ঠিক ঠিক খাবার খেলে ভালো ঘুম হয়, তা জেনেছেন বিজ্ঞানীরা। যেসব খাদ্য খেলে প্রশান্তির তন্দ্রা বাধা পায়, সেগুলো এড়ানো ভালো।
গরম দুধ খেলে যে ঘুম ও স্বপ্নের দেশে পৌঁছানো যায়, তা জানা গেছে। বড় জাদুপানীয় এই দুধ। কেন? কারণ দুধ ও দুধজাত দ্রব্যে আছে ট্রিপটোফ্যান, নিদ্রাকর্ষী রাসায়নিক।
ট্রিপটোফ্যান আরও আছে কচি মোরগের গোস্ত, কলা, ওটমিল ও মধুতে। শ্বেতসার একটু বেশি খেলে হয়। একটু প্রশ্রয় বরং দিলেনই।
দুধভাত খেলে রক্তে বাড়ে ট্রিপটোফ্যান মান। তাই রাতে ঘুমানোর আগে দুধভাত, না হয় দুধখই, মুড়িদধি, রুটি-পনির খেলে ঘুম হবে তোফা। শোয়ার আগে একটু নাশতা।
অনিদ্রার সঙ্গে লড়াই চলছে? পেটে একটু খাবার পড়লে চোখ বুজে আসে। তবে এ যেন প্রতিদিনের অভ্যাস না হয়। ছোট নাশতা হবে। ভরপেট হলে উল্টো ফল। বার্গার, তেলেভাজা, চিপস, ফ্রেঞ্চফ্রাই কখনোই না। কুখাদ্য অবশ্য অবশ্যই। চর্বিবহুল এসব খাবার পরিত্যাগ করলে স্বাস্থ্যের জন্য ভালো তো বটে, ঘুমও ভালো হবে। এসব খাবার খেলে শুধু ওজন বাড়ে, আর অনিদ্রা হয়। পানীয়তে লুকিয়ে আছে ক্যাফিন। সাবধান তাই। বিকেলে বা সন্ধ্যায় চা-কফি খেলে রাতে ভালো ঘুম হয় না। চকলেট ও কোলাতেও আছে ক্যাফিন। বরং প্রতিদিন বিকেলে চা-কফি, চকলেট না খাওয়াই ভালো। কিছু কিছু ওষুধেও আছে ক্যাফিন। এসব ওষুধ ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অনেক সময় কেনা যায়। কিছু বেদনাহর ওষুধ, ওজন কমানোর পিল, মূত্রবর্ধক, ঠান্ডা-সর্দির ওষুধে থাকতে পারে ক্যাফিন। যে ওষুধে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, সেগুলো সেবন করার আগে পরামর্শ চাই চিকিৎসকের।
অনেকের মদ্যপানের অভ্যাস আছে। এতে অনিদ্রা হতে পারে। ছেড়ে দেওয়া ভালো, যদি কারও এসব বদভ্যাস থাকে।
ধূমপানেও অনিদ্রা হয়। ধূমপান তো বিষপান। অবশ্য করে থাকলে ছেড়ে দিতে হবে। ভারী মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এসব খেয়ে ভরপেটে শুলে ঘুম কেন হবে? অস্বস্তি তো থাকবে চরমে। ঘুমালে পরিপাক এমনি ধীর হয়ে যায়, তাই ভরপেট অস্বস্তি লাগবে।
ঝাল মসলা খাবারে বুকও জ্বলে। যদি এমন খাবার খেতেই হয় কোনো দিন বাধ্য হয়ে, তাহলে শোয়ার অন্তত চার ঘণ্টা আগে খাওয়া শেষ করা উচিত।
শোয়ার আগে প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত খুবই কম। দিনে বড় পুষ্টিকর এই উপকরণটি রাতের স্ন্যাকসের জন্য মোটেও ভালো নয়। প্রোটিনবহুল খাবার হজম করাও কষ্ট। তাই অন্তত শোয়ার আগে প্রোটিন স্ন্যাকস নয়, বরং এর বদলে এক গ্লাস গরম দুধ। সঙ্গে মুড়ি-খই।
ভালো ঘুম হবে।
রাত আটটার পর থেকে পানি কম পান করা ভালো। সারা দিন বেশি করে পানি পান করে রাত আটটার পর প্রয়োজন না হলে পান না করলে হয়। তা না হলে অনেকে বারবার বাথরুমে যাবেন, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল সাম্মানিক অধ্যাপক, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ০১, ২০১০
Leave a Reply