প্রোস্টেট ক্যানসার পুরুষের জন্য একটি নীরব ঘাতক রোগ হিসেবে পৃথিবীতে পরিচিত। প্রাথমিক অবস্থায় এ রোগ নির্ণয় করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ প্রাথমিক অবস্থায় রোগটি নির্ণয় করতে পারলে একে সারিয়ে তোলা সম্ভব। ১৯৮০ সালের মাঝামাঝি পিএসএ আবিষ্কারের পর থেকে এই রোগ নির্ণয় এবং এর কার্যকর চিকিৎসা অনেক সহজ ও নির্ভুল হয়েছে।
পিএসএ কী?
প্রোস্টেট গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত ছোট প্রোটিন-জাতীয় পদার্থের নাম পিএসএ। পুরুষের বীর্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে থাকে এবং বীর্যকে তরলীকরণ করাই এর কাজ। প্রোস্টেট গ্রন্থির অভ্যন্তরীণ আবরণের কারণে খুব সামান্য পরিমাণ পিএসএ রক্তে প্রবেশ করে, যেটা স্বাভাবিক মানুষের রক্ত পরীক্ষা করে নির্ণয় করা হয়।
স্বাভাবিক পিএসএর পরিমাণ কত?
রক্তে স্বাভাবিক পিএসএর পরিমাণ হলো ০-৪ ন্যানোগ্রাম/মিলিলিটার। সম্প্রতি বয়স অনুযায়ী পিএসএর স্বাভাবিক পরিমাণ নির্ণয় করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যেমন—বেশি বয়স্ক লোকের ক্ষেত্রে পিএসএর পরিমাণটা বেশি হবে; উল্টাভাবে অল্প বয়স্ক লোকের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ কম হবে। প্রোস্টেট ক্যানসারের উপস্থিতি সঠিকভাবে নিরূপণ করার জন্য স্বাভাবিক রক্তের পিএসএর মাত্রা ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ২ দশমিক ৫ ন্যানোগ্রাম/মিলিলিটারকে স্বাভাবিক বলে ধরা হয়। তবে প্রোস্টেট ক্যানসারের প্রাদুর্ভাব খুব বেশি না হওয়ায় আমাদের দেশের বেশির ভাগ চিকিৎসক ০-৪ ন্যানোগ্রাম/ মিলিলিটারকে স্বাভাবিক বলে ধরে নেন।
উচ্চমাত্রার পিএসএতে কী বোঝায়?
উচ্চমাত্রার পিএসএ মানেই যে রোগী প্রোস্টেট ক্যানসারে ভুগছে তা নয়। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে যেহেতু প্রোস্টেট গ্রন্থির কোষ থেকে পিএসএ তৈরি হয়, সেহেতু বড় প্রোস্টেট (বিপিএইচ) গ্রন্থির কারণে পিএসএর মাত্রা বাড়তে পারে। বড় প্রোস্টেট বা বিপিএইচ কিন্তু ক্যানসার নয়। তবুও বিপিএইচ-এ পিএসএর মাত্রা কখনো কখনো অনেক বেশি হতে পারে। প্রোস্টেট গ্রন্থির যেকোনো ধরনের জীবাণু সংক্রমণ বা প্রদাহের (প্রোস্টেটাইটিস) কারণে প্রোস্টেট গ্রন্থির অভ্যন্তরীণ আবরণ ভেঙে গিয়ে বেশি পরিমাণে পিএসএ রক্তে চলে আসতে পারে; যার কারণে পিএসএর পরিমাণ রক্তে বেড়ে যেতে পারে। এ ছাড়া প্রোস্টেট পরীক্ষা, মূত্রনালি যন্ত্র দ্বারা পরীক্ষা করা বা প্রোস্টেট গ্রন্থি ম্যাসেজ করার কারণেও পিএসএ বাড়তে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে পিএসএর পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের প্রধান উদ্বেগের কারণ, এটা প্রোস্টেট ক্যানসার কি না। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য উন্নত দেশে ২ দশমিক ৫ ন্যানোগ্রাম মাত্রাকে স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়। এতে অধিকসংখ্যক ক্যানসার রোগী শনাক্ত করা সম্ভব হয়। এটা মনে রাখতে হবে, পিএসএর এই মাত্রার চেয়ে নিচের মাত্রায়ও প্রোস্টেট ক্যানসার কখনো কখনো পাওয়া যায়।
বর্ধিত পিএসএ এবং প্রোস্টেট ক্যানসার
স্বাভাবিক প্রোস্টেট ক্যানসার কোষে অল্প পরিমাণ পিএসএ থাকে; কিন্তু ক্যানসার কোষগুলো বেশি পরিমাণে পিএসএ তৈরি করে এবং রক্তে ছেড়ে দেয়। এ কারণেই প্রোস্টেট ক্যানসার রোগীদের পিএসএর পরিমাণ বেশি থাকার আশঙ্কা থাকে এবং এর পরিমাণ যত বেশি হবে, ততই ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকবে। পিএসএর মাত্রা বেশি হওয়ার অনেক কারণই থাকতে পারে, যেমন—প্রোস্টেট গ্রন্থির প্রদাহ (প্রোস্টেটাইটিস), প্রোস্টেট গ্রন্থির স্ফীতি প্রভৃতি কারণেও পিএসএর মাত্রা বেশি হতে পারে। আবার এটাও মনে রাখতে হবে, পিএসএর মাত্রা স্বাভাবিক বা তার নিচে হলেও প্রোস্টেট ক্যানসারের উপস্থিতি প্রায় ৩ থেকে ১০ শতাংশের ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায়।
বেড়ে গেলে কী করা উচিত
একজনের পিএসএর পরিমাণ বেড়ে যাওয়া মানেই তার প্রোস্টেট ক্যানসার আছে তা নয়। আলট্রাসাউন্ড যন্ত্রের মাধ্যমে প্রোস্টেট গ্রন্থির সুচ দ্বারা মাংস পরীক্ষাই একমাত্র পরীক্ষা, যার মাধ্যমে ক্যানসার উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়। মলদ্বারে আঙুলের সাহায্যে প্রোস্টেট পরীক্ষায় প্রোস্টেট গ্রন্থি স্বাভাবিক থাকলেও পিএসএর মাত্রা বেশি হলে অবশ্যই একজন ইউরোলজিস্ট দ্বারা বিষয়টি মূল্যায়ন করা উচিত। পরবর্তী সময়ে তিনি বিভিন্ন পরীক্ষা যেমন—পায়ুপথ দিয়ে প্রোস্টেট গ্রন্থির আলট্রাসাউন্ড, পায়ুপথ দিয়ে আঙুলের সাহায্যে প্রোস্টেট গ্রন্থির পরীক্ষা এবং পিএসএর পরিমাণ দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন যে প্রোস্টেট গ্রন্থির বায়োপসির প্রয়োজন আছে কি না। সমস্যাটি সন্দেহজনক হলে অবশ্যই Transrectal ultrasound guided needle biopsy of prostate বা প্রোস্টেটের সুচ বায়োপসি করা উচিত।
সবারই কি নিয়মিত পিএসএ পরীক্ষা করা উচিত
এই মুহূর্তে এ সম্পর্কে কোনো প্রচলিত সুপারিশ নেই এবং বিশ্বের বড় বড় চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ সম্পর্কে একমতে পৌঁছাতে পারেনি। উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন লোক, যাদের পরিবারে প্রোস্টেট ক্যানসারের ইতিহাস আছে, তাদের ৪৫ বছর বয়স থেকেই পিএসএ পরীক্ষা করা উচিত। এখনো এটা বিতর্কিত যে যাদের পরিবারে প্রোস্টেট ক্যানসার রোগীর ইতিহাস নেই এবং বাড়তি ঝুঁকিও নেই, তাদের ৫০ বছর থেকে পিএসএ পরীক্ষা করা উচিত। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হলো, একজন ইউরোলজিস্টের সঙ্গে আলোচনা করে এ ধরনের পরীক্ষা করা উচিত, যাতে স্বাভাবিক/অস্বাভাবিক ফলাফলের ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া যায়। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে এ বিষয়ের ওপর যে গবেষণা চলছে, আমরা আশাবাদী যে তার মাধ্যমে একটি সুস্পষ্ট উত্তর সহসাই আমাদের কাছে আসবে। উন্নত বিশ্বে প্রোস্টেট ক্যানসারের স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম (Screening programme) চালু আছে। এ প্রোগ্রাম অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং এর কার্যকারিতা সম্পর্কে বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ একমত নন।
এম এ সালাম
অধ্যাপক, ইউরো-অনকোলজি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১০
maruf
underpan na porla ki prostet ar problem hobea?ki ki problem hobea?
Bangla Health
সমস্যা হবে না।