ওষুধের কার্যকারিতা নির্ভর করে ওষুধের গঠনপ্রণালীর ওপর। কিছু ওষুধ এমনভাবে তৈরি করা হয়, যাতে বারবার ওষুধ খেতে না হয়। বারবার খাওয়ার অসুবিধা দূর করার জন্য কিছু ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল এমনভাবে তৈরি করা হয়, যাতে দিনে একবার খেলেও ওষুধের কার্যকারিতা বহাল থাকে। এসব ক্ষেত্রে সারা দিনের ওষুধ এক ট্যাবলেটের মধ্যেই দেওয়া থাকে এবং ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত তা কার্যকর থাকে।
এ ধরনের ট্যাবলেটকে সাসটেইন্ড রিলিজ ট্যাবলেট বলা হয়। এ রকম পদ্ধতিতে ইনজেকশন এমনভাবে তৈরি করা হয়, যাতে সাত দিন; প্রয়োজনবোধে এক মাস পর্যন্ত ওষুধের কার্যকারিতা বহাল থাকে। সাধারণভাবে ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল আকারে প্রায় ওষুধই দিনে দুই থেকে তিন-চারবার খেতে হয়। এ ক্ষেত্রে শিশু ও বয়স্কদের জন্য বেশ কিছুটা ঝামেলা পোহাতে হয়। সবচেয়ে অসুবিধা হয় অসুস্থ রোগীদের রাতে ঘুম থেকে ডেকে তুলে ওষুধ খাওয়াতে। তা ছাড়া ওষুধ সেবনের পালা যত কম হবে, তত ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে।
ক্যাপসুলে সাধারণত শক্ত এক আবরণের (জিলেটিন শেল, যা পানিতে দ্রবণীয় এক প্রকার আবরণ) ভেতর পাউডার আকারে ওষুধের উপাদান দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্যাপসুলের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য ওষুধের উপাদান পাউডারের পরিবর্তে ছোট ছোট দানায় পরিণত করে ক্যাপসুলে ভরা হয়। বাজারে কোনো কোনো ওষুধ ‘নরম ক্যাপসুল’ আকারে পাওয়া যায়। এসব ক্ষেত্রে তরল ওষুধ কিংবা শক্ত ওষুধকে কোনো দ্রাবকে দ্রবীভূত করে নরম জিলেটিনের ভেতর দেওয়া হয়। কড লিভার অয়েলের নরম ক্যাপসুল অনেকেরই পরিচিত।
অনেক ওষুধকে আবার ইমপ্লান্ট হিসেবে দেওয়া হয়। ইমপ্লান্ট হচ্ছে একটা শক্ত ক্যাপসুলের মতো, যা ত্বকের নিচে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে। জ্ননিয়ন্ত্রণের কিছু ওষুধ এ পদ্ধতিতে ছয় মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকে। বেশ কিছু ওষুধ পাকস্থলীর এসিডের কারণে সহজেই নষ্ট হয়ে যায় অথবা লিভারের মাধ্যমে খুব দ্রুত অপসারিত হয়ে যায়। এসব ক্ষেত্রে জিভের নিচে রেখে সেবন করতে বলা হয়। আস্তে আস্তে ওষুধটি গলে গিয়ে মুখের ঝিল্লির মাধ্যমে সরাসরি রক্তে মিশে যায়। এসব ক্ষেত্রে ওষুধ প্রস্তুত প্রণালীর কারণে মুখের ভেতর সমস্যা হতে পারে। কিছু কিছু অ্যান্টিবায়োটিক-জাতীয় ওষুধ আছে, যা পাকস্থলীর এসিডে নষ্ট হয়ে যায়। আবার কিছু ওষুধ পাকস্থলীর এসিডের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। এসব ক্ষেত্রে ট্যাবলেটর ওপরের অংশে এক বিশেষ ধরনের পলিমারের প্রলেপ দেওয়া হয়, যাতে পাকস্থলীর এসিডে গলে না যায়। এসব এন্টারিক কোটেড ট্যাবলেট এখন অত্যাধুনিক মেশিনে চমৎকারভাবে তৈরি হচ্ছে। এ কারণে মানসম্পন্ন ওষুধের জন্য সে রকম জুতসই যন্ত্রপাতি এবং কারিগরি দক্ষতা প্রয়োজন।
সাপোজিটরির মাধ্যমে সাধারণত ওষুধ পায়ুপথ দিয়ে ব্যবহার করা হয়। ভ্যাজাইনাল সাপোজিটরির ব্যবহারও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি প্রবেশ করানোর পর দেহের ভেতরের তাপমাত্রার কারণে এবং তরল পদার্থের সংস্পর্শে এসে গলে যায় এবং দ্রুত রক্তে মিশে কার্যকর হয়ে থাকে।
এ ধরনের ওষুধ সাধারণত এক ধরনের উদ্ভিজ্জ চর্বি দিয়ে তৈরি করা হয়। মূল ওষুধের সঙ্গে কী পরিমাণ চর্বি মেশানো হবে, তা অবশ্যই নিখুঁত হতে হবে। উপাদানের হেরফের হলে অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে। ক্রেতাকে তাই সজাগ থাকতে হবে; তাকে বুঝতে হবে-সব কোম্পানি তো আর এ-জাতীয় ওষুধ বানাতে পারবে না।
সূত্রঃ প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ২০, ২০০৮
সুভাষ সিংহ রায়
Leave a Reply