শুধু মাথার খুলির কঙ্কালকে বলে ভল্ট। আর মাথার খুলি ও মুখমণ্ডলের হাড়কে একসঙ্গে বলে স্কাল। মাথার খুলির আটটি এবং মুখমণ্ডলের ১৪টি হাড়, অর্থাৎ ২২টি হাড় দিয়ে স্কাল তৈরি হয়।
স্কালকে করোটিও বলে। ২২টি হাড়ের মধ্যে ২১টি নড়াচড়া করতে পারে না। মস্তিষ্ক ও মাংসপেশির সঙ্গে সংযুক্ত। শুধু চোয়ালের হাড় (মেডিকেলের ভাষায় যাকে বলে ম্যান্ডিবল। ম্যান্ডিবলে দাঁত লেগে থাকে) নড়াচড়া করতে পারে। যেমন খাওয়া ও কথা বলার সময় চোয়ালের হাড় নড়াচড়া করে।
স্কালের ২১টি হাড় পরস্পরের সঙ্গে অস্থিসন্ধিতে (হাড়ের বন্ধন) আবদ্ধ থাকে। এর মধ্যে মাথার খুলির হাড়গুলো সুচার নামক খাঁজকাটা বন্ধনে যুক্ত। অর্থাৎ মাথার খুলির দুটি হাড়ের মধ্যে খাঁজকাটা অংশ থাকে।
একটা হাড়ের সঙ্গে অপর হাড়টা লেগে যায়। এই খাঁজকাটাকে বলে সুচার। জ্নাবস্থাতেই প্রতিটি মানুষের স্কাল তৈরি হয়। তবে সে স্কাল দেহের তুলনায় বড় থাকে। শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরও স্কাল, ম্যান্ডিবল স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে বড় হয়। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।
মাথার খুলির আটটি হাড়ের মধ্যে কঙ্কালের হাড়কে বলে ফ্রন্টাল, মাথার মাঝের ও কানের অনেক ওপরের হাড় দুটোকে বলে প্যারাইটাল, দুই কানের ওপরের দুটো হাড়কে বলে টেমপোরাল, মাথার পেছনের হাড়ের নাম অকসিপেটাল। এ ছাড়া স্কিনয়েড, ইথময়েড নামক দুটো হাড় রয়েছে নাকের ভেতরের দিকে; খুলির কেন্দ্রে এদের অবস্থান।
বাকি ১৪টি হাড়ের মধ্যে দুটি ন্যাজাল (নাকের হাড়), দুটি ম্যাক্সিলা (নাকের পাশের হাড়), দুটি প্যালাটাইল (তালুর হাড়), দুটি ল্যাকরিমাল (চোখের হাড়), দুটি জাইগোমেটিক (গালের ভেতরের হাড়), দুটি ন্যাজাল কঙ্কাল (নাকের ভেতরের হাড়), একটি ভোমার (নাকেরভেতরের পেছনের হাড়), একটি ম্যান্ডিবল (চোয়ালের হাড়) বিদ্যমান।
আমাদের দেহে স্কালের কাজ
* মস্তিষ্ক, মস্তিষ্কের শিরা-উপশিরা ও স্মায়ুকে রক্ষা করে।
* স্বাভাবিকভাবে বাচ্চা জ্নের সময় স্কালের সুচারগুলো ফাঁকা হয়ে যায়। একটি হাড়ের ওপর অপরটি উঠে যায়। ফলে মস্তিষ্কের আকৃতি তুলনামূলকভাবে ছোট্ট হয়ে আসে এবং বাচ্চার মাথা বের হতে সুবিধা হয়।
* সিজারিয়ান ডেলিভারিতে বাচ্চার মাথার সুচারের কোনো পরিবর্তন হয় না।
* স্কাল দেখে ফরেনসিক মেডিসিনে (মেডিকেলের তদন্ত বিভাগ) নারী, পুরুষ, শিশু চেনা যায়।
* স্কালের হাড়গুলো ভীষণ শক্ত। মানুষ মারা যাওয়ার পরও দীর্ঘ বছর পর্যন্ত মাটির তলে মাথার খুলি মোটামুটি অবিকৃত অবস্থায় পাওয়া পাওয়া যায়। স্কাল (মরা মানুষ বা কবর থেকে তুলে আনা) গবেষণা করে মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়।
স্কালের যত্নে সচেতনতা
* ভিটামিন-ডি হাড়ের জন্য যথেষ্ট উপকারী। ভিটামিন-ডি আর ক্যালসিয়ামের অভাব হলে হাড়ের সঠিক বর্ধন হয় না। তাই দেহে সঠিকভাবে রোদ লাগান (সহ্য করা যায় না এমন রোদে দাঁড়াবেন না), ভিটামিন-ডি ও ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খান। সামুদ্রিক মাছ, কড লিভার অয়েলে ভিটামিন-ডি রয়েছে।
* হাড়ের সঠিক বর্ধনের জন্য মাত্রাতিরিক্ত ক্যালসিয়াম খাবেন না। এতে হাইপারক্যালসেমিয়া (প্রয়োজনের তুলনায় দেহে ক্যালসিয়াম বৃদ্ধি পেলে এ অসুখ হয়) হয়ে যাবে।
* ২৫ বছর পর্যন্ত হাড়ের গঠন ও পূর্ণতা চলতেই থাকে। আর টিনএজারদের হাড় দ্রুত পরিবর্তন হয়। তাই বাচ্চাদের বাড়ন্ত বয়সে খাবার নিয়ন্ত্রণ করা অনুচিত (যেকোনো বয়সের জন্য ফাস্টফুড, তৈলাক্ত খাবারে সতর্কতা অবলম্বন করুন)।
ফারহানা মোবিন
সূত্রঃ প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ২০, ২০০৮।
Leave a Reply