দেখতে নাদুসনুদুস, এমন সন্তান চান অনেক মা-বাবা। বয়স অনুযায়ী শিশুর ওজন কত হবে, তার তালিকা আছে। তার মধ্য থেকে শিশু যদি বেড়ে ওঠে, তবেই সুস্বাস্থ্য বলা যাবে। অনেক মা-বাবার অভিযোগ, তাঁদের সন্তান দেখতে খুব শুকনো। কার্যত ওজনের তালিকায় দেখা যায়, সে ঠিকই আছে। শিশুর যদি কোনো রকম অসুখ না থাকে, তবে ওই শিশুই সঠিকভাবে বেড়ে উঠছে, তা নির্দ্বিধায় বলা যাবে। বাহ্যিকভাবে দেখতে ভালো লাগলেও কোনো শিশু যদি বয়স অনুযায়ী অতিরিক্ত ওজনের অধিকারী হয়, তবে সেটাও ‘পুষ্টিসমস্যা’ বলে চিহ্নিত হবে। স্থূলকায় শিশুর সংখ্যা গত চার দশকে প্রায় চার গুণ বেড়ে গেছে।
সুন্দর দেহ
শিশুকে ছোটকাল থেকে ‘হেলদি বডি ইমেজ’-এর ধারণা নিয়ে পরিচর্যা করতে হয়। সুঠাম শরীর তৈরিতে বুদ্ধির সঙ্গে শিশুর যত্ন করতে হয়। তার সঙ্গে যুক্ত আছে পরিমিত ও সুষম আহার বা খাবার জোগানো।
স্থূলকায় শিশুদের গত দশকে টাইপ-২ ডায়াবেটিস, মানসিক সমস্যা ও সামাজিক নানা ঝামেলা-ঝুঁকি প্রায় ১০ গুণ বাড়তি দেখা যাচ্ছে। শিশু নিজেকে নিজে দীনহীন মনে করে ও হতাশায় ডুবে থাকে।
৬০ শতাংশ ওবিস শিশুতে হূদযন্ত্র ও রক্ত সরবরাহতন্ত্রের ঝুঁকি নির্দিষ্ট হয়ে যায়।
শিশুকে বাজেভাবে খাওয়ানোর রুটিন শৈশবকালেই গড়ে ওঠে। যেমন ক্ষুধা না লাগলেও জোর করে খাওয়ানো কিংবা শুধু কঠিন শিডিউলে সুনির্দিষ্ট কিছু আইটেম নিয়ে খাদ্য তালিকা তৈরি। এতে শিশু ওজনজনিত সমস্যায় ভোগে, খাবার গ্রহণজনিত নানা উপসর্গ তার মধ্যে দেখা দেয়। এখানে বলে নেওয়া ভালো, শিশুর সুস্থ-সুন্দর শরীর গঠনে ও খাবার গ্রহণের সুন্দর মনোবৃত্তি গড়ে ওঠায় বাবার চেয়ে মায়ের ভূমিকাই প্রধান। সমীক্ষায় দেখা যায়, কোনো মা যখন নিজেই স্থূলকায় ওজনের শিকার হন, তখন তিনি তাঁর কন্যাসন্তানের ওপর শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ি আরোপ করেন বেশি।
খাবারে শিশুর পছন্দ-অপছন্দ
শিশুমাত্রই পছন্দের খাবার নিয়ে যাচাই-বাছাই করে। ইনফ্যান্ট বয়সী শিশু মিষ্টি ও নুন স্বাদের খাবারে বেশি আগ্রহী থাকে। আর তাদের অপছন্দ হলো তেতো ও অপরিচিত কোনো আইটেম। এসব অপছন্দের খাবার গ্রহণে শিশুর সঙ্গে যুদ্ধ বাধিয়ে দেওয়ার কোনো মানে নেই। বরং অন্য কোনো সময় অন্য কোনো পরিবেশে শিশুকে তা খাওয়ানোর প্রচেষ্টা নেওয়া যায়। এভাবে শিশুকে কোনো নতুন খাবার খাওয়ানোয় প্রায় ১০ বা ততোধিকবার চেষ্টা চালানো যেতে পারে।
রান্নাঘরে নিয়ে গিয়ে কীভাবে নতুন খাবার বানানো হচ্ছে, তা দেখতে দিয়ে শিশুকে ওই নতুন খাবারে আগ্রহী করে তোলা যায়। শিশু তা উপভোগ করে এবং অপরিচিত হলেও সে খাবার গ্রহণে উদ্দীপ্ত হয়।
মুটিয়ে যাওয়া প্রতিরোধে
শিশু স্থূলকায় না হওয়ার জন্য তার কায়িক শ্রম যথেষ্ট প্রতিরোধমূলক ভূমিকা পালন করে। এমনকি শিশু মুটিয়ে যাওয়ার জিনগত প্রবণতা থাকা সত্ত্বেও বিদ্যালয়ে যেসব শিশু ব্যায়াম করে, খেলাধুলা করে তাদের শরীর সুঠাম হয়, ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
যেসব শিশু টেলিভিশন দেখতে বা কম্পিউটারে গেম খেলে বেশি সময় কাটায়, তারা বেশি মুটিয়ে যায়। চার থেকে সাত বছরের শিশু, যাদের মা-বাবা বেশি কর্মঠ, তাঁদের শিশুরা বেশি কর্মচঞ্চল থাকে—এমনটা দেখা গেছে।
মা-বাবা ও অভিভাবকেরা শিশুর স্বাস্থ্যবান গড়নের শরীর তৈরিতে সুন্দর, স্বচ্ছ কল্পনাশক্তির উন্মেষ ঘটাতে পারেন।
মা-বাবাকে প্রথমে চিন্তা করে নিতে হবে, তাঁদের সন্তানের দৈহিক গঠনকে তাঁরা কীভাবে দেখছেন। এবং সে অনুযায়ী শিশুর খাবারদাবার, কায়িক পরিশ্রম, দৈনন্দিন আচার-আচরণের শিডিউল সুচারুভাবে নিয়ন্ত্রণের ভার গ্রহণ করা উচিত। তখন সন্তানের মুখপানে চেয়ে আওড়াতে পারবেন, ‘সুন্দর বটে তা অঙ্গদখানি।’
প্রণব কুমার চৌধুরী শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, সহকারী অধ্যাপক শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ০৭, ২০১০
Leave a Reply