গ্রীষ্মকালীন সবজি ঢ্যাঁড়স। জনপ্রিয়তায় অন্যতম। নারীর সুডৌল আঙুলের মতো আকৃতি হওয়ায় ইংরেজ রসিকেরা এর নাম দেন ‘লেডিস ফিঙ্গার’।
ঢ্যাঁড়স সেদ্ধ ও ভাজি দুভাবেই খাওয়া যায়। তরকারি হিসেবে মাছেও ব্যবহার করা হয়। ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য কচি ঢ্যাঁড়স ভালোভাবে শুকিয়ে সংরক্ষণ করে রাখা যায়। ঢ্যাঁড়সে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, লোহা ও ভিটামিন এ, বি, সি।
ঢ্যাঁসড়ের পড বা ফলে রয়েছে ক্যারোটিন, ফলিক এসিড, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, অক্সালিক এসিড এবং অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিড। এর রিবোফ্লাভিনের পরিমাণ বেগুন, মুলা, টমেটো ও শিমের চেয়েও বেশি। প্রতি ১০০ গ্রাম ঢ্যাঁড়সে ৬৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১.৫ মিলিগ্রাম লোহা, ৫২ মিলিগ্রাম ক্যারোটিন, দশমিক শূন্য ৭ মিলিগ্রাম থায়ামিন, দশমিক ১ মিলিগ্রাম রিবোফ্লাভিন, দশমিক ৬ মিলি০গ্রাম নিয়াসিন ও ১৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন বিদ্যমান।
ঢ্যাঁড়সের পাকা শুকনা বীজে ভক্ষণযোগ্য তেল রয়েছে ১৬ থেকে ২২ ভাগ। ঔষধি গুণাবলিও রয়েছে ঢ্যাঁড়সের। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে দু-তিনটি ঢ্যাঁড়স ৪৫০ গ্রাম পানিতে এমনভাবে সেদ্ধ করতে হবে, যাতে সেদ্ধ পানির পরিমাণ দাঁড়ায় এক কাপ। তারপর পানি ছেঁকে ওই পানি পান করলে প্রস্রাব ও পায়খানা দুই-ই পরিষ্কার হবে।
ঢ্যাঁড়স প্রোস্টেট গ্লান্ডের ক্ষরণ দূর করতে সহায়তা করে। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করেও যখন প্রস্রাব কম হয়, তখন তিন-চারটি কাঁচা ঢ্যাঁড়স আধা লিটার পানিতে সেদ্ধ করে ওই পানি ২৫০ মিলিলিটারে নিয়ে আসতে হবে। সেদ্ধ পানি ছেঁকে পিচ্ছিল তরল পদার্থগুলো পান করলে প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়বে। কয়েক দিন এ রকম করে খেলে প্রোস্টেট গ্লান্ডের ক্ষরণের সমস্যা দূর হয়।
খুকখুকানি কাশি দমনের জন্য বীজ ফেলা কয়েকটি কাঁচা ঢ্যাঁড়স রোদে শুকিয়ে গুঁড়ো করে পাঁচ-ছয় গ্রাম নিয়ে চিনির কড়া রসে মুড়ি বানিয়ে চুষে খেলে উপকার পাওয়া যায়। ব্লাড সুগার কমাতেও ঢ্যাঁড়স ভূমিকা রাখে। রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়তে থাকলে কালো জামের বীজ চূর্ণ করে এক গ্রাম পরিমাণ চূর্ণের সঙ্গে তিন-চারটি কচি ঢ্যাঁড়স সেদ্ধ পানির সঙ্গে মিশিয়ে কয়েক দিন খেলে ব্লাড সুগার কমে যায়।
এ ছাড়া ঢ্যাঁড়সের তরকারি গলগণ্ড রোগ ও হূৎপিণ্ডের দুর্বলতা প্রতিরোধ করে।
সিদ্দিকুর রহমান শাহীন
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ৩০, ২০১০
Leave a Reply