অ্যাড্রেনাল গ্ল্যান্ড দুই কিডনির ওপরে অবস্থিত দুটি অংশ নিয়ে গঠিত, যার প্রতিটির কাজ ভিন্ন। বাইরের অংশ কর্টেক্স এবং ভেতরের অংশ মেডুলা। হরমোন তৈরি এই গ্রন্থির কাজ।
কর্টেক্স তিন প্রকার হরমোন বা অন্তরস তৈরি করে:
কর্টিসল (গ্লুকোকর্টিকয়েড)।
এলডোস্টেরন (মিনারালো কর্টিকয়েড)।
ডাইহাইড্রোএপিএনড্রোস্টেরন
মেডুলা তিন প্রকার হরমোন
তৈরি করে
এপিনেফ্রিন (অ্যাড্রেনালিন)।
নরএপিনেফ্রিন (নরড্রেনালিন)।
ডোপামিন।
অ্যাড্রেনাল টিউমার—যেগুলো অতিরিক্ত হরমোন তৈরি করে, তাদের কর্মক্ষম টিউমার বলে। যেসব অ্যাড্রেনাল টিউমার কোনো হরমোন তৈরি করে না, সেগুলোকে অকর্মক্ষম টিউমার বলে। অ্যাড্রেনাল ক্যানসারের চিকিৎসা নির্ভর করে এর বৈশিষ্ট্য ও অবস্থা অনুযায়ী। অধিকাংশ (৯৯ শতাংশ) অ্যাড্রেনাল টিউমার ক্যানসারের মতো নয় এবং যেগুলোকে সাধারণত অ্যাড্রেনাল কর্টিক্যাল এডেনোমা বলে, সেগুলোর ক্ষেত্রে কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। এগুলো আকারে ছোট এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় আকস্মিকভাবে শনাক্ত হয়। সচরাচর পাওয়া যায় এমন অ্যাড্রেনাল ক্যানসারকে অ্যাড্রেনো কর্টিক্যাল ক্যানসার বলা হয়। কর্মক্ষম অ্যাড্রেনাল কর্টিক্যাল কারসিনোমা অতিরিক্ত হরমোন তৈরির মাধ্যমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। অকর্মক্ষম টিউমার পেটের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ওপর চাপ প্রয়োগ করে ব্যথার অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে এবং এ ক্ষেত্রে হাত দিয়ে পেট পরীক্ষার সময় হাতের আঙুলে পিণ্ডটি অনুভব করা যেতে পারে।
লক্ষণ ও উপসর্গ: অ্যাড্রেনাল ক্যানসারে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। অকর্মক্ষম অ্যাড্রেনাল কারসিনোমা এবং বড় আকৃতির কর্মক্ষম টিউমার উভয় ক্ষেত্রেই নিচের বৈশিষ্ট্য ও লক্ষণগুলো দেখা যায়—
জ্বর।
হাতের আঙুল দিয়ে অনুভবযোগ্য পেটের ভেতরের পিণ্ড।
পেটে সার্বক্ষণিক ব্যথা।
পেট ভরা ভরা অনুভূতি।
ওজন হ্রাস।
এ ছাড়া কর্মক্ষম অ্যাড্রেনোকটিক্যাল ক্যানসারের বৈশিষ্ট্যগুলো কোন ধরনের হরমোন অতিরিক্ত নিঃসরণ করে, তার ওপর নির্ভর করে। অতিরিক্ত অ্যানড্রোজেনগুলো সাধারণত পুরুষদের কোনো সমস্যা তৈরি করে না। অতিরিক্ত অ্যানড্রোজেন কৈশোরকাল ত্বরান্বিত করতে পারে এবং মহিলা ও শিশুদের পুরুষালি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন করে তুলতে পারে (যেমন—মুখমণ্ডল ও শরীরে অস্বাভাবিক লোম গজানো, গাঢ় স্বর)।
রোগ নির্ণয়: অ্যাড্রেনাল ক্যানসার নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজন
রোগের ইতিহাস।
শারীরিক পরীক্ষা।
রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা।
আলট্রাসাউন্ড, সিটি স্ক্যান, এমআরআই, আণবিক পরীক্ষা ইত্যাদি।
আক্রান্ত কোষ কেটে পরীক্ষা করা।
আক্রান্ত কোষ পরীক্ষা
শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে আক্রান্ত টিস্যু বা কোষ সংগ্রহ করে অণুবীক্ষণ যন্ত্রে পরীক্ষা করা হয়। অ্যাড্রেনাল গ্রন্থিতে ক্যানসার কোষ আছে কি না, তা এ পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করা হয়। বায়োপসি করার সময় আলট্রাসাউন্ড বা সিটি স্ক্যানের সহায়তায় একটি সুঁই ঢুকিয়ে টিউমার থেকে কোষ রস অথবা বেশ কিছু পরিমাণ টিস্যু নেওয়া হয়। এরপর কোষগুলো অণুবীক্ষণ যন্ত্রে পরীক্ষা করে দেখা হয় এবং যদি ক্যানসারের কোষ পাওয়া যায়, তখন ক্যানসারের ধাপ বা পর্যায় নির্ধারণ করা হয়।
চিকিৎসা: চিকিৎসাপদ্ধতির মধ্যে রয়েছে শল্যচিকিৎসা, কেমোথেরাপি ও তেজষ্ক্রিয় বিকিরণ পদ্ধতি। কর্মক্ষম টিউমার-আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় সাধারণত ওষুধ ব্যবহার করা হয় এর উপসর্গ দূর করার জন্য।
শল্যচিকিৎসা: শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে অ্যাড্রেনাল গ্ল্যান্ড অপসারণই হচ্ছে মূলত এই ক্যানসারের একমাত্র নিরাময়যোগ্য চিকিৎসা। শল্যচিকিৎসার আগে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়েছে কি না, তা দেখা খুবই জরুরি।
কেমোথেরাপি
এ চিকিৎসায় ক্যানসার টিস্যু ধ্বংসকারী ওষুধ প্রয়োগ করা হয়, যা রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে।
অনেক সময় ক্যানসার সেল ধ্বংস করার জন্য কয়েকটি ওষুধ একসঙ্গে দেওয়া হয়। এটি ছড়িয়ে পড়া অ্যাড্রেনাল ক্যানসার এবং শল্যচিকিৎসার সহযোগীরূপে ব্যবহূত হয়। সেবনের মাধ্যমে অথবা শিরাপথে এ ওষুধগুলো ব্যবহূত হয়।
রেডিয়েশন চিকিৎসা
উচ্চশক্তিসম্পন্ন এক্স-রে ব্যবহারের মাধ্যমে ক্যানসারের কোষ ধ্বংসের চেষ্টা করা হয়। অনেক সময় ছড়িয়ে পড়া অ্যাড্রেনাল ক্যানসারের রোগীকে ব্যথানাশক চিকিৎসা হিসেবে রেডিয়েশন ব্যবহার করা হয়।
রোগের উন্নতি
অ্যাড্রেনাল ক্যানসারের উন্নতি নির্ভর করে রোগের ধাপ বা পর্যায়ের ওপর। অন্যত্র ছড়িয়ে পড়া টিউমারের উন্নতির আশা ক্ষীণ। ভালো শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে ক্যানসারের ক্ষেত্রে পাঁচ বছর পর্যন্ত বাঁচার হার আনুমানিক ৪০ শতাংশ।
উল্লেখ্য, আনুমানিক শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে চিকিৎসার ১০ বছর পরও পুনরায় এ রোগের আবির্ভাব ঘটার অশঙ্কা রয়েছে।
অ্যাড্রেনাল ক্যানসার প্রতিরোধযোগ্য নয়।
অধ্যাপক এম এ সালাম চেয়ারম্যান, ইউরোলজি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ০৭, ২০১০
Leave a Reply