ঠিকমতো চিকিৎসা নেওয়ার পরও যদি খিঁচুনি না কমে, তখন করণীয়:
ঠিকমতো ওষুধ খাচ্ছেন তো? ব্যবস্থাপত্রের সঙ্গে মিলিয়ে দেখুন। দুই বেলা খেতে হবে, নাকি তিন বেলা। ভুলবশত কোনো এক দিন বা এক-দুবেলা বাদ পড়ছে কি? একবেলা বা একদিন বাদ পড়লে রক্তে ওষুধের পরিমাণ বা মাত্রা কমে যায়, ফলে খিঁচুনি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
খিঁচুনির ওষুধের সঙ্গে অন্য কোনো ওষুধ খাচ্ছেন কি? তাহলে ওই ওষুধের কথা চিকিৎসককে বলুন। কারণ কিছু কিছু ওষুধ আছে যা খেলে খিঁচুনির ওষুধের মাত্রা/পরিমাণ রক্তে কমে যায়। আর রক্তে খিঁচুনির ওষুধের মাত্রা/পরিমাণ কমে গেলে খিঁচুনি হয়।
রোগীর ওজন বেড়ে গেছে কি? ওজন বাড়লে ওষুধের পরিমাণও বাড়বে। সুতরাং ওজনের দিকে খেয়াল রাখুন।
খালি বা ভরা পেটে খাচ্ছেন কি? খালি পেটে ওষুধ খেলে কোনো অসুবিধা নেই। কারণ কোনো খিঁচুনির ওষুধই এসিডিটি করায় না। বরং যাদের ওষুধ মুখে দিলেই বমি হয়, তাদের খালি পেটে খাওয়ালে বমির আশঙ্কা কম থাকে। ওষুধ খাওয়ানোর পরপরই যদি বমি হয়, তবে বমি করার আধা ঘণ্টা পর আবারও ওষুধ দিন।
ঠিকমতো ঘুম হচ্ছে কি? কিছু কিছু খিঁচুনি ঘুম কম হলে হয়। যেমন জুভিনাইল মাইওক্লোনিক এপিলেপ্সি। ছাত্ররা যখন রাত জেগে পড়ে বা আড্ডা দেয়, তখনই এই খিঁচুনি হয়। খিঁচুনি রোগীদের কাঁচা ঘুম ভাঙাতে নেই। পুরো ঘুম হলে তবে খিঁচুনি হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।
কোনো বদভ্যাস আছে কি? অর্থাৎ মদ, ড্রাগস বা নেশার বস্তু। এগুলোর ব্যবহারে খিঁচুনি বাড়ে।
অতিরিক্ত টিভি দেখলে বা কম্পিউটারে কাজ করলে খিঁচুনি বাড়ে। কিছু কিছু খিঁচুনি আছে যা কম্পিউটার বা টিভির লাইটে বা ঝিলমিল আলোতে বাড়ে।
খুব বেশি ইমোশনাল হলে, অর্থাৎ অতিরিক্ত রাগ/অভিমান বা চিৎকার করা বা টেনশন করা ইত্যাদিতেও খিঁচুনি বাড়ে।
খেয়াল করুন কোন খাবার খেলে বেশি খিঁচুনি হয় বা রোগী কোন খাবার খেতে চায় না বা রোগীর সহ্য হয় না। অনেক বাচ্চা আছে যে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ খেতে চায় না। এগুলো জোর করে খাওয়ালে বমি করে অথবা চলাফেরায় ভারসাম্য কমে যায়, তার হাত-পা বা শরীরের মধ্যে হালকা কাঁপুনি আসে। হাঁটতে বা জিনিস ধরতে পারে না।
খিঁচুনি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। একেক ধরনের খিঁচুনির একেক রকমের চিকিৎসা। সুতরাং সঠিক ওষুধ পড়ছে কি না, সেটা দেখা দরকার। সুতরাং এটা কোন ধরনের খিঁচুনি, সেটা প্রথমে দেখে তবেই ওষুধ দেওয়া হয়।
বিশেষ কিছু খিঁচুনিতে বিশেষ কিছু খিঁচুনির ওষুধ দিতে নেই। যেমন—এবসেন্স বা জেএমই খিঁচুনিতে কারবামাজিপাইন দেওয়া নিষেধ। দিলে আগুনে তেল ঢালা হবে। অর্থাৎ এদের এই ওষুধ ব্যবহার করলে খিঁচুনি কমার পরিবর্তে আরও বাড়বে। এদের যে ওষুধ দেওয়া দরকার, ওইগুলো দিলে আগুনে পানি ঢালা হবে। অর্থাৎ খিঁচুনি একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে।
সুতরাং খিঁচুনির ওষুধ খাবার পরও যদি খিঁচুনি না কমে তবে এগুলো চিন্তা করুন।
প্রয়োজন হলে ভালো ল্যাবরেটরি থেকে ইইজি করুন। ইইজি একটা ব্রেনের পরীক্ষা। বুকের ওপর যেমন তার লাগিয়ে ইসিজি করা হয়, তেমনি মাথার ওপর পেস্ট দিয়ে তার লাগিয়ে এই পরীক্ষা করা হয়। এই পরীক্ষা করতে বিশেষ কিছু প্রস্তুতি নিতে হয়। যেমন মাথায় তেল থাকবে না। পরীক্ষা চলাকালে একটু ঘুমাতে হবে। পরীক্ষা করতে আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা লাগে। এই ইইজি পরীক্ষা দ্বারা বোঝা যায়—ক. রোগীর সত্যিই কি খিঁচুনি আছে? খ. এবং এটা কোন ধরনের খিঁচুনি। কারণ একেক ধরনের খিঁচুনির একেক ধরনের ওষুধ লাগে।
সুতরাং হতাশ হবেন না। বর্তমানে খিঁচুনির অনেক আধুনিক চিকিৎসাও আছে।
সেলিনা ডেইজী
সহযোগী অধ্যাপক,
নিউরোলজি বিভাগ ঢাকা মেডিকেল কলেজ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ২৩, ২০১০
Leave a Reply