বাইরে প্রখর রোদ। আবার হঠাৎ ঝমঝম বৃষ্টি। রাস্তাঘাটে হাঁটাচলা করাই কঠিন। ভাপসা গরম। আবহাওয়ার এই বিপরীত আচরণে বড়দের অবস্থাই যেখানে শোচনীয়, সেখানে শিশুদের কথা একবার ভাবুন তো। ওদের কতটা কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে? তাই এ সময়ে নিতে হবে শিশুদের বিশেষ যত্ন। এ সময়ের মিশ্র আবহাওয়ায় শিশুরা কী ধরনের পোশাক পরবে, কোন খাবার খাবে। গরমে চুলের ছাঁটটাও তো কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। সন্তানকে নিয়ে এমন চিন্তায় অনেক অভিভাবকই পড়ছেন।
খাবার হবে ঘরে তৈরি
‘গরমের এই আবহাওয়ায় শিশুদের খাবারের দিকে প্রথমে খেয়াল রাখতে হবে। এ সময় ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা যায়। সে কারণে বাইরের ও বাসি খাবার খাওয়ানো উচিত নয়। ঘরে তৈরি হালকা ধরনের খাবার খাওয়াতে হবে। তেল-মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে যাওয়া ভালো। অনেক শিশুর পুষ্টিকর খাবার ও শাকসবজির প্রতি অনীহা থাকে। জোর না করে কৌশলে ওদের এসব খাবার খাওয়াতে হবে। এ সময় বাজারে নানা ধরনের গ্রীষ্মকালীন ফল পাওয়া যাচ্ছে।
বোতলজাত ফলের রস, কোমল পানীয় না কিনে বরং এসব ফলমূল শিশুকে খাওয়ান। ঘরে ফলের রস তৈরি করে দিতে পারেন। বেশি করে পানি বা পানীয় জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে। তবে কোনোভাবেই যেন ঠান্ডা লেগে না যায়। এতে শিশুর মাথাব্যথা বা সাইনোসাইটিসের সমস্যা হতে পারে।’ বললেন বারডেম হাসপাতালের শিশুরোগ বিভাগের প্রধান তাহমীনা বেগম। তিনি বলেন, সামান্য কাশি থাকলে মায়েরা গোসল করাতে চান না। কিন্তু প্রতিদিনই শিশুকে গোসল করানো উচিত। নবজাতক হলে ভেজা কাপড় দিয়ে শুকনো করে গা মুছে দিতে পারেন।
গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিশুবর্ধন ও পরিচর্যা বিভাগের অধ্যাপক মোরশেদা বেগম মনে করেন, এ সময় পানিতে নানা রোগজীবাণু থাকে। ফলে পানি ভালোভাবে ফুটিয়ে, সম্ভব হলে ফিল্টার করে পান করা উচিত। শিশুকে সরাসরি ফ্রিজের ঠান্ডা পানি খাওয়ানো উচিত নয়। ওরা খেতে চাইলে বুঝিয়ে বলা উচিত। স্বাভাবিক ও ঠান্ডা পানি মিশিয়ে খাওয়ানো উচিত।
পোশাকে আরাম
শুধু শিশুদের জন্য পোশাক তৈরি করে ‘শৈশব’। নবজাতক থেকে শুরু করে ১২ বছর বয়সী শিশুদের উপযোগী পোশাক এখানে পাওয়া যায়। শৈশবের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা ফারুক মনে করেন, পোশাক যা-ই হোক না কেন, তা যেন আরামদায়ক হয়। এ সময়ে শিশুদের অবশ্যই সুতি কাপড়ের পোশাক পরাতে হবে। নরম, পাতলা সুতি কাপড়ের পোশাকটি একটু ঢিলেঢালা হলে ভালো হয়। কেননা, শিশুরা ঘামে বেশি। ঢিলেঢালা পোশাকে বাতাস ঢুকতে পারে। এতে সহজেই ঘাম শুকিয়ে যায়। এ সময় পোশাকের রং বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও সচেতন হতে হবে। সাদা, হালকা গোলাপি, হালকা হলুদ, বেগুনি, সবুজ, গাঢ় নীল, লেবু রঙের পোশাকই বেশি স্বস্তিদায়ক। এ ছাড়া থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট পরালে আরাম পাবে।
শিশুদের পোশাকের ক্ষেত্রে ‘গার্লস ক্লোজেট’ নামটা নতুন। এখানে শুধু মেয়েশিশুদের পোশাক ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র পাওয়া যায়। ‘গরম মানেই হালকা রঙের নরম সুতি পোশাক। কিন্তু সব সময় শিশুরা হালকা রঙের পোশাক পরতে চায় না। তখন হালকা রঙের পাশাপাশি গাঢ় রঙের পোশাকও পরানো যেতে পারে। নতুনত্ব আনতে হালকা রঙের পোশাকের মধ্যে সামান্য হাতের কাজ করা যেতে পারে। এ সময় পোশাকটি হাতকাটা কিংবা ছোট হাতার হলে শিশুরা পরে আরাম পাবে।’ বললেন গার্লস ক্লোজেটের অন্যতম স্বত্বাধিকারী নাজনীন হাসান।
চুলের কাটছাঁট
‘গরমে শিশুর চুল ছোট রাখাই ভালো। এতে ঘামে ঠান্ডা লাগার ভয় থাকবে না। আর ঘাম হলে সঙ্গে সঙ্গে চুলটা মুছে দিতে হবে, যাতে করে ঠান্ডা লেগে না যায়। যেসব মেয়েশিশুর চুল বড়, তাদের বেণি করে দিতে হবে। চাইলে সামনের দিকে ব্যাঙস কেটে দিতে পারেন। ঝুঁটি বেঁধেও রাখতে পারেন। অবশ্যই বড় চুল বেঁধে রাখতে হবে। ছেলেশিশুদের জন্য ক্রুকাট, বাজকাট, স্পাইক কাট মানানসই। মেয়েশিশুরা ববকাট কাটতে পারে গরমে।’ বললেন হেয়ারোবিক্সের হেড অব অপারেশনস তানজিমা শারমিন। যেভাবেই চুলটা কাটান না কেন, তা যেন শিশুর জন্য আরামদায়ক হয়। এই গরমেও শিশু যেন প্রশান্তি খুঁজে পায়, সে দায়িত্ব আপনারই। সুস্থ শিশুর ঘরময় বিচরণ আপনাকে আনন্দ দেবে বৈকি।
মনে রাখবেন
শিশুকে সরাসরি ফ্যানের বাতাসের নিচে রাখবেন না। এতে ঠান্ডা লেগে যাবে। শিশুকে কখনোই খালি গায়ে শোয়াবেন না। পাতলা পোশাক পরিয়ে ঘুম পাড়ানো উচিত।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র চালালেও তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখা উচিত। তখন পাতলা কাঁথা বা চাদর গায়ে দিয়ে দেবেন।
খুব গরমে আইসক্রিম খেতে চাইলে তা এড়িয়ে যান। ওর পছন্দের অন্য কোনো জিনিস কিনে দিতে পারেন।
কিছুক্ষণ পরপর শরীর মুছে দিন, যাতে ঘামে ঠান্ডা না লাগে।
পোশাকও ঘেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বদলে দেবেন। রাতে ঘুম পাড়ানোর আগে ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছিয়ে পাউডার লাগিয়ে দিতে পারেন। এতে সে আরামে ঘুমাতে পারবে।
শিশুর পোশাকটি যেন ভালোভাবে শুকানো হয়। সামান্য ভেজা থাকলেও পরাবেন না। প্রয়োজনে ইস্তিরি করে নিতে পারেন।
গরমে প্রতিদিন গোসল করাতে ভুলবেন না। সামান্য কাশি হলেও করাবেন। সম্ভব হলে আদাপানি, তুলসীপানি খাওয়াতে পারেন।
গোসলের পর অবশ্যই চুলটা ভালোভাবে মুছে দিতে হবে। ঘেমে গেলেও ভালোভাবে চুলটা শুকনো করে মুছে দিন।
শিশুর চুল সপ্তাহে দুইবার শ্যাম্পু করে ধুয়ে দিন। এরপর শুকনো করে মুছে আঁচড়িয়ে দিন।
গরমে শিশুকে বাইরের খাবার, বিশেষ করে ফাস্টফুড-জাতীয় খাবার থেকে বিরত রাখুন।
ময়লা, ধুলাবালুময় জায়গায় শিশু যেন না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
তৌহিদা শিরোপা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ০৮, ২০১০
Leave a Reply