উৎসবে মেতে ওঠা যায় যেকোনো ঋতুতে।
যেকোনো সময়ে।
কেবল ইচ্ছে থাকলেই হয়।
কোনো একদিন।
ঢাকার বাইরে এক শহরতলিতে।
বছরের আশ্চর্যসুন্দর একসময়ে যখন বাগানে সবকিছু যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
ঘুম থেকে উঠেছি কাকডাকা ভোরে।
ডেকে ওঠে গৃহপালিত মোরগ, খামারে—কুকুরুকু…ও
গান গাওয়া পাখির ডাক শুনে আমার মন সজীব হয়ে ওঠে।
প্রতিটি সূর্যোদয় হলো নতুন দিনের সূচনা, ভরে ওঠে আনন্দে, যে আনন্দ
ছড়িয়ে যায় সবখানে। কোমল ও নরম এই আনন্দের পরশ, ভালোবাসার মতো
মনে হয়…। এই আনন্দটুকু সবাই মিলে ভাগাভাগি করে নেওয়া যায়।
মনে আছে, বেশ কিছুদিন আগে বন্ধুরা সবাই মিলে আমার জন্মদিন পালন করেছিল একবার।
যখন এলাম, জন্মদিনের কেকটি দেখে অবাক হলাম। এত সুন্দর!
বড় তো বটেই। কয়েক তলা কেক। প্রতি তলায় কাগজের প্রজাপতি সাজানো।
প্রজাপতির পাখায় পাখায় জন্মদিনের শুভকামনা লেখা।
বন্ধুদের শুভেচ্ছা, কারও আঁকা ছবি, আলোকচিত্র, কোলাজ, সাজ, মহাজনের বাণী।
মনের মাধুরী দিয়ে রচিত সে সব শিল্প।
এত ভালোবাসে ওরা আমাকে।
আমার মন ভালো হয়ে গেল। শরীরও।
ঘরে যখন ফিরলাম, এই সব প্রজাপতি আঁকা ‘শুভকামনা এক স্লিপগুলো’
বিলেত থেকে আনা রুপালি ট্রেতে রাখলাম। ওদের জন্য উপযুক্ত স্থানে।
প্রতিদিন একটি করে এক স্লিপ পড়ি আর মন খুশ হয়ে যায়।
এক বছর ধরেই পড়তে হবে। এতগুলো।
মাঝেমধ্যে উদ্দীপক এসব মেসেজ ই-মেইল করি বন্ধুদের কাছে।
আশা, ভালোবাসা ও উৎসাহভরা এসব মেসেজ—এই বিশেষ ভাবনাগুলো—তাদেরও উদ্দীপিত করে যেন।
প্রজাপতি ‘এক স্লিপ’গুলো বড় উৎসাহ দেয়।
এর কোমল পেলব স্পর্শ যেন বড় উপহার। প্রজাপতির বাগান এ দেশেও কে যেন করেছেন। নাম মনে নেই সেই সজ্জন ব্যক্তির।
বই পড়ে জেনেছি, পেনসিলভিনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির একজন অবসরপ্রাপ্ত কীটতত্ত্ববিদ ডক্টর রবার্ট স্নেটসিংগার প্রজাপতি বন তৈরি করার বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠছেন।
এ বাগান ভালোবাসার বাগান, ক্যানসারে প্রাণ হারিয়েছিল তাঁর যে বড় আদরের মেয়ে, তাকেই উৎসর্গ করেছিলেন এই প্রজাপতির বাগান।
এই বাগানটি আশাসঞ্চারি তো বটে, আর বাগান যে মালি ও সারা ভুবনের ভার নেয় নিরাময়ের, তাও দেখা গেল।
ন্যাথানিয়েল হর্থনের একটি উদ্ধৃতি:
‘Happiness is like a butterfly which, when persued, is always lryand our grasp, but, if you will sit down quietly, may alight upon you.
আপনিও হতে পারেন প্রজাপতির মতো। জীবনের আনন্দ তুলে ধরুক আপনাকে, আর আত্মাকে দান করুক দুটো পাখা।
প্রজাপতি পাখায় পাখায় রং ছড়াক।
মনের কুশল এভাবেই হয়।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস,
বারডেম হাসপাতাল সাম্মানিক অধ্যাপক,
ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১০
Leave a Reply