নিরাপদে রাখার গাইডলাইনস্
দুটো মূল্যবান কথা জানা যাক:
১. শিশুরা বিশেষত ছোট্ট সোনামণিরা নিজেদের কীভাবে নিরাপদে রাখতে হয় তা ভালোমতো জানে না।
২. শিশুবয়সের বেশির ভাগ দুর্ঘটনা প্রতিরোধযোগ্য।
সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, অনধিক পাঁচ বছর বয়সী শিশুকে নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রটি বিশাল। নবজাতক শিশুকে খেলনার পাশে শুইয়ে রেখে যাওয়ার বিষয়টিও উপেক্ষণীয় নয়। কেননা এ ধরনের তুচ্ছ পদক্ষেপের মধ্যেও বিপদের আঁচ লুকিয়ে থাকতে পারে।
যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবে কিছু পরিস্থিতিতে দুর্ঘটনা ঘটার পথ সুগম হয়। যেমন—
শিশুযত্নকারী যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে বা হতাশ থাকে।
পরিবারে যখন অশান্তির আগুন এবং শিশু একা একা বিচরণ করে।
যখন শিশুকে দেখাশোনার দায়িত্ব খানিকটা বড় শিশুর ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়।
শিশুনির্যাতনের শিকার, ঘরে কেউ মাদকাসক্তিতে ডুবে আছে।
শিশু নতুন কিছু দেখছে—তার আকর্ষণে সে দ্রুত ছুটছে।
শিশু নতুন কিছু করে দেখাতে চাইছে। যেমন, কারও তদারক ছাড়া গড়িয়ে যাওয়া, হামাগুড়ি দেওয়া, হাঁটা, আরোহণ করা, দুই আঙুলে খুঁটে জিনিস কুড়িয়ে মুখে পুরে দেওয়া।
প্রতিরোধ
নবজাতক যখন ঘুমায়, তাকে পিঠের ওপর শুইয়ে থাকার ব্যবস্থা নেওয়া। কিছুটা শক্ত বিছানা। দুই দিকে ছোট্ট বালিশ দেওয়া, যেন উল্টে না যায়।
ছোট্ট শিশুকে ভালোভাবে ধরবেন—যাতে সে মাটিতে না পড়ে যায়।
এক বছরের কম বয়সী শিশু ও ছোট্ট বাচ্চাদের সঙ্গে বেশি বিপজ্জনক খেলা খেলবেন না। জোরে জোরে তার হাত ধরে টান দেবেন না বা হাত ধরে বাঁকানো উচিত না।
ছোট বস্তু যেমন পিন, বোতাম, ক্লিপ, পয়সা, মটরদানা ইত্যাদি ছোট্ট শিশুর নাগালের বাইরে রাখুন। ফুটো হয়ে যাওয়া বেলুন সে গিলে ফেলতে পারে এবং তাতে শ্বাসরোধ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
শিশু যখন এক থেকে তিন বছরের তখন তারা ছোটখাটো নির্দেশ মানতে পারে। তাদের বারবার শিক্ষা দিন, যাতে তারা কোনো কিছু কানে বা নাকে ঢুকিয়ে না দেয়।
যত ধরনের তার আছে তা শিশুর নাগাল থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন, যেমন ফোনের তার, কাপড়চোপড়ের ফিতে, ইলেকট্রিক তার।
ইলেকট্রিক প্লাগের পয়েন্টগুলো ট্যাপ দিয়ে ভালোভাবে ঢেকে দিন, অথবা শিশু যাতে নাগাল না পায় সে রকম উচ্চতায় স্থাপন করুন।
পলিথিন ব্যাগ শিশুর নাগালে রাখা নিষিদ্ধ। ওর ভেতরে শিশুর মুখ ঢেকে গেলে শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। গিলে ফেললে একই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
শিশু যা কিছু স্পর্শ করতে বা খেতে চায়, আগেভাগেই তার তাপমাত্রা দেখে নিন।
শিশুকে কাছে নেওয়ার সময় আপনার হাতে থাকা গরম চা, খাবার বা পানীয় সতর্কতার সঙ্গে দূরে রাখুন।
রান্নাঘরের চুলা ভূমি থেকে দুই ফুট উচ্চতায় রাখতে পারলে ভালো। আগুন বা গ্যাসের চুলা, স্টোভ, ইস্ত্রি, মোমবাতি এসব থেকে শিশুকে সর্বদা নিরাপদ দূরত্বে রাখুন।
শিশুকে শিক্ষা দিন, যেন সে দেশলাইয়ের বাক্স নিয়ে না খেলে।
ছুরি, কাঁচি ও ধারালো কোনো দ্রব্য শিশুর নাগালে যেন না থাকে।
ওষুধ বা বিষদ্রব্য যেন শিশুর নাগাল থেকে দূরে থাকে। শিশুর নাগালে না আসার মতো উঁচু স্থানে তা রাখা চাই।
শিশু যেন সরাসরি সিঁড়িপথ বেয়ে উঠে যেতে না পারে। কীভাবে নিরাপদে ওঠানামা করতে হবে তা তাকে শিখিয়ে দিন।
শিশুকে গাছে আরোহণ বা সাঁতার শেখানো কার্যক্রম বড়দের তত্ত্বাবধানে করা উচিত।
শিশু যাতে পানিতে না ডোবে সে জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রণব কুমার চৌধুরী
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ
সহকারী অধ্যাপক, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১০
Leave a Reply