অ্যানথ্রাক্স নিয়ে সাম্প্রতিক খবর, রিপোর্টে প্রায় প্রতি ঘরে মা-বাবা উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন। টেলিভিশন বা সংবাদপত্রের পাতায় চোখ রাখা শিশুরাও এর বাইরে নয়, বরং প্রকাশ না করলেও একটা ভীতিকর অবস্থা তাদের মনের মধ্যে জেঁকে বসা অস্বাভাবিক নয়। অ্যানথ্রাক্স রোগ নিয়ে বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলো জেনে গেলে এই রোগের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা যেমন নেওয়া যাবে, তেমনি মা-বাবা-শিশুরা অযথা ভয় থেকে চিন্তামুক্ত থাকতে পারবে।
শিশুর মনের ভয় লাঘবে
শিশুকে আশ্বস্ত করুন, সে নিরাপদেই আছে। মা-বাবা-শিক্ষক-চিকিৎসক ও সরকার এ রোগ থেকে সুরক্ষা দিতে সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছে।
এজাতীয় সংবাদ শিশু যেন একা একা না দেখে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। দেখে থাকলেও তার সঙ্গে এ নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করুন। তার সব প্রশ্নের উত্তর দিন।
অযথা ভীতি কাটানোর ভালো উপায় হলো বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞান।
অ্যানথ্রাক্স কী? কীভাবে ছড়ায়
বেসিলাস অ্যানথ্রেসিস নামের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এ রোগ সৃষ্টি হয়। এসব ব্যাকটেরিয়া প্রাথমিকভাবে মাটিতে থাকে এবং তা নিজের বেঁচে থাকার জন্য দেহের চারপাশে সুরক্ষাপ্রাচীর গড়ে তোলে, যার নাম ‘স্পোর’ এবং এসব স্পোরে আক্রান্ত ব্যক্তি বা শিশুর দেহে বিষাক্ত পদার্থ ছড়িয়ে দেয়।
আপনি কিংবা আপনার শিশু পরস্পর থেকে কিংবা অন্য কোনো ব্যক্তি থেকে এ রোগ আমদানি করতে পারবে না। আপনি যদি নিজে এ রোগে অসুস্থও হন, আপনার সন্তানের দেহে তা ছড়িয়ে দিতে পারবেন না। কেউ যদি আপনার কর্মস্থলে এ জীবাণু রেখেও যায়, তবু বাড়িতে নিয়ে আসতে পারবেন না। চুল বা পোশাকেও এ রোগের জীবাণু বয়ে আনা যায় না।
দেহে অ্যানথ্রাক্স প্রবেশ করে তিনভাবে
শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে।
দেহের ক্ষতস্থান বা কেটে যাওয়া অংশ দিয়ে জীবাণু প্রবেশের মাধ্যমে।
খাবারের মাধ্যমে (জীবাণু আক্রান্ত পশুর অসেদ্ধ বা আধা সেদ্ধ মাংস খেলে)।
এর পরও দেহে জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধশক্তি জমা থাকে এবং তিন পদ্ধতিতে এ ব্যাকটেরিয়া শরীরে ঢোকার আশঙ্কার হার কম।
অ্যানথ্রাক্সের প্রকারভেদ
ত্বকের অ্যানথ্যাক্স: নিরীহ ধরনের ছোট ছোট ব্যথাহীন ক্ষত, ফোসকা, কয়েক দিন পর যা মাঝখানে কালো গর্তসহ প্রকাশ পায়।
আন্ত্রিক অ্যানথ্যাক্স: ত্বকের অ্যানথ্যাক্সের তুলনায় অধিক মারাত্মক। বমি, ক্ষুধামান্দ্য, জ্বর, পরে বেশ পেটব্যথা—এসব উপসর্গ দেখা যায়। তবে এ উপসর্গ তুলনামূলক কম।
ফ্লু অ্যানথ্যাক্স: এই অ্যানথ্রাক্স সবচেয়ে মারাত্মক। সর্দিকাশি বা ফ্লুর মতো এ উপসর্গের শুরু। তবে আগে থেকে শনাক্ত হলে অ্যান্টিবায়োটিকসে তা সহজেই নিরাময় হয়। কিন্তু দেরি হয়ে গেলে মৃত্যু ডেকে আনে। মনে রাখা উচিত, সব ফ্লু অ্যানথ্রাক্স নয়। দুই মাসের বেশি বয়সী সব শিশুর অ্যানথ্রাক্সের লক্ষণ বড়দের মতোই। যেমন—জ্বর, কাশি ও শরীর ব্যথা। ডা. ইরউন রিড লিনার মতে, যেহেতু শিশু বয়সে শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বেশি এবং তাদের নাক মাটির কাছে থাকে, সে কারণে বয়স্ক ব্যক্তিদের তুলনায় এ ধরনের জীবাণু ও বিষাক্ত পদার্থ শিশুর দেহে দ্রুত ঢুকে যেতে পারে।
চিকিৎসা
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিজে থেকে শিশুকে অ্যান্টিবায়োটিকস খাওয়ানোর ফল ক্ষতিকর। চিকিৎসাকালীন অ্যান্টিবায়োটিকস প্রতিক্রিয়ায় শিশুর বেশি ক্ষতি হয়। কার্যকর ওষুধটি পরবর্তী সময় যদি শিশুর কান, গলাব্যথা বা অন্যান্য ইনফেকশনে ব্যবহার করতে হয়, তবে এ সময় অযথা তা কার্যক্ষমতা হারায়।
১৮ বছর বয়সের নিচে কাউকে অ্যানথ্রাক্স ভ্যাকসিন দেওয়া হয় না।
প্রখ্যাত শিশু-পয়জনিং বিশেষজ্ঞ মারকেল ক্যাসাভেন্ট মনে করেন, ভাইরাসজাতীয় লক্ষণ দেখা দিলেই শিশুকে নিয়ে মেডিকেল ইমার্জেন্সিতে যাওয়ার ব্যাপারে আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে শিশুকে পর্যবেক্ষণ করুন এবং অবস্থা দ্রুত খারাপ হতে থাকলে শিগগিরই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, সহকারী অধ্যাপক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১০
Leave a Reply