কদিন পরেই ঈদ। হেঁশেলের ব্যস্ততা শুরু হয়ে গেছে এখন থেকেই। মাছ-মাংসের ভিড়ে ফলমূলকেও জায়গা করে দিতে হবে। কিছু কিছু ফলের রস আছে যেগুলো শরীরের পুষ্টিচাহিদা পূরণের পাশাপাশি একাধিক রোগের পথ্য হিসেবেও কাজ করে। তেমনি কিছু ফলের রসের গুণের কথাই জেনে নিন এবার।
ত্বক সুরক্ষায় টমেটোর রস
এ দেশে টমেটোকে সালাদের বাটিতেই বেশি দেখা যায়। টমেটোর সসও বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু জুস হিসেবে একদমই নয়। এই টমেটো লাল টকটকে হওয়ার পেছনে যে উপাদানটি কাজ করে তার নাম লাইকোপেন। এটি একটি উচ্চমানের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা শরীরের জন্য খুব দরকারি। এ ছাড়া বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত, টমেটোর রস ত্বককে সানবার্ন থেকে সুরক্ষা দেয়।
আর্থ্রাইটিসের জন্য আনারসের রস
আনারস খেতে হয় খালি পেটে। আনারসে থাকে ব্রোমেলেইন নামক একধরনের এনজাইম। এই এনজাইমটি এন্টি ইনফ্ল্যামেটরি এজেন্ট হিসেবে কাজ করে শরীরে। এবং আর্থ্রাইটিসের জন্য হাড়ের সংযোগস্থলের ফোলা ভাব এবং ব্যথা কমিয়ে দেয় আনারস। এক গবেষণায় বলা হয়, যেসব রোগী হাঁটুর ব্যথায় (অস্টীয় আর্থ্রাইটিস) ভুগছেন তাঁদের জন্য আনারস সত্যিকারের এন্টিইনফ্লামেটরি ওষুধের বিকল্প হিসেবে কাজ করে।
বাতের ব্যথায় চেরির রস
ফলের বাজারে সচরাচর চেরির দেখা না মিললেও এ দেশে চেরি জনপ্রিয় হচ্ছে। তাই এখন বড় বড় সুপার সপে চেরির মজুদও বাড়ছে দিন দিন। নরথামক্সিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা জানান, চেরির রসে আছে এমন এক উপাদান, যা বাতের ব্যথা রোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে এবং শরীরের ইউরিক এসিড বের করে দিয়ে হাড়ের ব্যথারও উপশম করে।
আলঝেইমারস রোগের জন্য আপেলের রস
আমাদের মস্তিষ্কে গুরুত্বপূর্ণ একধরনের রাসায়নিক পদার্থ আছে। নাম অ্যাসিটাইলকোলিন। এটি মস্তিষ্কের স্মৃতি অংশের জন্য খুব দরকারি। কোনো কারণে যদি এটির মাত্রা কমে যায় তাহলে সেই মানুষটি আলঝেইমারস রোগে আক্রান্ত হবে। অর্থাৎ মানুষটি তার ছোট ছোট স্মৃতি হারাবে। আর আপেলের রস মস্তিষ্কে এই অ্যাসিটাইলকোলিনের মাত্রা ঠিক রেখে এ রোগ থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে।
ওজন কমায় আঙুরের রস
ওজন কমানোর জন্য শরীর সম্পর্কে সচেতন মানুষগুলো কায়দা-কসরতের অন্ত রাখে না। শরীরচর্চা, আধপেটা খেয়ে থাকা সবকিছুই চলে সমানে। কিন্তু যারা এতসব ঝক্কিতে যেতে চায় না, তাদের জন্য আছে এক সহজ সমাধান। আঙুরের রস হতে পারে তাদের জন্য একমাত্র ওষুধ। এক গবেষণায় ১০০ জন মোটা মানুষকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। প্রথম ভাগের লোকগুলোকে খাবারের আগে আধাগ্লাস রস খাওয়ানো হয়, দ্বিতীয় ভাগের লোকগুলোকে খাওয়ার আগে দেওয়া হয় এক গ্লাস। আর তৃতীয় ভাগের লোকগুলোকে কোনো আঙুরের রস দেওয়া হলো না। ১২ সপ্তাহ পরে দেখা যায় দ্বিতীয় ভাগের লোকগুলোর ওজন কমে গেছে গড়ে ৩ দশমিক ৬ পাউন্ড।
হূদরোগের জন্য কমলার রস
এখন বছরজুড়ে বাজারে পাওয়া যায় কমলা। চীন থেকেও আসছে বেবি অরেঞ্জ নামে একধরনের কমলা। তাই কমলা এখন চাইলেই মেলে। কমলার রসে থাকে হেসপেরিডিন নামক একধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি হূদরোগের ঝুঁকি কমায়। রক্তনালির কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এক গবেষণায় দেখা যায়, যারা দৈনিক ৫০০ এমএল কমলার রস খায়, তাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত থাকে অন্য ব্যক্তিদের তুলনায় অনেক বেশি।
সিদ্ধার্থ মজুমদার
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ১০, ২০১০
Leave a Reply