যে কোনো রোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ বেশি জরুরি। এলার্জিজনিত রোগবালাই, এজমা ইত্যাদি প্রতিরোধে আমাদের সদিচ্ছা বা আন্তরিক চেষ্টা আমাদের কিংবা শিশুদের এসব রোগ থেকে বা এসব রোগের জীবাণু থেকে মুক্ত রাখতে পারে। যে সব জিনিসের সংস্পর্শে এলে সাধারণত এজমা, এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তা হলো ধুলোবালি (ডাষ্ট মাইট), পোষা প্রাণীর শরীরের ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্রাংশ বা গাঝাড়া দিলে বাতাসে উড়ে (এনিমেল ডেন্ডার), তেলাপোকা, মোল্ড (অতিশয় ক্ষুদ্র এক ধরনের জীবাণু, যা সাধারণত বাতাসে উড়ে বেড়ায় এবং পুরনো বই-খাতা, জামা-কাপড়, পুরনো আসবাবপত্র, বুকসেলফ, কার্পেট ইত্যাদিতে অবস্হান করে) এবং কিছু কিছু কেমিক্যাল বা ইরিটেন্ট, পোলেন বা ফুলের পরাগ রেণু ইত্যাদি। এসব এলারজেন সাধারণত আমাদের চারপাশের পরিবেশেই বিদ্যমান। পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই এসব এলার্জিজনিত উপকরণ থেকে দুরে থাকা সম্ভব। যেখানে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, সেখানে ফিল্টার মাস্ক ব্যবহার করে এলার্জি থেকে অনেকটা রেহাই পাওয়া যায়।
উপরোল্লিখিত উপকরণগুলো কোনো কোনো পরিবেশে বেশি থাকে, তার ওপর ভিত্তি করে কিছু পরামর্শ হলোঃ
ধুলোবালিজনিত এলার্জি প্রতিরোধঃ লেপ-তোষক এবং বাক্সপ্যাটরাসমুহে প্লাষ্টিকের কাভার ব্যবহার করুন। বালিশে পাতলা প্লাষ্টিকের কাভার ব্যবহার করুন। শোবার ঘর থেকে অপ্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড়, জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলুন। ঘরের ফার্নিচার ধুলোমুক্ত পরিষ্কার রাখুন। শোবার ঘর থেকে কার্পেট সরিয়ে রাখুন বা ভ্যাকুয়াম ক্লিনার মেশিন দিয়ে নিয়মিত কার্পেট পরিষ্কার রাখুন। ঘরে ধুলোবালি সবসময় নিয়মিত পরিষ্কার করুন। এমনভাবে ঘর সাজান, যাতে করে ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস থাকে। শোবার ঘরের কার্পেটে টেনিক এসিড ব্যবহার করা যেতে পারে। এয়ার ক্লিনার ব্যবহার করতে পারেন। পোষা প্রাণীর শরীরে ক্ষুদ্র অংশ বা এনিমেল ডেন্ডার কীভাবে প্রতিরোধ করবেন?
আপনার পোষা প্রাণীটিকে বেডরুম বা ড্রইংরুম থেকে দুরে রাখার ব্যবস্হা করুন। সম্ভব হলে ঘরের বাইরে রাখুন। ঘরের ভিতর পোষ্য প্রাণীটির আনাগোনা কমিয়ে দিন। শোবার ঘরের দরজা বন্ধ রাখুন। ঘরের ভেন্টিলেশন বাড়ানোর ব্যবস্হা করুন। পোষ্য প্রাণীটির নিয়মিত গোসল নিশ্চিত করুন। এয়ার ক্লিনার ব্যবহার করতে পারেন।
তেলাপোকা নির্দয়ভাবে ধ্বংস করুন। তেলাপোকা ধ্বংসের পর ঘর খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। আপনার প্রতিবেশীকেও তেলাপোকা ধ্বংসে উৎসাহিত করুন এবং তা আপনার স্বার্থেই। মেঝে বা দেয়ালে ছোটখাটো ছিদ্র বা ফাটল বন্ধ করে দিন, যাতে করে তেলাপোকা প্রবেশ করতে না পারে। রান্নার পর রান্নাঘর পরিষ্কার করুন। ঘরে রাখা খাবার-দাবার মুখ আটকানো পাত্রে রাখুন।
আপনার সন্তানের স্কুল বা আপনার অফিসে যা করণীয়ঃ স্কুলের মেঝেতে বা অফিসে কার্পেট না থাকে সেই চেষ্টা করুন। অফিস ঘর/ক্লাসরুম যাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। প্রাণীর পরিচর্যাকারী, ল্যাবরেটরি ষ্টাফ এবং পশু চিকিৎসকদের কর্মক্ষেত্রে ফিল্টার মাস্ক ব্যবহার করুন। চশমা ব্যবহার করতে পারেন। ঘরে ভালো ভেন্টিলেশন যাতে হয়, সে দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখুন।
ধোঁয়া প্রতিরোধে করণীয়ঃ বাসা, অফিস এবং গাড়িতে ধুমপান প্রতিহত করুন। রান্নাঘরের চুলা রান্না শেষে গ্যাসের চাবি বন্ধ আছে কিনা নিশ্চিত করুন। এজমা ও এলার্জি প্রতিরোধে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি এজমা ও এলার্জিজনিত রোগ থাকলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, সুস্হ থাকুন।
ডা. গোবিন্দ চন্দ্র দাস
দৈনিক আমারদেশ, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০০৮
Leave a Reply