক্তরস দেওয়া হয় হিমোফিলিয়া ও অন্যান্য কোষাগুলেশন ডিস-অর্ডারে এবং আগুনে পোড়া রোগীকে।
জটিলতা
জীবনরক্ষার অন্যতম উপায় এই রক্ত পরিসঞ্চালন আবার কখনো তৈরি করতে পারে জটিলতা। বিশেষ করে রক্তবাহিত রোগের সংক্রমণ আমাদের দেশে এখনো একটি প্রধান সমস্যা। হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, এইডসসহ বিভিন্ন প্রাণঘাতী সহজেই রক্তের রক্তগ্রহীতার দেহে প্রবেশ করতে পারে। এই পরিস্থিতির মূল কারণ রক্ত পরিসঞ্চালনের আগে রক্তটি জীবাণুমুক্ত কি না তা যথাযথভাবে পরীক্ষা না করা। অনুমোদনবিহীন ব্লাডব্যাংকগুলোতেই এসব রক্ত বিক্রি করা হয়। আর তা আসে মূলত নেশা আসক্ত পেশাদার রক্তদানকারীদের কাছ থেকে। এ ছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ রক্ত বা ভেজাল রক্তও এসব ব্লাডব্যাংক থেকেই আসে। এক গ্রুপের রক্ত অন্য গ্রুপের রোগীকে দিলে রক্ত হয়ে উঠতে পারে প্রাণঘাতী। এ ধরনের ঘটনা কম হলেও একেবারেই হয় না, তা নয়। এসব ক্ষেত্রে রক্ত সংগ্রহকারী ও পরীক্ষাকারী ব্লাডব্যাংক, চিকিৎ সক অথবা সেবিকাদের ভুল বা অসতর্কতাই দায়ী। রোগী সাধারণত বুকে, পিঠে ব্যথা ও শ্বাসকষ্টের অভিযোগ করে থাকেন। চিকিৎ সক দ্রুত ব্যবস্থা নিলে পরবর্তী জটিলতা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
এ ছাড়া যেকোনো পরিসঞ্চালনেই কাঁপুনি ও জ্বর আসা-জাতীয় ছোটখাটো সমস্যা হতে পারে। যাদের কিছুদিন পরপর রক্ত নিতে হয়, তাদের দেহে লৌহের আধিক্যসহ অন্যান্য সমস্যা হতে পারে। অনেক সময় অধিক রক্ত দ্রুত প্রবেশ করলে বৃদ্ধ অথবা হূদরোগীর হার্ট ফেইলিউর-জাতীয় সমস্যা হতে পারে। অবশ্য রোগী বা তাঁর আত্মীয়স্বজন সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়েন রক্ত পরিসঞ্চালনের আগেই, যখন দেওয়ার জন্য রক্ত খুঁজতে থাকেন। পাড়ায় পাড়ায় ব্যাঙের ছাতার মতো অবৈধ ব্লাডব্যাংক গড়ে উঠলেও নিরাপদ রক্ত এখনো দুর্লভ। বিশেষ করে জরুরি মুহূর্তে রক্ত প্রয়োজন হলে তা হয়ে ওঠে সোনার হরিণ। এ ছাড়া যাঁদের ঘন ঘন রক্ত নিতে হয়, তাঁদের বেশির ভাগ সময় যায় রক্তের খোঁজে। দুর্লভ গ্রুপের রক্ত হলে তো কথাই নেই। রক্ত যে কারোরই যেকোনো সময় প্রয়োজন হতে পারে—এ কথা মনে রেখে আমরা যদি এখনই প্রস্তুতি নিয়ে রাখি, তবে রক্ত পরিসঞ্চালনের সমস্যা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। আমাদের যেসব উদ্যোগ নিতে হবে তা হলো—
নিজের, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের রক্তের গ্রুপ জেনে রাখা।
নিকটস্থ ব্লাডব্যাংকের ঠিকানা ও ফোন নম্বর জেনে রাখা।
শুধু নিবন্ধনকৃত ব্লাড দান ও গ্রহণ করা।
পেশাদার রক্তদাতার রক্ত ক্রয় না করা।
নিজে নিয়মিত রক্ত দান করা ও সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা।
রক্ত নেওয়ার আগে সতর্কতা
রক্ত নেওয়ার আগে প্রয়োজন রক্তের গ্রুপ ঠিক আছে কি না, দেখে নেওয়া।
অপরিচিত পেশাদার রক্তদাতার রক্ত না নেওয়া।
সবচেয়ে ভালো, নিজস্ব আত্মীয় বা বন্ধুবান্ধবের রক্ত নেওয়া।
স্ক্রিনিং টেস্টের মাধ্যমে রক্তদাতার এইচবিএসএজি, এইচসিভি, এইচআইভি ইত্যাদি পরীক্ষা করতে হবে।
মনে রাখা প্রয়োজন, রক্তের অভাব ও অনিরাপদ রক্ত দুটিই জীবনের জন্য সমান হুমকি। তাই রক্তের বিকল্প শুধু রক্ত নয়, বরং ‘নিরাপদ রক্ত’।
জেনে রাখুন
যেকোনো সুস্থ, সাবালক ব্যক্তি রক্ত দান করতে পারেন। তবে ওজন হতে হবে কমপক্ষে ৫০ কেজি বা ১১০ পাউন্ড।
একবার সম্পূর্ণ রক্তদানের দুই মাস পরই আবার রক্ত দান করা সম্ভব।
উচ্চ রক্তচাপ থাকলে অথবা কোনো ওষুধ সেবনকালে রক্ত দান করার আগে চিকিৎ সকের পরামর্শ নিন।
গর্ভাবস্থায় রক্ত দান করা যাবে না।
যথাযথ নিয়ম মেনে জীবাণুমুক্ত উপায়ে রক্ত দান করলে রক্তদাতার কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই।
রক্তদানের পর ১০ মিনিট বিশ্রাম নিতে হবে এবং পরবর্তী চার ঘণ্টা পর প্রচুর পানীয় গ্রহণ করতে হবে। কমপক্ষে ৩০ মিনিট ধূমপান থেকে বিরত থাকা উচিত।
রক্তদানের পরপরই শ্রমসাধ্য বা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
সম্পূর্ণ রক্ত অথবা লোহিত কণিকা সাধারণত ১ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হয়। ব্যবহূত অ্যান্টি-কোয়াগুল্যান্ট ও প্রিজারভেটিভের ওপর নির্ভর করে তা ২১ থেকে ৪২ দিন ভালো থাকে।
সাধারণত চার ইউনিট রক্ত থেকে এক ইউনিট প্লাটিলেট পাওয়া যায়। যথাযথ প্রক্রিয়ায় রাখলে তা পাঁচ দিন ভালো থাকে।
ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এক বছর ভালো থাকে।
সম্পূর্ণ রক্ত দিতে সাধারণত দুই থেকে চার ঘণ্টা সময় প্রয়োজন হয়। প্লাটিলেট দিতে কম সময় লাগে।
রক্ত গ্রহণ অবস্থায় খাওয়া-দাওয়া করতে কোনো সমস্যা নেই।
এমনকি সেবিকার সহায়তা নিয়ে বাথরুমেও যাওয়া যাবে।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ০৯, ২০১০
sharif
sir, amar age 20 bochor ucchota 5.9″inc weight 54 kg sir ami vabchi akbar rokto dan korbo kintu sir amar ai weight e ki rokto deoa jabe ar rokto deoar pore ai rokto sorire puron hote abar koto din somoy lagbe abong rokto dile sorirer kono upokar ache ki na aktu janale upokrito hobo donnobad sir
Bangla Health
আপনার যা শারীরিক অবস্থা তাতে না দেয়াই ভালো। আগে শরীর ভালো করেন। ওজন বাড়ান।
শরীর ঠিক থাকলে ৩ মাস লাগে। সুস্থ স্বাভাবিক শরীর হলে ৩ মাস পর পর রক্ত দেয়া যায়। কোন সমস্যা নাই। অন্যের উপকার হয়।