বাড়ছে শীত। এই শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিশেষ কিছু রোগ। শীতের মৌসুমে যেসব রোগের প্রকোপ বাড়ে এর মধ্যে হাঁপানি বা অ্যাজমা অন্যতম। শ্বাসকষ্টের কারণে যে রোগ হয়, সাধারণত তাকেই আমরা হাঁপানি বা অ্যাজমা বলে থাকি। মানুষের দেহের একটি দুঃসহ ও জটিল রোগ হচ্ছে হাঁপানি। সারা বিশ্বের লাখো মানুষ বর্তমানে এই রোগে আক্রান্ত। শিশু থেকে শুরু করে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং বৃদ্ধরাও যেকোনো সময় এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা এক জরিপে দেখেছেন, বাংলাদেশের প্রায় দুই কোটি মানুষ এই রোগে ভুগছে। আমাদের দেশের সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো পক্ষ থেকেই এখন পর্যন্ত হাঁপানি বা অ্যাজমা নিরাময়ের কোনো যুগোপযোগী ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে এ রোগের তাৎক্ষণিক উপশমের জন্য চিকিৎসকেরা রোগীদের ট্যাবলেট বা বড়ি, ইনজেকশন, কখনো কখনো ইনহেলার দিয়ে থাকেন।
কী কী কারণে হাঁপানি বা অ্যাজমা হতে পারে
হাঁপানি রোগ সৃষ্টি হওয়ার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগীদের ফুসফুসের শ্বাসনালি সাধারণ লোকের তুলনায় অনেক বেশি স্পর্শকাতর হয়ে থাকে। ঘরের ধুলাবালি, ধোঁয়া, ময়লা, মাইট নামের জীবাণু যা পুরোনো ধুলাবালিতে থাকে অ্যাজমা বা হাঁপানির প্রধান কারণ। এ ছাড়া সাইনোসাইটিস, সর্দি, কাশি, তীব্র গন্ধযুক্ত সুগন্ধি ব্যবহার, বুকে আঘাত লাগা, ঠান্ডাজাতীয় খাবার খাওয়া, রাতে মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া, মানসিক উত্তেজনা, খুব বেশি ধূমপান করা—এগুলো ছাড়া বংশগতভাবেও এ রোগ হয়ে থাকে।
অ্যাজমার উপসর্গ
অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগের কতগুলো লক্ষণ বা উপসর্গ রয়েছে, যা দেখে বোঝা যায়, রোগী এ রোগে আক্রান্ত।
যেমন—
শ্বাস টানা এবং ছাড়ার সময় বুকের ভেতর বাঁশির মতো শোঁ শোঁ আওয়াজ হওয়া।
বুকে আঁটসাঁট বা দম বন্ধ ভাব হয়।
অ্যাজমা রোগীদের শুয়ে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। বসে থাকলে আরাম অনুভব হয়।
অস্থিরতা বেড়ে যায়, গলার স্বরের পরিবর্তন হয়।
হাঁপানি রোগীর বুকে প্রচুর কফ জমতে পারে। মাথাব্যথা হতে পারে।
অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগীর হাঁপানির সময় সর্দি হলে কাশির পরিমাণ বেড়ে যায়।
কোনো কোনো অ্যাজমা রোগীর কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
এ রোগের ফলে কারও কারও লো প্রেসার হতে পারে।
মাঝেমধ্যে রোগী রাতে ঘুম থেকে উঠে বসে থাকতে পারে।
অ্যালার্জিজনিত অ্যাজমা
অ্যালার্জি ও অ্যাজমা যেন এক মায়ের দুই সন্তান।
অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী অ্যালার্জেনগুলো হলো—ফুলের রেণু, ঘরের ও পুরোনো ফাইলের ধুলা, কোনো কোনো ফলমূল-শাকসবজি-খাদ্যদ্রব্য, দূষিত বাতাস ও ধোঁয়া, বিভিন্ন ধরনের ময়লা, কাঁচা রঙের গন্ধ, ঘরের চুনকাম।
অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী আরেকটি অ্যালার্জেন হচ্ছে ছত্রাক। ইস্ট-জাতীয় ছত্রাক দিয়ে তৈরি হয় পাউরুটি ও কেক। আলু ও পেঁয়াজ ছাড়া আরও নানা রকম খাদ্য ছত্রাক দ্বারা দূষিত হয়।
এসব অ্যালার্জেন অ্যালার্জিক বিক্রিয়া করে হাঁপানি রোগের সৃষ্টি করে। হাঁপানি রোগীদের অবশ্যই এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। মাইট নামের এক ধরনের অর্থোপড জাতীয় জীব ঘরের অনেক দিনের জমে থাকা ধুলাবালিতে থাকে। তাই অ্যালার্জিক অ্যাজমার বা হাঁপানির প্রধান কারণ হচ্ছে পুরোনো জমে থাকা ধুলাবালি। রাস্তার ধুলাবালিতে হাঁপানির তীব্র কষ্ট হয় না। কারণ, এতে থাকে অজৈব পদার্থ। আমরা আমাদের দিনের তিন ভাগের এক ভাগ সময় কাটাই বিছানায়। আর এই বিছানা, বালিশ ও আর্দ্রতাপূর্ণ আবহাওয়া হচ্ছে মাইট বেড়ে ওঠার যথার্থ পরিবেশ।
অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগীদের প্রধানত দিনের চেয়ে রাতে শ্বাসকষ্টের পরিমাণ বেড়ে যায়। রাতের বেলায় বিছানায় শোবার সময় আমরা মাইটের সবচেয়ে কাছে আসি। মাইটের মল নিঃশ্বাসের সঙ্গে দেহে প্রবেশ করে অ্যালার্জির সৃষ্টি করে, যা পরে অ্যাজমায় পরিণত হয়।
বিভিন্ন খাদ্যের কারণে অ্যালার্জি সৃষ্টি হতে পারে
গরুর মাংস, ইলিশ মাছ, বোয়াল মাছ, চিংড়ি মাছ, পাকা কলা, আনারস, বেগুন, নারকেল, হাঁসের ডিম এগুলো থেকে অ্যালার্জি হতে পারে। গরুর দুধ শিশুদের অ্যালার্জির কারণ হতে পারে।
ঠান্ডা পানীয় বা খাবার কোনো কোনো ব্যক্তির জন্য ক্ষতিকর হয়ে থাকে।
তাই যেসব পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও খাদ্যদ্রব্য অ্যাজমা বা হাঁপানি সৃষ্টি করতে পারে, তা পরিহার করা শ্রেয়।
এ কে এম মোস্তফা হোসেন
পরিচালক, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
মহাখালী, ঢাকা।
ছবি: সৈকত ভদ্র
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ১৯, ২০১০
Leave a Reply